রোগীর সঙ্গে বিছানায় কে, এসএসকেএমে ‘ভ্রান্তিবিলাস’
ভীর রাতে এক রোগীকে ইঞ্জেকশন দেওয়ার কথা। নার্স এগোলেন নির্দিষ্ট শয্যার দিকে। শয্যায় তখন দু’জন অঘোরে ঘুমোচ্ছেন। একেবারে কোণ ঘেঁষে গুটিসুটি হয়ে এক জন, আর শয্যার বেশির ভাগটা জুড়ে বালিশে মাথা রেখে আর এক জন। নার্স দ্বিতীয় জনের হাতে ইঞ্জেকশনের সূচ বেঁধাতেই তারস্বরে চিৎকার জুড়লেন তিনি। “এ কী? আমাকে কেন? আমি তো পেশেন্ট নই!” নার্সও চেঁচাচ্ছেন “পেশেন্ট নন, তো খাটে শুয়ে রয়েছেন কেন? আর পেশেন্টকে তো ঠেলতে ঠেলতে খাট থেকে প্রায় ফেলেই দিয়েছেন! এখনই নামুন খাট থেকে।”
মাঝরাতে হঠাৎ এই গোলমালের চোটে এসএসকেএমের ইউরোলজি ওয়ার্ডে নীরবতা খান খান।
বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনা নয়। রোগীর নাড়ি টিপতে গিয়ে রোগীর পরিজনের কব্জি টিপে রয়েছেন চিকিৎসক, রোগীর বুকে স্টেথো না বসিয়ে তার বাড়ির লোকের বুকে স্টেথো বসানো হয়েছে। এমনকী, রোগীর পথ্য তুলে দেওয়া হয়েছে বাড়ির লোকের হাতে, রোগী তখন শৌচাগারে। শৌচাগার থেকে বেরিয়ে তিনি দেখেন খাবার সাবাড়!
অঙ্কন: সুমিত্র বসাক
“আমার খাবার কই?” বলে রোগী কাঁদতে শুরু করেছেন, আর বাড়ির লোক অনুতপ্ত মুখ করে বলেছেন, “আমি কী করে জানব? আমার হাতে ট্রে ধরিয়ে দিল, আমি ভাবলাম আমাকেও হয়তো খেতে দিচ্ছে এরা।” এমন ঘটনা প্রতিদিন এসএসকেএমের কোনও না কোনও ওয়ার্ডে ঘটছে। নেফ্রোলজি, মেডিসিন, অর্থোপেডিক, সার্জারি ইত্যাদি বিভাগ থেকে ইতিমধ্যেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসক-নার্সরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, চিকিৎসা মাথায় উঠেছে। এ ভাবে কাজ করাই দায়। রাতে বাড়ির লোকেরা খাটে শুয়ে থাকছেন, আর দিনের বেলা তাঁরা ওয়ার্ডের মেঝেতে বসে থাকছেন। রাউন্ড দেওয়ার সময়ে তাঁদের সঙ্গে ধাক্কা লাগছে।
সরকারি হাসপাতালে অ্যাটেন্ড্যান্ট প্রথা তুলে দেওয়া হয়েছিল বাম আমলে। পরিবর্তে স্থির হয়েছিল, হাসপাতালে রোগীর দেখভালের জন্য থাকবেন তাঁদের বাড়ির লোকেরাই। পরিকল্পনা হয়েছিল, হাসপাতাল চত্বরে থাকার জন্য রোগীর পরিজনদের লাল কার্ড এবং রোগীর শয্যার কাছে থাকার প্রয়োজন পড়লে সবুজ কার্ড দেওয়া হবে। বাস্তবে অবশ্য দেখা গিয়েছে, সমস্ত হাসপাতালেই রোগীর বাড়ির লোকেরা প্রয়োজন থাকুক বা না থাকুক, এক বা একাধিক গ্রিন কার্ড নিয়ে ঘুরেছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আবার অ্যাটেন্ড্যান্টরাই বাড়ির লোক সেজে ওয়ার্ডে থেকে নিজেদের পেশাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। একই সঙ্গে একাধিক রোগীর বাড়ির লোক সাজতে গিয়ে তাঁরা কোনও রোগীরই দেখভাল করতে পারেননি। কিন্তু এই সমস্যা সব চেয়ে প্রবল আকার নিয়েছে রাজ্যের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমে।
হাসপাতালের অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেছেন আরও একটি সমস্যার কথা। কী সেটা?
প্রদীপবাবুর কথায়, “ধরুন কোনও ওয়ার্ডে ৬০ জন রোগী। সেই হিসেব মাথায় রেখেই হয়তো শৌচাগারটি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দিনের পর দিন সেই শৌচাগারই ব্যবহার করছেন ৬০ জন রোগী এবং মাথা-পিছু এক জন করে ‘বাড়ির লোক’, অর্থাৎ ১২০ জন। ফলে নরক হয়ে উঠেছে শৌচাগার। ওই শৌচাগার থেকেই যে কত রোগীর দেহে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তার ইয়ত্তা নেই।” এই সমস্যার জেরে চিকিৎসকেরা রাউন্ডে যেতেও অস্বীকার করছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
প্রশ্ন হল, সমস্যার সমাধানে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? অধিকর্তা বলেন, “এর একটাই সমাধান। আর তা হল, কার্ড প্রথাটাই তুলে দেওয়া। শুধুমাত্র যে সমস্ত রোগীর অবস্থা খুব সঙ্কটজনক, তাঁদেরই বাড়ির লোকেরা থাকবেন। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকদেরও দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ, কার বাড়ির লোক কার্ড পাবেন, আর কার বাড়ির লোক পাবেন না, সেই সিদ্ধান্তটা নেবেন তাঁরাই।”
কিন্তু এর পরেও একটা অন্য প্রশ্ন থাকে, রোগীর বাড়ির লোক ওয়ার্ডে না থাকলে তাঁকে দেখভালের দায়িত্ব কে নেবেন? কারণ সরকারি হাসপাতালে এমনিতেই নার্সের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট কম। তার উপরে অধিকাংশ ওয়ার্ডেই অতিরিক্ত রোগীর ভিড়। প্রদীপবাবু এই প্রশ্নের উত্তরে নীরবই থেকেছেন। তবে, স্বাস্থ্যকর্তারাও মেনে নিয়েছেন, সমস্যার উৎস এটাই। নিয়োগ না বাড়লে এমন সমস্যা চলতেই থাকবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.