সদ্য শেষ হওয়া পঞ্চায়েত ভোটে বিপুল সাফল্যের পরে আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে নতুন উদ্যমে ঘর গোছাতে শুরু করেছে তৃণমূল। কংগ্রেস তো বটেই, বাম শরিক দল ছেড়েও অনেকে যোগ দিচ্ছেন তৃণমূলে। দলবদলের ফসল ঘরে তুলে কোচবিহার পুরসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাও পেয়ে
গিয়েছে তৃণমূল।
রবিবার তৃণমূল ভবনে এক অনুষ্ঠানে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন জেলা কংগ্রেস সভাপতি বীরেন কুণ্ডু-সহ ৭ জন কাউন্সিলর। এর ফলে কোচবিহার পুরসভায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাবে ক্ষমতা দখল করতে চলেছে তৃণমূল। ২০ আসনের ওই পুরসভায় ১ জন কংগ্রেস কাউন্সিলর মারা যাওয়ায় আসনটি খালি রয়েছে। বাকিগুলির মধ্যে ৩টি তৃণমূলের, ৭টি কংগ্রেসের এবং ৯টি বামেদের দখলে ছিল। কংগ্রেস এবং তৃণমূল জোট গড়ে পুরবোর্ড গড়েছিল। এ দিন অবশ্য সেই হিসেব পাল্টে গেল।
তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “সদলবলে বীরেনবাবু যোগ দেওয়ায় কোচবিহারে তৃণমূল আরও শক্তিশালী হল।” বীরেনবাবুই পুরপ্রধান থাকবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় জানান, বীরেনবাবুকে দলের জেলা ছাত্র ও যুব সংগঠনের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে বীরেনবাবুর প্রতিক্রিয়া, “কোচবিহারের উন্নয়নের স্বার্থেই তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।”
রবিবার তৃণমূল ভবনে কংগ্রেস ছেড়ে শাসক দলের ছাতার তলায় এসেছেন হাবরার কংগ্রেস নেতা তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ সাহাও। সামনের মাসেই হাবরায় পুরভোট। তার আগে নারায়ণবাবু দল ছেড়ে যাওয়ার ঘটনা নিঃসন্দেহে বড়সড় ধাক্কা জেলা কংগ্রেসের কাছে। পুরুলিয়ার অযোধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের ফরওয়ার্ড ব্লকের পাঁচ জন জয়ী প্রার্থীও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন বলে এ দিন জানান মুকলবাবু। ওই পঞ্চায়েতটি এ বার ফরওয়ার্ড ব্লকের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে কংগ্রেস।
অন্য দিকে, তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন নিহত গোর্খা লিগ নেতা
মদন তামাং-এর ছেলে সংযোগ। রবিবার সন্ধ্যায় শিলিগুড়ি লাগোয়া মেথিবাড়িতে তৃণমূল জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের উপস্থিতিতে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি
বলেন, “সংযোগ কোনও দিনই
গোর্খা লিগের সদস্য হননি। সক্রিয় রাজনীতিও করেননি।” সংযোগের প্রতিক্রিয়া, “পাহাড়ে গণতন্ত্র
ফেরাতে পারে তৃণমূল। বাবাও সেই চেষ্টা করেছিলেন।” কোচবিহারের ঘটনায় জেলা কংগ্রেস সভাপতিকে ফ্যাক্সবার্তায় দলছাড়ার কথা জানিয়েছেন বীরেনবাবুরা। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সমালোচনা করে বীরেনবাবু বলেন, “প্রদেশের অধিকাংশ নেতার নিজের বুথ থেকে জিতে আসার ক্ষমতা নেই। তার উপরে নানা পক্ষপাতিত্ব। তাই খারাপ লাগলেও কিছু করার ছিল না।” কোচবিহারের জেলা কংগ্রেস সভাপতি শ্যামল চৌধুরীর মোবাইল বন্ধ থাকায় এ দিন তাঁর প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
কোচবিহারের প্রাক্তন জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা এআইসিসি সদস্য সবিতা রায় বলেন, “যে দলের কাছ থেকে কাউন্সিলর এবং চেয়ারম্যান পদ ওরা পেয়েছেন, সেই মুকুট
খুলে যাওয়া উচিত ছিল। অর্থাৎ, সকলে পদত্যাগ করে গেলে ভাল হত।” রাকেশ চৌধুরী কোচবিহারের যুব কংগ্রেস সভাপতি। তাঁর কথায়, “কিছু স্বার্থান্বেষীকে নিয়ে উনি (বীরেন) দল ছাড়ায় আখেরে কংগ্রেসের ভালই হল।”
|