নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে ‘রাউন্ড ওয়ান’ পুরোদমে চলছে।
নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে ‘রাউন্ড টু’-ও শুরু হতে চলেছে!
জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির জমি (৫০ একর) নিয়ে পঞ্চাশ কোটি টাকার কেলঙ্কারিতে জড়িয়ে আরও বড়সড় ঝামেলায় পড়তে চলেছেন সরে দাঁড়ানো বোর্ড প্রেসিডেন্ট। বোর্ড কর্তাদের কেউ কেউ মনে করছেন, পরবর্তী ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে (দিন নির্ধারিত হয়নি) ঘোরতর সমস্যা ওঁত পেতে থাকবে জর্জরিত শ্রীনি-র জন্য।
চলতি সপ্তাহে এনসিএ-র বৈঠকেই ফাঁস হয় যে, কর্নাটকে অ্যাকাডেমির জন্য জমি কিনতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছে বোর্ড। দেখা যায়, বোর্ডের হয়ে কর্নাটক ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া ডেভলপমেন্ট বোর্ডের সঙ্গে চুক্তিপত্র সই করেছেন গুরুদত্ত শানবাগ নামের কেউ, যাঁর কিনা বোর্ডের সঙ্গে আদতে কোনও সম্পর্ক নেই। শনিবার যে অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছেন শানবাগ। স্পষ্ট জানিয়েছেন, তিনি নির্দোষ। অ্যাকাডেমির জমি কেনার সময় বোর্ডের তরফে তিনি কোনও রকম সইসাবুদ করেননি। পুরোটাই তাঁকে ফাঁসানোর চক্রান্ত। শানবাগের দাবি, তাঁর সই জাল করা হয়েছে!
যার পর পরই দেশের ক্রিকেটমহলে নতুন প্রশ্ন উঠে পড়েছে নতুন এই কেলেঙ্কারির আসল পাণ্ডা তা হলে কে? এবং সেখানেই নতুন করে জড়িয়ে পড়ছে শ্রীনিবাসনের নাম।
জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির জন্য এই জমি কেনা হয় ২০১০ সালে। শশাঙ্ক মনোহর জমানায়। সে সময় বোর্ডের সচিব ছিলেন শ্রীনিবাসন এবং কোষাধ্যক্ষ মোহিন্দর পান্ডব। বলা হচ্ছে, বোর্ডের টাকা-পয়সা সংক্রান্ত ব্যাপারে দায় থাকে দু’জনের। সচিব এবং কোষাধ্যক্ষ। কিন্তু কোষাধ্যক্ষের পক্ষে জমি কেনার জন্য কোনও ভাবেই পঞ্চাশ কোটি টাকা অনুমোদন করে দেওয়া সম্ভব নয়, যদি না সচিব সেটা অনুমোদন করেন। অভিযোগের নিশানা খুব পরিষ্কার পঞ্চাশ কোটি টাকা বোর্ডের তহবিল থেকে বেরোতেই পারত না, যদি না শ্রীনিবাসন সেটা চাইতেন!
পরবর্তী ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে যা নিয়ে ঝড় উঠতে পারে বলে মনে করছেন এনসিএ কমিটিতে থাকা কেউ কেউ। যাঁরা ইতিমধ্যেই কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চেয়ে ওয়ার্কিং কমিটিতে পাঠিয়েছেন। এবং শানবাগের সই জাল করার অভিযোগ বা বলে দেওয়া যে, “ওই পঞ্চাশ একর জমির মধ্যে দু’একর আমার ছিল। বোর্ড আমাকে অনুরোধ করেছিল যাতে পুরো জমিটা পাওয়া যায়,” এ সবকে বিশেষ পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না। বলা হচ্ছে, শানবাগ সত্যি না মিথ্যে বলছেন, সেটা পরের প্রশ্ন। শ্রীনিবাসনকে আগে চারটে প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
১) কীসের ভিত্তিতে পঞ্চাশ কোটি টাকা দেওয়া হল? শ্রীনি যখন তৎকালীন সচিব ছিলেন, তাঁর নিশ্চয়ই জানা উচিত বোর্ডের পক্ষ থেকে কে জমির কাগজে সই করবে।
২) পঞ্চাশ কোটি টাকা বোর্ডের তহবিল থেকে বেরোল কার অনুমোদনে?
৩) জমি সংক্রান্ত যাবতীয় কাগজপত্র সবই বোর্ড সচিবের অফিসে ঢুকেছে। তা হলে তখনই ‘ভেরিফিকেশন’ হল না কেন? তা হলেই বোঝা যেত গুরুদত্ত শানবাগ সই করেছেন কি করেননি?
৪) জমি ২০১০-এ পেয়ে তিন বছর কেন ফেলে রাখা হল? ওয়ার্কিং কমিটিকে কেন জানানো হয়নি বাস্তব পরিস্থিতি?
কিন্তু শ্রীনিবাসনকে পরবর্তী ওয়ার্কিং কমিটিতে পাওয়া যাবে, গ্যারান্টি কোথায়? শুনে এক বোর্ড কর্তা বললেন, “দু’টো ব্যাপার হতে পারে। যদি শ্রীনি আসেন, তা হলে সরাসরি জবাবদিহি করার সুযোগ পাবেন। নইলে বোর্ডের তরফ থেকে রেজোলিউশন পাঠিয়ে ওঁর কাছে জবাবদিহি চাওয়া হবে।” ইতিমধ্যেই বোর্ডের একাংশে অসন্তোষ জমা হয়েছে যে, এত বড় আর্থিক নয়-ছয় ঘটতে দেখেও বোর্ডের নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে থাকা। এই অংশের অভিমত, কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পরেই ব্যাপারটা পুলিশকে জানানো উচিত ছিল। কিন্তু সেটা এখনও হয়নি। |