আড়াই বছরের মাথায় সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানি খাতুনের মৃত্যুর ঘটনার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হল। মঙ্গলবার বিএসএফের কোচবিহার সেক্টরের সোনারি ক্যাম্প চত্বরে ওই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিএসএফ সূত্রের খবর, একটি ভবনে বিশেষ আদালত কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। সেখানেই বিএসএফের ডিআইজি পদ পর্যাদার ৫ জন পদস্থ অফিসারকে নিয়ে গঠিত বিচারকদের বেঞ্চ অভিযুক্ত ও অভিযোগকারী পক্ষের বক্তব্য শুনবেন। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অভ্যন্তরে এই বিচার প্রক্রিয়া জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্ট বা জিএসএফসি নামে পরিচিত। বিএসএফের কোচবিহার সেক্টরের ডিআইজি দলবীর সিংহ সাঁধু বলেন, “ঘটনাটি নিয়ে জিএসএফসি এদিন কাজ শুরু করেছে। এর থেকে বেশি এখনই কিছু বলা যাবে না।”
বিএসএফ সূত্রেই জানা গিয়েছে, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত টানা বিচার প্রক্রিয়া জারি থাকবে। এদিন প্রথম দিন জিএফসিতে ওই মামলা সংক্রান্ত নথীপত্র খতিয়ে দেখার কাজ হয়েছে পর্যায়ক্রমে শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব হবে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি সপ্তাহে জিএসএফসিতে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে কোচবিহারে আসবেন মৃতার বাবা নজরুল ইসলাম নূর-সহ তাঁর আত্মীয়রা। ওই দেশের বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশের (বিজিবি) আধিকারিক ও সেখানকার আইনজীবীদের একটি দলও কোচবিহারে আসতে পারেন।
ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল কমিটির তরফেও বাংলাদেশ শাখার মাধ্যমে মৃতার পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। কমিটির সহকারি সম্পাদক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, ১৯ অগস্ট থেকে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হতে পারে। আগের দিন কোচবিহারে আসছেন মৃতার বাড়ির লোকজন। মানবাধিকার রক্ষার জন্য দুই দেশের সরকারের কাছেই আমরা আর্জি জানাচ্ছি।”
দিনহাটা সীমান্তের খিতাবের কুঠি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের কুড়িগ্রামের বাসিন্দা ফেলানি খাতুনের ১৫ মৃত্যু হয়। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি রাতে ঘটনার পরদিন সকালে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার গায়ে বাঁধা মইয়ের ওপরে ঝুলন্ত অবস্থায় ফেলানির রক্তাক্ত দেহ দেখতে পান বাসিন্দারা। বাংলাদেশের একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের তরফে হইচই শুরু হয়। বেআইনিভাবে সীমান্ত পারাপারে চেষ্টা করে থাকলে ওই কিশোরীকে গ্রেফতার না করে কেন গুলি চালান হল তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠে। পরিস্থিতির জেরে বিএসএফের তরফে বিভাগীয় তদন্ত করা হয়। তার পরে জিএসএফসি বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিএসএফের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, ঘটনার রাতে দিনহাটার চৌধুরীহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের খিতাবেরখুঠি সীমান্তে ঘন কুয়াশার সুযোগ নিয়ে সীমান্ত পারাপারে একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। কাঁটাতারের বেড়ার দুই পাশে বাঁশের মই বেঁধে ওই চক্রের লোকরা পারাপার চালাচ্ছিলেন। এক জওয়ানকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হলে তিনি আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালাতে বাধ্য হন। |