আগাছায় ভরে গিয়েছে মধ্যযুগের সুড়ঙ্গপথ। দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারের অম্বুজা এলাকার একটি সুড়ঙ্গপথ নিয়ে এমনই অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
২০০৭ সালের ২ অগস্ট একটি বাড়ির ভিত খোঁড়ার সময় দিনমজুরদের প্রথম নজরে আসে সুড়ঙ্গটি। সামনে গিয়ে তাঁরা দেখেন, সুড়ঙ্গের মুখটি রয়েছে মাটির নীচে ফুট খানেক গভীরে। লম্বায় প্রায় আড়াই ফুট এবং চওড়ায় দুই ফুট সুড়ঙ্গটি পাথরের খিলান দিয়ে সুড়ঙ্গটি উপর-নীচে বাঁধানো সুড়ঙ্গটি দেখে পুরাতত্ত্ব বিভাগে খবর দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁরা সুড়ঙ্গটির সংরক্ষণের দাবি জানান। সুড়ঙ্গটি সরেজমিনে দেখতে আসেন পুরাতত্ব বিভাগের কর্তারা। তাঁদের পরামর্শ মেনে সুড়ঙ্গটির সংস্কার কাজ শুরু করে দুর্গাপুর পুরসভা। ২০০৯ সালে স্বাধিনতা দিবসের সকালে সংস্কারের পরে সুড়ঙ্গটির উদ্বোধন করেন দুর্গাপুর তৎকালীন মেয়র রথীন রায়। কিন্তু কয়েক বছর যেতে না যেতেই ঐতিহাসিক স্থানটি নষ্ট হচ্ছে অবহেলায়।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরাতত্ত্ব বিভাগের কর্তারা সুড়ঙ্গটি দেখে যাওয়ার পর প্রাথমিকভাবে সুড়ঙ্গটি সর্ম্পকে উঠে আসে নানা মত। বেশ কিছু পরীক্ষার পরে রাজ্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের আধিকারিক প্রকাশ মাইতি তাঁর রিপোর্টে জানান, সুড়ঙ্গটি মধ্যযুগের। রাজ্যে এই ধরণের স্থাপত্য বেশ অমিল বলেও তাঁর রির্পোটে উল্লেখ করে তিনি জানান, সুড়ঙ্গের স্থাপত্যের মধ্যে রোমান শৈলীর মিশ্রন রয়েছে। |
এই সেই সুড়ঙ্গ। —নিজস্ব চিত্র। |
পুরাতত্ব বিভাগের পরামর্শ মেনে পুরসভা সুড়ঙ্গটিকে ‘সংরক্ষিত’ বলে ঘোষণা করে। পুরনো অংশ ও নতুন নির্মাণের মধ্যে যেন কোনও অসঙ্গতি না থাকে সে দিকে নজর রেখে যে অংশ অক্ষত ছিল তাকে ঠিক রেখে বাকি অংশে শুরু হয় সংস্কার। নতুন নির্মাণে ব্যবহার করা হয় ‘স্যান্ডস্টোন’, ইটের গুঁড়ো ও চুনের মিশ্রন। সুড়ঙ্গ চত্বর ঘিরে ফেলা হয় দেওয়াল ও লোহার রেলিং দিয়ে। করা হয় আলোর ব্যবস্থা। খরচ হয় প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা।
বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছে সুড়ঙ্গটি?
সন্ধ্যা নামের আগে সেখানে গিয়ে দেখা গেল সুড়ঙ্গের আশপাশ পুরো অন্ধকার। আসানসোলের বাসিন্দা নীতিশ বিশ্বাস তাঁর আত্মীয় সেল কো-অপারেটিভ এলাকার বাসিন্দা সুনীল কুমার তালুকদারকে নিয়ে এসেছিলেন সুড়ঙ্গ দেখতে। নীতিশবাবুর আপেক্ষ, “অনেক দিন ধরেই সুড়ঙ্গের কথা শুনে আসছি। তাই এসেছিলাম। কিন্তু এতো দেখি পুরো জঙ্গলে ভরে গিয়েছে! আলোও নেই। কাছে এসেও না দেখে ফিরে যেতে হচ্ছে।” স্থানীয় বাসিন্দা অভিষেক রায় বলেন, “সুড়ঙ্গটির সংরক্ষণের কাজ হয়েছিল ভালোভাবেই। কিন্তু পরে আর নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি।”
এলাকার ঐতিহাসিক স্থান অবহেলায় নষ্ট হতে বসলেও দুর্গাপুরের মেয়র অপূর্ব মুখোপাধ্যায় অবশ্য বিষয়টি জানেন না বলেই জানিয়েছেন। তবে তাঁর আশ্বাস, “দ্রুত খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
|