নতুন সেতু গড়ার আশ্বাস মিলেছিল দেড় বছর আগে। তবে তা স্রেফ আশ্বাসই রয়ে গিয়েছে। কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাই দুর্গাপুরে হাওড়া-দিল্লি রেললাইনের উপরে বেহাল পড়ে থাকা প্রায় অর্ধশতাব্দী প্রাচীন গ্যামন ব্রিজ আপাতত সংস্কার করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, দিন দিন যে ভাবে আরও খারাপ হচ্ছে এই সেতুর অবস্থা, তাতে অবিলম্বে সংস্কার না হলে বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আসল সেতুটি তৈরি হয়েছিল ব্রিটিশ আমলে। তখন শহরের জনসংখ্যা ছিল কম। যানবাহনও কম চলত। তাই সেতু ছিল এক লেনের। রেললাইনের দু’পাশের মধ্যে যোগাযোগ ও স্টেশনে যাওয়ার সুবিধা করার জন্য সেতুটি তৈরি করা হয়েছিল। পরে জনসংখ্যা ও যানবাহন চলাচল বাড়ায় ষাটের দশকে আসল সেতুর পাশে দু’লেনের সেতু তৈরি করা হয়। নির্মাণের দায়িত্বে ছিল গ্যামন সংস্থা। তাই সেতুটি গ্যামন ব্রিজ নামে পরিচিত হয়। গত কয়েক বছরে ভারী গাড়ি ও লরি চলাচল বেড়েছে অনেক গুণ। বেশি হয়েছে বাসের সংখ্যাও। কিন্তু সেতুর কোনও সংস্কার হয়নি। |
বাসিন্দাদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি সংস্কারের কোনও উদ্যোগ হয়নি। অথচ দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান রাস্তাতেই রয়েছে এই সেতু। এলাকাবাসী জানান, জায়গায় জায়গায় সেতুর রেলিং ভেঙে গিয়েছে। সেতুটির এক দিকে ফুটপাথ আছে। কিন্তু কংক্রিটের ঢাকনা উঠে বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি হয়েছে অনেক জায়গাতেই। নীচে ব্যস্ত রেললাইন। অত উঁচু থেকে এক বার পড়ে গেলেই বড় বিপদের সম্ভাবনা। সেতুর নীচের দিকের কংক্রিটের কাঠামোতেও ক্ষয় ধরেছে। ডিপিএল কলোনির বাসিন্দা অরূপ বিশ্বাস বলেন, “বৃষ্টি হলে আবার সেতুর উপরে জল জমে যায়। তখন শঙ্কা আরও বাড়ে।” বড়জোড়ার একটি কারখানার কর্মী অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “প্রায় দিনই আমি এই সেতু দিয়ে যাতায়াত করি। সেতুর দশা দেখে ভয় লাগে।”
আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদ (এডিডিএ) সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরনো সেতু সংস্কার না করে একেবারে অতিরিক্ত বহনক্ষমতা সম্পন্ন নতুন একটি সেতু গড়ার পরিকল্পনা হয়েছিল বছর তিনেক আগে। ২০১২ সালের জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক সেই প্রকল্পের ছাড়পত্র দেয়। মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়, জওহরলাল নেহরু আরবান রিনিউয়াল প্রকল্পে (জেএনএনইউআরএম) নতুন সেতু গড়া হবে। আশায় বুক বেঁধেছিলেন শহরবাসী। কিন্তু তার পরে কেটে গিয়েছে বছর দেড়েক। কিন্তু নতুন সেতু নির্মাণের কোনও উদ্যোগই চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ। এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তথা দুর্গাপুর (পূর্ব) কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন।
|