|
|
|
|
অভিমান ভুলে ফের তৃণমূলে ফিরতে চায় বিজয়ী নির্দলরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
মান-অভিমানের পালা শেষ। দলে ফিরতে চেয়ে এ বার ব্লক এবং জেলা নেতৃত্বের কাছে আবেদন করছেন জয়ী নির্দল প্রার্থীরা। এঁদের অধিকাংশই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক। কেশপুর, নারায়ণগড় থেকে খড়্গপুর সর্বত্র একই ছবি।
দলে ফিরতে চেয়ে ইতিমধ্যে জয়ী নির্দল প্রার্থীদের অনেকে যে আবেদন করেছেন, তা মানছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়। তাঁর কথায়, “দুষ্কৃতীদের বাদ দিয়ে, আমাদের দলের দরজা সকলের জন্যই খোলা। বহু বামপন্থী মানুষও তো নির্বাচনে আমাদের দলের প্রার্থীদের সমর্থন করেছেন।” তিনি মানছেন, “আবেদন আসছে। তবে দলে ফিরতে চাইলে ধৈর্য্য ধরতে হবে। একদিনে সব কিছু হবে না। রাজ্য এবং জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনার প্রেক্ষিতে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।”
কেশপুরে এ বার সব মিলিয়ে ৯ জন ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। তাঁরা দলের প্রতীক না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ান। এর মধ্যে গ্রাম পঞ্চায়েতে ৭ জন এবং পঞ্চায়েত সমিতিতে ২ জন। জানা গিয়েছে, এঁদের সকলেই এখন তৃণমূলে ফিরতে ইচ্ছুক। ইতি মধ্যে ব্লক নেতৃত্বকে নিজেদের ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন। তৃণমূলের কেশপুর ব্লক সভাপতি তপন চক্রবর্তী মানছেন, “৯ জন জয়ী নির্দল প্রার্থী দলে ফিরতে চেয়ে আবেদন করেছেন। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জেলা নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছি।” দলের নারায়ণগড় ব্লক সভাপতি মিহির চন্দের কথায়, “আমাদের এখানে ২ জন নির্দল প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। তাঁরা যদি দলে ফিরতে চেয়ে আবেদন করেন, নিশ্চিত ভাবেই তা খতিয়ে দেখা হবে।”
একা নন, একাংশ জয়ী নির্দল প্রার্থী তাঁদের অনুগামীদের নিয়েই দলের মূলস্রোতে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। যেমন, শেখ ইরশাদ আলি। বাড়ি কেশপুরের ছুতারগেড়্যায়। এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলে পরিচিত ইরশাদ পঞ্চায়েত সমিতির আসনে নির্দল প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। জয়ী হন। ওই আসনে আরও তিনজন প্রার্থী ছিলেন। একজন তৃণমূলের। অন্য দু’জন নির্দল। তাঁরাও এলাকায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিত। ইরশাদের কথায়, “লড়াইটা কঠিন ছিল। তা-ও ২৭২টি ভোটের ব্যবধানে জিতেছি।” কিন্তু এ বার? পঞ্চায়েত সমিতির নব নির্বাচিত ওই সদস্য বলছেন, “দীর্ঘ দিন ধরে যাঁরা সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, তাঁদের নিয়েই তৃণমূলে ফিরতে চাই। পুরনো কর্মীরা গুরুত্ব পেলে আমার দলে ফিরতে কোনও সমস্যা নেই।”
বস্তুত, শুরু থেকেই ‘বিক্ষুব্ধ’ প্রার্থীদের নিয়ে সুর নরম ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের। কারণ, পঞ্চায়েতের মনোনয়ন পর্বের পর দেখা যায়, বিভিন্ন ব্লকে দলীয় প্রার্থীদের কাঁটা হয়ে রয়েছেন ‘বিক্ষুব্ধ’ প্রার্থীরা। এই পরিস্থিতিতে ‘বিক্ষুব্ধ’ সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে নীচুতলায় সংগঠনের ভীত আলগা হবে বলেই মনে করেছিলেন দলের একাংশ। তা ছাড়া, প্রতীক না পেয়ে যাঁরা নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাঁদের একাংশের নিজ নিজ এলাকায় গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। পরিস্থিতি দেখে দলের অন্দরে দীনেনবাবু জানিয়েছিলেন, আমাদের বহু যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। কিন্তু, আসন নির্দিষ্ট। তাই সকলকে প্রতীক দেওয়া যায়নি। যাঁরা প্রতীক পাননি, তাঁদের কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। শুধু কি জেলা সভাপতি? মেদিনীপুরে এসে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীও জানান, যাঁরা প্রতীক পাননি, তাঁদের যথাযথ সম্মান-মর্যাদা দিতে হবে। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই বার্তা। যাঁরা প্রতীক পেয়েছেন, তাঁরা ব্যক্তিগত ভাবে ওঁদের (বিক্ষুব্ধ) কাছে পৌঁছবেন। বোঝানোর চেষ্টা করবেন। আলোচনার মাধ্যমে সার্বিক ভাবেই লড়াইয়ের জায়গা তৈরি করতে হবে।
পশ্চিম মেদিনীপুরে এ বার গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৭০টি আসনে নির্দল প্রার্থীরা জিতেছেন। পঞ্চায়েত সমিতিতে নির্দলরা জিতেছেন ৮টি আসনে। এঁদের অনেকেই এলাকায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিত। কিন্তু, নির্বাচনে দলের প্রতীক না পেয়ে নির্দল প্রার্থী হিসেবে ভোটে দাঁড়ান। পরিস্থিতি দেখে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বলছেন, “জয়ী নির্দল প্রার্থীরা সংখ্যায় খুব একটা বেশি নন। তবে, আমরা সকলকে নিয়ে চলতে চাই। সার্বিক ভাবে সমন্বয় রেখে চললে সংগঠনও শক্তিশালী হয়।” |
|
|
|
|
|