কারও শতবর্ষ মানেই তো শুধু তাঁর সম্পর্কে ভাল ভাল কথার চর্চা নয়! বরং, ভাল-মন্দের তথ্যসমৃদ্ধ ছবি তুলে ধরার এটাই হতে পারে উপলক্ষ। জ্যোতি বসুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনের সভায় গিয়ে এমন মতই দিলেন তৃণমূল সাংসদ কবীর সুমন। রাজনীতির গণ্ডির বাইরে বৃহত্তর বিদ্বজ্জন সমাজ তাঁর প্রস্তাব সমর্থনও করল।
প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জন্মশতবর্ষ বছরভর উদযাপনের জন্য বাম রাজনীতির সীমানা ছাড়িয়ে একটি বৃহত্তর কমিটি গড়ার কথা বলেছিল সিপিএম। সেই কমিটি গড়া উপলক্ষেই সোমবার সন্ধ্যায় বালিগঞ্জ শিক্ষা সদনের প্রেক্ষাগৃহে ডাক পড়েছিল সিপিএম এবং বামফ্রন্টের বাইরে নানা মুখের। তৃণমূলের ‘বিক্ষুব্ধ’ সাংসদ তথা গায়ক সুমন যেমন ছিলেন, তেমনই সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, অশোকনাথ বসুরা সাড়া দিয়েছিলেন। আবার লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় বা জ্যোতিবাবুর সরকারের প্রথম অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্রও বাদ যাননি। এই অবসরেই সুমন প্রস্তাব দিয়েছেন, ভাল-মন্দ মিশিয়ে বসু ঠিক কেমন ছিলেন, তার পক্ষপাতহীন ছবি পেশ করার জন্য নির্মিত হোক একটি তথ্যচিত্র। উদ্যোক্তারা প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন।
সুমন বলেছেন, “জ্যোতিবাবু বলতে যেমন মরিচঝাঁপি মনে পড়ে, তেমনই দেশপ্রেমিক জ্যোতিবাবুর কথাও মনে পড়ে।” আমেরিকায় প্রবাসীদের সম্মেলনে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবাবু কী ভাবে দেশের সমালোচনার প্রত্যুত্তর দিয়েছিলেন, আরও অনেক আগে তাঁর প্রথম জীবনে কলকাতায় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সভায় খদ্দরের পাঞ্জাবি পরিহিত বসু কী ভাবে পুলিশের মার খেয়েছিলেন সে সব কাহিনি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন যাদবপুরের সাংসদ। |
অনুষ্ঠানে সুমন অবশ্য তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসাবে ডাক পাননি। আমন্ত্রিত হয়েছিলেন ব্যক্তিগত স্তরে। বামফ্রন্টের বাইরে বামপন্থী দল হিসাবে অবশ্য পিডিএস, এসইউসি বা সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের আমন্ত্রণ ছিল।
বালিগঞ্জের সভা থেকেই এ দিন গড়ে উঠেছে রীতিমতো তারকাখচিত কমিটি! আলোচনা করে যাদের বসু শতবর্ষ উদযাপনের নানা পরিকল্পনা করার কথা। কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীতে নাম আছে অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন থেকে শুরু করে প্রাক্তন বিচারপতি শ্যামল সেন, চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায় প্রমুখের। কমিটির সভাপতি বসুর সহকর্মী তথা প্রবীণতম বাম নেতা অশোক ঘোষ। আবার সহ-সভাপতি হিসাবে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাশাপাশি আছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সম্পাদক বিমান বসু। সিপিএমের রাজ্য কমিটির বহু সদস্য এবং জেলা সম্পাদকেরাও কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছেন। কলেবর দেখে খোদ বিমানবাবুরই রসিকতা, “বুঝতেই পারছেন, এই কমিটির সভা করতেই একটা শহিদ মিনার ময়দান লাগবে!”
|