বাইপাস থেকে দশ মিনিটেই শিয়ালদহে পৌঁছনো যায় দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোড ধরে। মধ্য কলকাতার পামারবাজার এলাকার পাশ দিয়ে ওই রাস্তা গিয়ে মিশেছে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসে। পরিকল্পনা যথাযথ হলে সেটি শহরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা হয়ে উঠত। কিন্তু হয়নি। কারণ, রাস্তাটির বেহাল দশা। প্রায় সিংহভাগই খানাখন্দে ভরা। এখন ওই পথে শিয়ালদহে পৌঁছতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগে। অথচ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ওই রাস্তাটি শিয়ালদহ ও বাইপাসের মধ্যে কম দূরত্বের গুরুত্বপূর্ণ পথ হতে পারত।
শুধু দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোড নয়, পুজোর আগে শহরের বেশ কয়েকটি বড় রাস্তা নিয়ে চিন্তিত পূর্ত দফতর। ভাবনা বেড়েছে কলকাতা পুলিশেরও। যার সমাধানে আগামী ১৬ অগস্ট পুরসভা, কেএমডিএ, কেইআইপি, কেআইটি ও পূর্ত দফতরের অফিসারদের নিয়ে বৈঠক করবেন পুলিশ কমিশনার। বসে নেই পুর-প্রশাসনও। মেয়র পারিষদ (রাস্তা) সুশান্ত ঘোষ বলেন, “শহরের বেশ কিছু রাস্তা পুরসভার নয়। খুব শীঘ্রই রাস্তাগুলি সারানোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে।” |
পুরসভার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শহরে বড় রাস্তার পরিমাণ প্রায় দু’হাজার কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৮০০ কিলোমিটার কলকাতা পুরসভার। বাকি কেএমডিএ, কেআইটি, সেচ ও পূর্ত দফতরের আওতায়। আর অলিগলি মিলে সেই সংখ্যাটা কমবেশি ৪৪০০ কিলোমিটার। যা শহরের মোট আয়তনের ৬.৫০ থেকে ৬.৭৫ শতাংশ।
শহরের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ। আপাত দৃষ্টিতে খানাখন্দহীন বলে মনে হলেও ওই রাস্তার হালে খুশি নয় পুর-প্রশাসন। রাস্তা দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে গর্ত নেই ঠিকই। কিন্তু ওই রাস্তায় গাড়ি চললেই টের পাওয়া যায়, সেটি মসৃণ নয়। উপর-নীচ করতে থাকে গাড়ি।” পুর-প্রশাসনের কর্তাদের মতে, ওই রাস্তায় পিচ ফেলে নতুন করে করা উচিত। কিন্তু তা করতে গেলে ওই রাস্তা বেশ কিছু দিন বন্ধ রাখতে হবে। যা নিয়ে পুলিশের আপত্তি। |
|
|
দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোড |
ডায়মন্ড হারবার রোড, একবালপুর |
|
চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ওই হাল কেন, তা জানতে চাইলে পুরসভার এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, “মেট্রো রেলের কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ির পরে রাস্তাটি ঠিকঠাক সামগ্রী দিয়ে বানানো হয়নি। সমস্যা তখন থেকেই চলছে।”
উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার ডজনখানেক রাস্তা নিয়ে চিন্তিত পুর-কর্তারা। এর মধ্যে রয়েছে বেহালার ব্রাহ্মসমাজ রোড, হাওড়া সেতুতে ওঠার আগে ব্রেবোর্ন রোড, উত্তর কলকাতার রাজা মণীন্দ্র রোড, নর্দার্ন অ্যাভিনিউ, গড়ফা মেন রোড, জেমস লং সরণি, ডায়মন্ড হারবার রোড, রায়বাহাদুর রোড, সিজিআর ও হাইড রোড। হাল বিশেষ ভাল নয় হেস্টিংসের বেশ কিছু এলাকার রাস্তারও। যে কোনও সময়ে গাড়ির দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। হাল খারাপ একবালপুরের কাছে ট্রামলাইনের রাস্তারও।
খুবই খারাপ অবস্থা পোস্তার কাছে স্ট্র্যান্ড রোডের। ওই রাস্তায় মালবাহী লরির পাশাপাশি যাত্রিবাহী বাসও চলে। হাওড়া থেকে শ্যামবাজার, সল্টলেক বা পূর্ব কলকাতার কোনও এলাকায় কম সময়ে যাওয়ার জন্য অনেকেই ওই রাস্তা ব্যবহার করে থাকে। দেখা গেল, রাস্তার অধিকাংশ জায়গা খানাখন্দে ভরা। গাড়ির গতি বাড়ানো তো দূর, না দুলে এক ভাবে চলতেই পারছে না গাড়ি। এক বাসচালকের কথায়, “এ ভাবে চলায় গাড়ির বল বিয়ারিং ঠিক থাকে না। প্রায়শই বদলাতে হয়। পরিবহণ খরচ এ ভাবেই বাড়ছে।”
রাস্তাগুলির হাল এমন কেন?
সুশান্তবাবুর কথায়, “কিছু কিছু রাস্তার পাশে নিকাশি ব্যবস্থা ভাল না থাকায় জল জমে নষ্ট হচ্ছে।” কোথাও মেট্রোর কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়াখুড়ি হয়েছে। তাতেও সাময়িক ভাবে রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, পুজোর পরেই শহরের বেশ কয়েকটি রাস্তা পুরোদমে সারানো হবে। তার মধ্যে ই এম বাইপাস-রাসবিহারী অ্যাভিনিউ কানেক্টর, ই এম বাইপাস-প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড কানেক্টর এবং দেবেন্দ্রচন্দ্র দে রোড রয়েছে।
|