|
|
|
|
|
|
মিউচুয়াল ফান্ড |
 |
ট্রিগার টিপলেই লাভ
নিশানা স্থির রেখে ট্রিগারে নিখুঁত চাপ। বন্দুক চালানোর
বিদ্যে ফান্ডে লগ্নির কাজে লাগালে কী হয় দেখুন তো!
নীলাঞ্জন দে |
|
এমন একটা পরিস্থিতি কল্পনা করে দেখুন, যেখানে আপনি লগ্নি করার জন্য ঢুকলেন ফান্ডের দুনিয়ায়। যত দূর সম্ভব লাভ করলেন। যেই লোকসানের পালা এল, ফান্ড ভাঙিয়ে বেরিয়ে আসতে পারলেন অনায়াসে। বুঝতেই পারছেন, এমন একটা সুবিধা আপনার লগ্নিকে কতখানি নিরাপদ, নিশ্চিন্ত করে তুলতে পারে এক ধাক্কায়। ফান্ডকে নিরাপত্তা দেওয়ার এই কাজটা যে-করে, তার নাম ‘ট্রিগার’। চলুন ঝুঁকি এড়ানোর এই দুর্দান্ত কৌশলটাই জেনে নিই আমরা।
ট্রিগার কী?
• বলা যেতে পারে, ফান্ডে লোকসান না-করে বা কম করে মুনাফা পকেটে পোরার অন্যতম একটি পদ্ধতি।
• সে ক্ষেত্রে লগ্নি করতে ঢোকার সময়েই আপনাকে বেরোনোর দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দিতে হবে।
• সেটা আপনার ফান্ডের ন্যাভ, সূচক বা মুনাফা, যে কোনওটির নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছনো পর্যন্ত হতে পারে।
• সেই নির্ধারিত সময়ে দিন ট্রিগার।
• ফান্ড থেকে বেরোনোর জন্য আপনার বেঁধে দেওয়া সময় এলেই ট্রিগার সক্রিয় হবে এবং ফান্ড ভাঙানোর সঙ্কেত দেবে।
• আপনাকে কিছু করতে হবে না। ফান্ড আপনা-আপনি ভাঙানো হয়ে যাবে।
• রিটার্নের টাকা সরাসরি আপনার অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে যাবে।
• চাইলে এক ফান্ড থেকে অন্য ফান্ডে তহবিল স্থানান্তর করার জন্যও ট্রিগার দেওয়া যেতে পারে।
• তবে সব ফান্ডে এই সুবিধা নাও থাকতে পারে।
ধরা যাক...
একটি উদাহরণ দিলে সম্ভবত বিষয়টি আপনাদের কাছে আরও সহজ হবে। ধরা যাক, আপনি ফান্ড ‘X’-এ টাকা ঢেলেছেন। ফান্ডটি পুরোপুরি ইক্যুইটি নির্ভর হতে পারে বা তার তহবিলের একটা অংশ শেয়ার বাজারে খাটতে পারে। সে ক্ষেত্রে ফান্ডটির নেট অ্যাসেট ভ্যালু বা ন্যাভ (ফান্ডের সম্পদ বা মোট দাম থেকে তার দায় বা খরচের বিয়োগফল) স্বাভাবিক ভাবেই তার বেছে নেওয়া শেয়ার সূচকের ওঠা-নামার উপর নির্ভর করবে। অর্থাত্ বাজার উঠলে ন্যাভ বাড়বে। উল্টোটা হলে পড়বে। কাজেই বুদ্ধিমান লগ্নিকারী হলে উপরে ওঠার আনন্দের পাশাপাশি আপনি মনকে প্রস্তুত রাখবেন নীচে নামার ঝুঁকির জন্যও।
কিন্তু কেউই লোকসান করতে চায় না। এমনকী প্রত্যেকের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতাও সীমিত। আর এখানেই আপনার বল-ভরসা হতে পারে ট্রিগার। এই সুবিধা নিতে হলে, ফান্ডে লগ্নি করতে ঢোকার সময়েই একটা নিশানা স্থির করতে হবে। ধরুন, আপনি ঝুঁকি কমাতে ন্যাভ বা ফান্ড মূল্যের ২০% পতনে ট্রিগার দিলেন। অর্থাত্ আপনার ইঙ্গিত, ন্যাভ ২০% নামলেই আপনি ফান্ড থেকে বেরিয়ে যেতে চান। এ বার আপনি নিশ্চিন্তে বসে থাকতে পারেন। ন্যাভ যতখানি ওঠার উঠবে। আপনারও ফান্ডের তহবিল বাড়বে। তার পর তা আবার নামতেও পারে। কিন্তু তা ২০% পড়লেই ট্রিগার সক্রিয় হবে। এবং ফান্ড আপনা-আপনি ভেঙে গিয়ে রিটার্ন আপনার অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে। |
 |
রকমফের
একাধিক শর্তের ভিত্তিতে ট্রিগার স্থির করা সম্ভব। কোন মাপকাঠিতে আপনি মুনাফা করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইছেন, সেটাই এখানে আসল কথা। সেটা আবার নির্ভর করবে আপনার পছন্দ বা স্বাচ্ছন্দ্যের উপর। যেমন
ক) ন্যাভ ভিত্তিক
এ ক্ষেত্রে ট্রিগার দিতে পারবেন ন্যাভের ওঠা-নামার উপর। অর্থাত্ আপনি যদি ন্যাভের ৩০% উত্থানে ট্রিগার দেন, তবে তা ৩০ শতাংশে ওঠার পরই ট্রিগার কাজ করবে এবং আপনি ফান্ড থেকে বেরিয়ে আসবেন। কিংবা চাইলে আপনার তহবিল অন্য কোনও ফান্ডে স্থানান্তরিত হয়ে যাবে।
খ) ইনডেক্স ভিত্তিক
এখানে ট্রিগার দিতে হবে সেই স্তরে, যেখানে সূচক পৌঁছলেই আপনি ফান্ড থেকে বেরিয়ে আসতে চান বা তহবিল অন্য ফান্ডে স্থানান্তরিত করতে চান।
ধরুন, সেনসেক্স বেড়ে ২০ হাজারে পৌঁছলেই আপনি ফান্ড ভাঙিয়ে নিতে চান। কারণ তার পর বাজার আচমকা পড়ে গেলে আপনার মুনাফাও মুছে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ২০ হাজারে ট্রিগার দিন। ফলে এখানে লোকসানের সম্ভাবনা পুরোটাই এড়াতে পারবেন আপনি। আবার বর্তমানে সূচক যেখানে দাঁড়িয়ে, তার নীচেও ট্রিগার দেওয়া যায় লোকসান কমানোর জন্য।
গ) মূলধনী লাভ/ক্ষতি ভিত্তিক
লগ্নি করা তহবিল কতটা বাড়লে বা কমলে অর্থাত্ সেখান থেকে কতটা মুনাফা হলে আর তা ধরে রাখতে চান না, সেটা নির্দিষ্ট করে দিয়ে ট্রিগার ঠিক করার সুবিধা আছে এখানে।
ধাপে-ধাপে
ট্রিগার দেওয়া খুব জটিল কিছু নয়।
১) ন্যাভ, সূচক বা মূলধনী লাভ-লোকসানের মধ্যে যে কোনও শর্তের ভিত্তিতে একটি ‘ট্রিগার পয়েন্ট’ বাছুন।
২) সেই অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন হবে আপনার ফান্ডের ট্রিগার।
৩) ওই নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছলেই ফান্ড আপনা-আপনি ভাঙানো হয়ে যাবে এবং রিটার্নের টাকা সরাসরি জমা পড়বে আপনার অ্যাকাউন্টে।
স্বাবলম্বী হোন
ট্রিগার একজন লগ্নিকারীকে যথেষ্ট স্বাবলম্বী করে তুলতে পারে। তবে ট্রিগার দিতে গেলে বাজার সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকতেই হবে। বুঝতে হবে নিজে কী চান। দূরদর্শিতা যত বেশি হবে, ট্রিগার হবে তত অব্যর্থ।
যেমন, একজন লগ্নিকারী একটি ফান্ডে ১ লক্ষ টাকার তহবিল খাটাচ্ছেন। ফান্ডটির ন্যাভ ইউনিট পিছু ১০ টাকা। তাঁর আশা, বাজার মাঝারি মেয়াদে ১৫% মতো বাড়বে। তাই ফান্ড কিনতে ঢোকার সময়ে সেই আশায় ভর করেই ট্রিগার দিলেন তিনি। স্থির করলেন, ফান্ডের মূল্য ১,১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত উঠলেই সক্রিয় হবে ট্রিগার। এবং ফান্ড থেকে বেরোবেন তিনি।
ফান্ডের দুনিয়ার একটা প্রচলিত বিশ্বাস হল, যাঁরা নিজের ফান্ডের ওঠা-নামার খবর রাখেন না, ট্রিগার তাঁদের জন্য। কিন্তু আমি মনে করি, সতর্ক ভাবে ব্যবহার করতে পারলে এটা সব লগ্নিকারীরই উপকারে লাগবে। মনে রাখবেন, একটি ট্রিগার রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে আর বদলানো যায় না। তবে পুরনোটি বাতিল করে নয়া ট্রিগার দেওয়া যায়। সময় সময় লগ্নির লক্ষ্য বদলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন করে ট্রিগার দিতে থাকুন। লক্ষ্যভেদ করতে হলে ঠিক নিশানায় ট্রিগারটা টিপতে হবে আপনাকেই। দূরদর্শিতা, অভ্যেস, মনোযোগ এই তিনটেকে কাজে লাগিয়ে নিশানা স্থির করতে পারলে ট্রিগার ঠিক বাজি জিতিয়ে দেবে। |
মাথায় রাখুন |
• ট্রিগার ঠিক করা থাকলেও, তা বাস্তবায়িত হওয়ার আগে চাইলে ফান্ড ভাঙিয়ে তহবিল তুলে নেওয়া যায়।
• একবার ট্রিগার রেজিস্ট্রেশন হলে তা আর বদলানো না-ও যেতে পারে। তবে পুরনোটি বাতিল করে নতুন ট্রিগার রেজিস্ট্রার করা যায়।
• ফান্ডের ইউনিট বন্ধক রেখে ঋণ নিলে ট্রিগার কার্যকর হয় না।
• ফান্ডে যথেষ্ট পরিমাণ টাকা (সাফিশিয়েন্ট ব্যালান্স) না-থাকলে ট্রিগার কাজ করবে না। সব ফান্ডের সাফিশিয়েন্ট ব্যালান্স এক হয় না। তা নির্ভর করে ফান্ডের ধরনের উপর। এবং ওই পরিমাণ কত, সেটা বলতে পারে সংশ্লিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থা।
• তাই ট্রিগার স্থির করার আগে অবশ্যই জানুন, তা কার্যকর হওয়ার জন্য আপনার ফান্ডে কতটা সাফিশিয়েন্ট ব্যালান্স থাকতে হবে। |
সাফল্যের তিন মন্ত্র |
• নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা।
• যুক্তিসম্মত ও বাস্তবোচিত ট্রিগার দেওয়া।
• ‘ফান্ড ভাঙানোর টাকা নিয়ে আমি কী করব?’ নিজের কাছে এই প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব থাকা। |
|
লেখক উইশলিস্ট ক্যাপিটাল অ্যাডভাইজর্সের ডিরেক্টর
(মতামত ব্যক্তিগত) |
|
|
 |
|
|