মহকুমা হাসপাতালকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করার ঘোষণা অনেক আগেই হয়েছে, কিন্তু পরিকাঠামো এখনও পিছিয়েই। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শয্যা সংখ্যা সবই অপ্রতুল। অথচ আসানসোল মহকুমা ছাড়াও আশপাশের জেলা এমনকী পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকেও অনেকসময়েই রোগীরা আসেন। দিন দিনে বাড়তে থাকা রোগীর চাপ ও চাহিদা সামলাতে হিমসিম দশা চিকিৎসক ও কর্মীদের। এই পরিস্থিতিতে আসানসোল মহকুমা হাসপাতালের সামগ্রিক চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নতি চেয়ে রাজ্য সরকারের কাছে তদ্বির করেছেন আসানসোলের সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকও। |
খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, হাসপাতালে যথেষ্ট চিকিৎসক নেই। একাধিক বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। আবার কয়েকটি বিভাগে চাহিদার তুলনায় অনেক কম বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আছেন। এই অবস্থায় রোগীদের চাপ সামলাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে চিকিৎসক নিয়োগ দরকার। হাসপাতাল সুপার নিখিলচন্দ্র দাস জানিয়েছেন, হাসপাতালের এখন একজনও চর্ম ও তন্ত্র রোগ বিশেষজ্ঞ নেই। অথচ এই বিভাগে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য দূরদুরান্ত থেকে রোগীরা আসেন এবং চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যান। তিনি আরও জানান, বর্তমানে একজন করে অস্থি ও চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ রয়েছেন, যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। শল্য চিকিৎসকের সংখ্যাও অত্যন্ত কম। রোগীদের চাপ সামাল দিতে এই মুহুর্তে আরও দু’জন শল্য চিকিৎসক দরকার বলে সুপার জানিয়েছেন। এছাড়া সুস্থ চিকিৎসা পরিষেবা দিতে হাসপাতালে অন্তত ছ’জন জেনারেল ডিউটি মেডিকেল অফিসার নিয়োগ করা দরকার। চিকিৎসকের অভাব এতটাই যে প্রতিদিন নিয়ম করে বর্হিবিভাগে পর্যাপ্ত চিকিৎসক বসানো যাচ্ছে না বলেও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। ফলে একদিকে, রোগীদের ভিড় সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। অন্যদিকে অনেক রোগী চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বিষয়টি জানতে পেরে রাজ্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন আসানসোলের সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী। তিনি বলেন, “শিল্পাঞ্চলের বসবাসকারী মানুষজন ন্যূনতম চিকিৎসা পরিষেবা পাওয়ার জন্য সরকারি হাসপাতালে দ্বারস্থ হচ্ছেন। কিন্তু চিকিৎসকের অভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরা।” হাসপাতাল সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, “আমরা সমস্যার কথা স্বাস্থ্য অধিকর্তাকে জানিয়েছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধও করেছি। দ্রুত সমাধানের আশ্বাসও মিলিছে।”
এই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা শুধুমাত্র মহকুমার সাড়ে এগারো লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। পাশের জেলা পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূমের সীমান্তবর্তী অঞ্চল থেকেও অনেকেই প্রতিনিয়ত চিকিৎসার জন্য আসেন। পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারাও প্রায়ই এখানে চিকিৎসা করাতে আসেন। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই এই হাসপাতালকে জেলা হাসপাতালে উন্নীত করার কথা ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু পরিকাঠামো উন্নতি হয়নি আজও। জেলা স্বাস্থ্য মুখ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) মণিকাঞ্চন সাহা জানান, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব স্বাস্থ্য অধিকর্তার নজরে আনা হয়েছে। শয্যা সংখ্যা বাড়ানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে। আগামী ছ’মাসের মধ্যে বেশিরভাগ সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা হবে বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, রোগীদের নানা সমস্যার কথা ভেবেই হাসপাতালে একটি রোগী সহায়তা কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। নির্মাণ সংক্রান্ত কাজ হয়েও গিয়েছে। একটি বেসরকারি সংস্থা দিয়ে কেন্দ্রটি চালানো হবে। দ্রুত নিয়োগ করা হবে ওই সংস্থাকে। |