|
|
|
|
সময়ে বৃষ্টি হয়নি, চাষের ক্ষতির আশঙ্কা
নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়ূরেশ্বর |
প্রয়োজনের সময়ে আশানুরূপ বৃষ্টি হয়নি। তাই কোথাও সেচের অভাবে শুকিয়ে গিয়েছে বীজতলা। ধান রোপণ করার জন্য তৈরি জমিও ফেটেফুটে একশেষ। এর ফলে জেলার অধিকাংশ জায়গায় অনাবাদী হয়ে পড়ে রয়েছে বিঘার পর বিঘা ধানজমি। ওই সব জমিতে ধান চাষের আর বিশেষ সম্ভাবনা নেই বলে আশঙ্কা কৃষি দফতরের আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে সমস্যায় পড়েছেন চাষিরা। তবে ধান চাষের ঘাটতি পূরণ করতে বিকল্প চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা কৃষি দফতর।
জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছর ৩ লক্ষ ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ১৫ অগস্ট পর্যন্ত ওই ধান চাষের ক্ষেত্রে উপযুক্ত সময় ধরা হয়। ওই সময়ের পরে ধান পোঁতা হলে উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অধিকাংশ বছরই অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে জেলায় ৭০ শতাংশ জমিতে ধান পোঁতার কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু এ বছর, ৮ অগস্ট পর্যন্ত মাত্র ২৭.৮ শতাংশ জমিতে ধান পোঁতার কাজ শেষ হয়েছে। পড়ে রয়েছে বিঘার পর বিঘা ফাঁকা জমি। সব থেকে বেশি অনাবাদী জমি রয়েছে খয়রাশোল, রাজনগর, দুবরাজপুর, মহম্মদবাজার এবং সিউড়ি ১ ব্লকে। কৃষি দফতরের হিসেবই বলছে, সব মিলিয়ে এ বছর শেষ পর্যন্ত মেরে-কেটে ৭০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ সম্ভব হতে পারে। তাও দেরিতে পোঁতার কারণে ৩০-৩৫ শতাংশ উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
প্রয়োজনীয় বৃষ্টির অভাবে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে কৃষিবিদদের অভিমত। জেলা আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য বছর জুন মাসের শুরু থেকে অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত জেলায় গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ থাকে ৬৩৫ মিলিমিটার। এ বছর সেখানে ওই সময় সময়সীমার মধ্যে বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৩৭৫.৩৪ মিলিমিটার। এই অবস্থায় জেলার চাষিরা পড়েছেন মহা বিপাকে। সেচের অভাবে কারও জমির বীজতলা শুকিয়ে গিয়েছে। আবার ধান পোঁতার জন্য তৈরি করে রাখা জমি অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। কার্যত পথে বসার সামিল হয়েছেন ওই সব চাষিরা। |
|
চাষের ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত। |
জেলা সহকারি কৃষি আধিকারিক (তথ্য) অমর মণ্ডল বলেন, “বৃষ্টির অভাব জনিত কারণে জেলায় এ বার ৩০ শতাংশ জমিতে ধান চাষ সম্ভব হবে না। দেরিতে পোঁতার কারণে ৩০-৩৫ শতাংশ উৎপাদন মার খাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”
বিঘা প্রতি ২ হাজার টাকা খরচ করে ধান পোঁতার জন্য ৮ বিঘা জমি তৈরি করে রেখেছিলেন দুবরাজপুরের লোবা গ্রামের ফেলারাম মণ্ডল। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে এক ‘গুছিও’ ধান পুঁততে পারেননি। সেই জমি এখন সেচের অভাবে শুকিয়ে কাঠ। আরও দুরবস্থা খয়রাশোলের পারশুণ্ডির বিজয় গড়াইয়ের। কুড়ি বিঘে জমির মালিক বিজয়বাবু ৫০০ টাকা হারে খরচ করে (প্রতি বিঘার জন্য) বীজতলা তৈরি করেছিলেন। বৃষ্টির অভাবে সেই বীজতলাও শুকিয়ে গিয়েছে। ফের বীজতলা তৈরি করেছেন তিনি। তবে লোকসানের আশঙ্কায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে ওই সব চাষিদের। তাঁদের কথায়, “এর পর ধান পোঁতা হলে ভাল ফলন মিলবে না, তা জানি। খরচ করে তৈরি করা জমি তো আর ফেলে রাখতে পারি না। তা ছাড়া, বর্ষার ধানের উপরে আমাদের সারা বছরের ভাত, কাপড় এবং পরবর্তী চাষের খরচের সংস্থান হয়। ঋণ মেটে ওই ধান বিক্রির টাকায়। এ বার কী হবে বুঝতে পারছি না!”
সিপিএমের জেলা কৃষক সভার সম্পাদক আনন্দ ভট্টাচার্য বলেন, “বৃষ্টির অভাব জনিত কারণে সময় মতো ধান পুঁততে না পেরে জেলার বহু চাষির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে ওই ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করে ক্ষতি পূরণের দাবি জানিয়েছি। সেচ খালে জলের ব্যবস্থা করা-সহ বিকল্প চাষেরও দাবি জানানো হয়েছে।” কৃষি আধিকারিক অমরবাবু বলেন, “আমরা ধান চাষের ঘাটতি মেটাতে তিল, কলাই, সর্ষে-সহ বিকল্প চাষের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সেচের ব্যবস্থা হলে বোরো চাষের উপরে জোর দেওয়া হবে। ক্ষতি পূরণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।” |
|
|
|
|
|