দমদম থেকে কবি সুভাষ স্টেশন পর্যন্ত যাতায়াতের সময়ে মেট্রোযাত্রীদের যে সব অসুবিধায় পড়তে হয়, সেই ত্রুটি দূর করতে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণপর্ব থেকেই সতর্ক হচ্ছেন কর্তৃপক্ষ।
এখন মেট্রোয় শুধু প্ল্যাটফর্মে ভিডিও-নজরদারি আছে। কিন্তু নতুন ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় কামরার ভিতরের ছবিও ভিডিও-ট্রান্সমিশনের মাধ্যমে সল্টলেকে মেট্রোর ‘অপারেশনাল কন্ট্রোল সেন্টার’-এ যাবে। কলকাতা মেট্রোরেল কর্পোরেশনের এমডি সুব্রত গুপ্ত জানান, এতে কামরায় কেউ উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করলে, মহিলাদের বিরক্ত করলে বা পকেট কাটার চেষ্টা করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
নতুন মেট্রোয় সমস্ত ট্রেনের গতি ও সময়ের ব্যবধান অপারেশনাল কন্ট্রোল সেন্টার থেকে স্বয়ংক্রিয় ভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে। সুব্রতবাবু জানান, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রযুক্তিগত দিক থেকে এত উন্নত হবে যে, চাইলে চালক ছাড়াই ট্রেনগুলি চালানো যাবে। তবে, সব ট্রেনেই চালক থাকবেন। তাঁদের কাজ হবে মূলত যাত্রী ওঠানামায় নজর রাখা। এখনকার মেট্রোয় বেশির ভাগ ট্রেন ও প্ল্যাটফর্ম বাতানুকূল নয়। কিন্তু ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় সব ট্রেন ও স্টেশনই হবে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত।
ট্রেনের সামনে ঝাঁপ রুখতে সব স্টেশনেই ট্রেন না-আসা পর্যন্ত লাইন ও প্ল্যাটফর্মের মাঝের জায়গা অত্যাধুনিক দেওয়ালের মাধ্যমে আটকানো থাকবে। ট্রেন এলে প্রতিটি দরজার মাপমতো ‘দেওয়াল’ খুলে যাবে। ট্রেন ছাড়লেই তা বন্ধ হয়ে যাবে। ওই ‘দেওয়াল’ তৈরির জন্য ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো কর্তৃপক্ষ বাড়তি ৯০ কোটি টাকা খরচ করছেন। ওই সব ‘গেট’ বসানোর জন্য দরপত্র চাওয়া হয়েছে। আগ্রহী পাঁচটি সংস্থাকে প্রাথমিক ভাবে বাছাই করে আসল কাজের বরাত কে পাবে, ঠিক করার প্রক্রিয়া চলছে।
সুব্রতবাবু জানান, ১০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ৮৪টি বগি কিনতে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা মূলক টেন্ডার ডাকা হয়েছে। নতুন মেট্রোয় প্রথমে চলবে মোট ১৪টি ট্রেন। এক-একটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে বগি। বগি সরবরাহের জন্য মোট তিনটি দরপত্র জমা পড়েছে। তার মধ্যে একটি স্পেনের। দ্বিতীয়টি জাপানের দু’টি সংস্থার জোটের। তৃতীয়টি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের দুই সংস্থার জোটের। প্রযুক্তিগত ও আর্থিক দিকগুলি পরীক্ষা করে মে মাসের মধ্যে একটি সংস্থাকেই পুরো বরাত দেওয়া হবে। তার ১৫৫ সপ্তাহের মধ্যে বগি সরবরাহ শুরু হবে।
শুরুতে ৬টি ট্রেন নিয়ে সাড়ে তিন মিনিট অন্তর পরিষেবা চালু হবে। ট্রেনের সংখ্যা বাড়লে ব্যবধান আড়াই মিনিটে হবে। কলকাতার দ্বিতীয় মেট্রোর আপ-ডাউন শাখায় তিনটি করে লাইন পাতার জন্যও আন্তর্জাতিক দরপত্র চাওয়া হয়েছে। হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো চালু হওয়ার কথা ২০১৫-এর শেষে। হাওড়া স্টেশন, মহাকরণ, শিয়ালদহ স্টেশন, সল্টলেক স্টেডিয়াম ছুঁয়ে ১৪.৫৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই পথে থাকবে মোট ১২ টি স্টেশন। |