গঙ্গা এবং ফুলহারের বন্যায় বিপর্যস্ত মালদহ। মালদহের মানিকচক এলাকায় বিপদসীমার প্রায় ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে গঙ্গা। বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে টানা বৃষ্টি চলতে থাকায় মালদহের মানিকচকের ভুতনির কালুটোনটোলার একটি রিং বাঁধ জলে তলিয়ে গিয়েছে। রবিবার সকালে দ্বিতীয় রিংবাধ উপচে তৃতীয় রিং বাঁধে ধাক্কা মারছে গঙ্গা। এলাকার ১৫টি গ্রাম জলমগ্ন। রবিবার নতুন করে গদাইচরের এক হাজার পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়েছে। মানিকচকে বন্যা কবলিতের সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। উত্তরপ্রদেশে বৃষ্টি চলতে থাকায় গঙ্গার জল আরও বাড়বে বলে সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। অন্য দিকে, বিপদসীমার উপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে ফুলহার নদীও। হরিশ্চন্দ্রপুর ও রতুয়া ব্লকের ১৬টি গ্রামের ২৫ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা জলবন্দি বলে জানা গিয়েছে। |
রাস্তা প্লাবিত হয়ে মানিকচকের সঙ্গে ধরমপুরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় যায়। হীরানন্দপুরের, কালুটোনটোলা, রাজকুমারটোলার একাধিক বাঁশঝাড় গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে। কালুটোনটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ও বিপন্ন হয়ে পড়েছে। সে কারণে স্কুল ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার (গঙ্গা) অমরেশ সিংহ বলেন, “বিহারের ভাগলপুর এবং মুঙ্গেরে বৃষ্টির কারণে কয়েকদিন গঙ্গা জলস্তর বাড়ছিল। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে টানা বৃষ্টিপাতের জেরে গঙ্গার জল আরও বাড়বে। সেই সময় ভূতনির চরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বালির রিং বাঁধকে বাঁচানো সম্ভব হবে কিনা বলতে পারছি না। গঙ্গার জল
রুখতে চতুর্থ বালির বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। রাতে জেনারেটর চালিয়ে বাঁধের কাজ চলছে।” বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে শুরু হয়েছে ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভও। ভূতনি সহ মানিকচকের রবিদাসপাড়া, জোতপাট্টা, শিবেনটোলায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ পৌঁছোয়নি বলে অভিযোগ। জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমার বলেন, “মানিকচকে
বন্যা দুর্গতদের জন্য দু’হাজার ত্রিপল দেওয়া হয়েছে। আরো ত্রিপল এবং খাদ্যশস্য পাঠানো হচ্ছে। সর্বত্র ত্রাণ পৌঁছোনোর জন্য বিডিওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
জলবন্দি বাসিন্দাদের মধ্যে ত্রাণ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের নারী ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “সমস্ত বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিলি করার জন্য জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকার একজনও যাতে ত্রাণ থেকে বঞ্চিত না হয়, সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে।” যদিও ভূতনির জেলা পরিষদের তৃণমূল
সদস্য গৌড়চন্দ্র মণ্ডল বলেন, “হীরানন্দপুর, গদাইও দক্ষিণ চন্ডীপুরেই পাঁচ হাজার বেশি পরিবার বন্যার কবলে পড়েছ। এখনও পর্যন্ত কোনও ত্রাণ এসে পৌঁছোয়নি।” রবিবার সকাল থেকেই ফুলহারে অসংরক্ষিত এলাকায় লাল সর্তকতা জারি করা হয়েছে। মাসখানেক আগে হরিশ্চন্দ্রপুরে ফুলহার নদীর বাঁধ
ভেঙে পড়েছিল। জল বাড়তে শুরু করায় ফের বাঁধ বিপন্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জেলা সেচ দফতরের মহানন্দা বিভাগের
নির্বাহী বাস্তুকার সুজিত কুমার বসু বলেছেন, “পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে।” হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ও রতুয়া ১ ব্লকের অসংরক্ষিত এলাকার ১৬টি গ্রামের ২৫ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা জলবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে জানা গিয়েছে। উত্তর ভাকুরিয়া এলাকায় শনিবার রাতে নদী ভাঙনে ৭টি বাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। রতুয়া ১ নম্বর
ব্লকের রামায়নপুর, জাকিরটোলা, রুহিমারি, খাকসাবোনা সব ৮টি এলাকাও জলমগ্ন।
|