সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা। শ্যামবাজার মেট্রো স্টেশনের টিকিট কাউন্টারে যাওয়ার মুখে সিঁড়ির সামনে পড়ে রয়েছে পরিত্যক্ত একটি ব্যাগ। খবর দেওয়া হল বম্ব স্কোয়াডে। প্রায় আধ ঘণ্টা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে অবশেষে বম্ব স্কোয়াড জানিয়ে দিল, ওই ব্যাগের ভিতরে কিছুই নেই। পরে জানা যায়, এক যুবক ফেলে গিয়েছিলেন ব্যাগটি। কিন্তু এর মধ্যেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মেট্রো চলাচল।
প্রতি দিন এই রকম নানা ঘটনায় নাজেহাল পুলিশ এবং মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। মেট্রোয় এখন দিনে গড়ে সাড়ে ৬ লক্ষ লোক যাতায়াত করেন। কিন্তু অত যাত্রীর উপরে মেট্রোর নজরদারি নেই বললেই চলে। সোমবারের ঘটনা তারই প্রমাণ। |
এতদিন না থাকলেও এ বার থেকে মেট্রোর ওই অরক্ষিত এলাকাগুলি স্বয়ংক্রিয় নজরদারি ক্যামেরার আওতায় আসবে বলে দাবি মেট্রো-কর্তৃপক্ষের। স্টেশনের প্রবেশপথ থেকে শুরু করে প্ল্যাটফর্ম, সর্বত্র ক্যামেরার নজরদারি থাকবে। এর আগেও মেট্রো স্টেশনে সিসি ক্যামেরা ছিল। তবে সব স্টেশন মিলিয়ে ছিল মাত্র ১০০টি। সব ক্যামেরাই ছিল অ্যানালগ পদ্ধতির। ফলে তার ছবিও স্পষ্ট ছিল না। এ বার নতুন করে বসানো হচ্ছে ডিজিটাল ক্যামেরা। মেট্রো সূত্রে খবর, নিরাপত্তা আঁটোসাঁটো করতে স্টেশনগুলিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ৬০০টি নাইট ভিশন ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্টেশনে ওই ক্যামেরা বসানোর কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। নজরদারির জন্য প্রতিটি স্টেশনে বসানো হচ্ছে ২৩ থেকে ৩৫টি ক্যামেরা।
কোথায় কোথায় লাগানো হবে ওই ক্যামেরা? মেট্রো সূত্রে খবর, প্রতিটি স্টেশনে ঢোকা ও বেরোনোর পথে যেমন থাকবে তেমনই সিঁড়ি থেকে শুরু করে যাত্রীদের যাতায়াতের পথেও রাখা হচ্ছে ওই ক্যামেরা। মেট্রোর এক আধিকারিক জানান, এতদিন মূলত মেট্রোর প্ল্যাটফর্মের দু’ধারে এবং টিকিট কাউন্টারের সামনে থাকত ক্যামেরা। তাঁর দাবি, এখন মেট্রোর সর্বত্রই থাকবে সিসিটিভির নজরদারি।
কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, প্রায় ৬০০টি ক্যামেরা নতুন করে লাগানো হলে প্রতিটি স্টেশনের কন্ট্রোল রুম থেকেই কোথায় কী হচ্ছে, তা সরাসরি দেখা যাবে। মেট্রোরেলের মুখপাত্র প্রত্যুষ ঘোষের দাবি, ওই ক্যামেরা লাগানোর ফলে মেট্রোর যাত্রীদের নিরাপত্তা যেমন বাড়বে তেমনই মেট্রোয় কোনও অপরাধ ঘটলে তার সমাধান করা সহজ হবে। পুলিশ-কর্তাদের মতে, প্রতি দিন কয়েক লক্ষ যাত্রী মেট্রো ব্যবহার করেন। পুজোর সময়ে এবং অনেক ছুটির দিনে তা দ্বিগুণ হয়ে যায়। পুলিশ জানায়, মেট্রোয় পুলিশ মোতায়েন থাকলেও এত সংখ্যক যাত্রীর নিরাপত্তার খেয়াল রাখা সব সময়ে সম্ভব হয়ে ওঠে না। পুলিশ-কর্তাদেরও দাবি, সিসিটিভির নজরদারির ফলে মেট্রোয় সব ধরনের অপরাধ ঠেকানো যাবে।
তবে ক্যামেরা লাগানো হলেই যে মেট্রোর নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে এমনটা মানতে নারাজ মেট্রোর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশেরই একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, গত বছর পুজোর আগে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে প্রতিটি স্টেশনে চালু করা হয়েছিল লাগেজ স্ক্যানার। কিন্তু বছর ঘোরার আগেই বেশ কয়েকটি যন্ত্র খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। পুলিশকর্মীদেরই বক্তব্য, মেট্রোর আনা এ সব বিদেশি জিনিস কত দিন ঠিক থাকবে, সেটাই দেখার।
|