জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি নামক টিনএজার এখন শ্রীনিবাসনের বোর্ডের নবতম সমস্যা। টিনএজ কারণ জাতীয় অ্যাকাডেমির বয়স এখন সাড়ে তেরো। আপাতত তাকে ঘিরেই এমন মহা বিতর্ক যে স্পট-ফিক্সিং কেলেঙ্কারি যদি বোর্ডের পক্ষে লজ্জাকর এক হয়, এটা একের খুব কাছাকাছি থাকা দুই।
বিতর্ক উঠেছে তারকা ক্রিকেটারদের নিয়ে। বিতর্ক এনসিএ প্রাক্তন ও বর্তমান পরিচালন মণ্ডলী নিয়েও। বিতর্ক আগেই ছিল জমি কিনতে গিয়ে ৫০ কোটি টাকা অপচয় সম্পর্কে। নবতম বিতর্কের কেন্দ্রে জড়িয়ে পড়েছেন দুই তারকা ক্রিকেটার যুবরাজ সিংহ এবং জাহির খান। এনসিএ-র হিসেব ঘাঁটতে গিয়ে বোর্ড কর্তাদের মনে হচ্ছে যে এই জুড়ি এনসিএকে তাঁদের গেস্টহাউস বানিয়ে ফেলেছেন। কারণে-অকারণে এনসিএতে চলে আসছেন। বরুণ অ্যারন আর এক জন। যিনি নাকি দেড় বছর ধরে এনসিএতেই কার্যত থাকেন আর সব রকম সুবিধে উপভোগ
|
প্রশ্ন পাটিলকে নিয়েও |
করেন। আরও তিন ক্রিকেটারের নাম উঠেছে। বদ্রিনাথ, ধবল কুলকার্নি ও অজিঙ্ক রাহানে। এঁরা জুন মাসে নানান সময়ে উপযুক্ত চিঠি না নিয়েই ক্যাম্পে চলে আসেন। মাসখানেক আগে বোর্ডের সভায় নতুন কোষাধ্যক্ষ রবি সবন্ত খুব উত্তেজিত ভাবে বলেছেন, “বোর্ড এদের আর খরচ দেবে না। এনসিএ-টা দাতব্য চিকিৎসালয় নয়।” এই সময় এনসিএ কমিটির চেয়ারম্যান রঞ্জীব বিসওয়াল বলেন, জাহির আর যুবরাজের ব্যাপারটা খুব তাজ্জব। এরা মোটামুটি একসঙ্গে আসে, একসঙ্গে আনফিট হয়, একসঙ্গে আবার ফিটও হয়ে যায়। রঞ্জীবের মুখে এই অভিযোগ শুনে অনেকেই অবাক হয়ে যান। যেহেতু ধোনির বিশ্বকাপজয়ী টিমের তিনিই ম্যানেজার ছিলেন এবং যুবরাজ-জাহিরের সঙ্গে খুব ভাল সম্পর্ক। এর পর আর এক সদস্য বলেন, শুধু দিনের পর দিন বেঙ্গালুরুতে সোশ্যাল লাইফ এনজয় করাই নয়, সারাক্ষণ এদের ব্যবহারের জন্য গাড়ি রাখতে হয়। কেউ কেউ আবার নিজেদের ইভেন্টগুলোও চিন্নাস্বামীর মাঠে করে। বোর্ডের নতুন গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার রত্নাকর শেঠি এই সময় বলেন যে, হিসেব ঘাঁটতে ঘাঁটতে তিনি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছেন, কত লক্ষ লক্ষ টাকা প্লেয়ারদের পেছনে অপচয় হচ্ছে। শুধু জাহির-যুবরাজরাই নয়। এখন একটা যেন ফ্যাশনই হয়ে গেছে যে, এনসিএ-তে যাও, ট্রেনিং করো আর বেঙ্গালুরু এনজয় করো। কোষাধ্যক্ষ রবি সবন্ত প্রস্তাব দেন, এখন থেকে বোর্ড বা আইপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির চিঠি যদি না আসে, একান্তই নিজে এলে পুরো খরচাই নিজেকে দিতে হবে। তা ছাড়া বোর্ড অনুমোদিত কোনও টুর্নামেন্টে চোট না পেলে বোর্ড তার রিহ্যাবের খরচ বহন করবে না। সে যত বড় তারকাই হোক না কেন। আপাতত এই নিয়মই চালু হয়ে যাচ্ছে। |
এ দিকে, প্লেয়ারমহলে তারকাদের সম্পর্কে অভিযোগ ছড়িয়ে পড়ায় একটা অংশ খুব উত্তেজিত। তারা মনে করে এই অবস্থার জন্য বোর্ড নিজেরাই দায়ী। আর আজকে প্লেয়ারদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। যুবরাজ বা জাহির কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা গেল না। কিন্তু নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ক্রিকেটীয় মুখ আনন্দবাজার-কে বলছেন যে, যুবরাজ-জাহিরের তো মুম্বইয়ে বাড়ি রয়েছে। ওদের শখ করে বেঙ্গালুরুতে যাওয়ার কি কোনও প্রয়োজন আছে? যুবরাজ তো বরঞ্চ সেরে ওঠার পর নিজের বইতেও এনসিএ এবং ট্রেনার আশিস কৌশিককে ঢালাও সার্টিফিকেট দিয়েছেন। জাহির সাক্ষাৎকারে বারবার এনসিএ-র প্রশংসা করেছেন। এগুলো তো বোর্ডের পক্ষে বিজ্ঞাপন হিসেবে যথেষ্ট লোভনীয়। তা-ও হঠাৎ প্লেয়ারদের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে কেন? এদের মতে আজকের কেলেঙ্কারির জন্য দায়ী বোর্ড। তারা তো নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম রাখেনি। নিজেদের ব্যর্থতায় প্লেয়ারদের অভিযুক্ত করছে।
অভিযোগ উঠেছে প্রাক্তন এনসিএ চেয়ারম্যান সন্দীপ পাটিলের বিরুদ্ধেও। বলা হচ্ছে সন্দীপের অনেক আগে কড়া হওয়া উচিত ছিল। তিনি শুধু ঢিলেঢালাই দেননি, অনেক বাড়তি খরচ প্রশ্রয় দিয়েছেন। জানা যাচ্ছে এনসিএ পরিচালন কমিটির কেউ কেউ আ্যকাডেমির কাজ দেখবেন বলে জানুয়ারি মাসে সস্ত্রীক কাশ্মীর ঘুরে এসেছেন। আর এক জন অস্ট্রেলিয়ায় দু’দিনের ক্রিকেট সেশনে যাওয়ার পর আব্দার করেন যে তাঁকে এবং বাকি সদস্যদের তিন দিনের বিনোদনের সবেতন ছুটি দিতে হবে। সেই মতো আট লাখ টাকা মঞ্জুরও হয়। রত্নাকর শেঠি আবিষ্কার করেন খরচ হয়েছে আরও চার লাখ টাকা বেশি। অর্থাৎ দু’দিনের ক্রিকেট কোর্সে গিয়ে তিন দিনের প্রমোদ রজনী। এ রকম খরচ আবিষ্কৃত হচ্ছে আরও। অভিযোগ উঠছে, প্রাক্তন বোর্ড সচিব সঞ্জয় জাগদালেই বা কেন ব্যবস্থা নেননি? এনসিএ-র কাজ কারবারের ওপর তো তাঁরও নিয়ন্ত্রণ ছিল। ক্রিকেটমহলে একজন জিজ্ঞেস করলেন, সন্দীপ পাটিলের কাছে কি জববাদিহি চাওয়া হতে পারে যে কেন তিনি কড়া হলেন না? এনসিএ কমিটির প্রভাবশালী সদস্য বলছেন, কোনও প্রশ্ন নেই। পাটিল এখন নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান হয়ে গেছেন। শ্রীনিবাসনের প্রিয় মানুষ। কে ওকে ঘাঁটাবে?
এত কাল এনসিএকে ধরা হত বোর্ডের সাদা হাতি। সেই হাতির নীচে যে এমন কেলেঙ্কারির অন্ধকারও লুকিয়ে ছিল, সেটা কে জানত? |