ইতিহাস গড়লেন। কিন্তু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের অসরে নিজের পদকটা ব্রোঞ্জ থেকে রুপো বা সোনায় বদলে ফেলতে পারলেন না পুসারলা বেঙ্কট সিন্ধু। পর পর চিনা তারকাদের পতন ঘটিয়ে বিশ্ব মঞ্চে আবির্ভাবেই সাড়া ফেলা ভারতীয় মেয়ে সেমিফাইনালে বিস্ময়কর আত্মসমর্পণ করে বসলেন চাপ আর প্রতিপক্ষের ধূর্ত রণকৌশলের সামনে।
ছত্রিশ মিনিটের যুদ্ধের শেষে দৃশ্যত বিপর্যস্ত সিন্ধু স্বীকার করে নেন তিনি হতাশ। তবে ভেঙে পড়ছেন না। বললেন, “এ ভাবে হারব ভাবিনি। তবে প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপেই ব্রোঞ্জ জেতা আমার কাছে বিরাট প্রাপ্তি। পরের বার আরও প্রস্তুতি নিয়ে শক্তিশালী হয়ে ফেরত আসব। যাতে আরও ভাল করতে পারি।”
হায়দরাবাদের অষ্টাদশী গতকাল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করে কিংবদন্তি প্রকাশ পাডুকোনের নজির স্পর্শ করেছিলেন। এ দিন বিশ্বের তিন নম্বর, তাই তারকা রাতচানক ইন্তাননের কাছে তাঁর ১০-২১, ১৩-২১, পরাজয়েও অদ্ভুত ভাবে জড়িয়ে থাকল প্রকাশের নামটা! বিশেষজ্ঞরা প্রায় একমত যে, এ দিন প্রকাশ ঘরানার ‘ডিসেপ্টিভ ব্যাডমিন্টন’-এই সিন্ধুকে বেকুব বানিয়ে গেলেন তাই অষ্টাদশী ইন্তানন। জাতীয় কোচ পুল্লেলা গোপীচন্দ যেমন ছাত্রীর হার প্রসঙ্গে বলেছেন, “রাতচানক দারুণ ধূর্ততার সঙ্গে শটগুলো মেশাচ্ছিল। ওর বৈচিত্রের সামনে আজ নিজের ছন্দটাই পায়নি সিন্ধু।” প্রাক্তন জাতীয় কোচ ইউ বিমল কুমার আরও সরাসরি ভাবে বললেন, “তাই মেয়েটাকে দেখে আজ বারবার প্রকাশের কথা মনে পড়ছিল। ঠিক এই রকম গতির হেরফের ঘটানো স্ট্রোক আর কৌশলী নেট প্লে-তে আচ্ছন্ন করে আশি আর নব্বইয়ের দশকে চিনাদের পাওয়ার গেমকে বশে আনত প্রকাশ।” |
স্বপ্নভঙ্গ
বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ সেমিফাইনালে হারের পর কোচ
গোপীচন্দের সঙ্গে সিন্ধু। শনিবার গুয়াংঝৌয়ে। ছবি: এএফপি |
অভ্যস্ত ছন্দটা না পাওয়াতেই পাঁচ ফুট এগারো ইঞ্চির সিন্ধু নিজের থেকে উচ্চতায় চার ইঞ্চি খাটো ইন্তাননের সঙ্গে নেটের যুদ্ধেও টক্কর দিতে পারলেন না। উল্টে একগাদা আনফোর্সড এরর এল তাঁর র্যাকেট থেকে। ভলিবলে অর্জুন বিজয়ী সিন্ধুর বাবা পি ভি রামানা যেমন বলেছেন, “রাতচানকের স্ট্রোকগুলো ও সামলাতেই পারেনি। বড় স্টেডিয়াম বলে একটা হাওয়ার চাপ ছিল। কিন্তু এই পর্যায়ে সেটা সামলাতে জানতে হবে।” সিন্ধুর মা বাস্কেটবল তারকা পি বিজয়াও বলেছেন, “ও নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলতে পারল না। তবে আশা করি এই অভিজ্ঞতাটা থেকে শিখে আগামী দিনে আরও ভাল করবে।”
সিন্ধু নিজে কোনও অজুহাত দিতে নারাজ। বলেছেন, “হাওয়া তো সবাইকে সামলাতে হয়েছে। আসলে আজ আমি একগাদা ভুল করেছি।” প্রাক্তন আন্তর্জাতিক তারকা উদয় পওয়ারও বলছেন, সিন্ধুর ট্যাকটিসে গলদ ছিল। “সিন্ধু দ্রুতগতির প্লেয়ারদের বিরুদ্ধে ভাল। কিন্তু ইন্তাননের মতো যারা শাটলের গতির হেরফের ঘটায়, তাদের বিরুদ্ধে স্বচ্ছন্দ নয়।” আর বিমল কুমারের বক্তব্য, “চিনাদের আক্রমণাত্মক খেলাটা ও ভাল ধরতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যতে রাতচানকের সঙ্গে পাল্লা দিতে হলে তাই মেয়ের ধূর্ত ব্যাডমিন্টনের পাল্টা দেওয়া শিখতে হবে। সিন্ধু অসাধারণ প্রতিভা। কিন্তু সাইনার সঙ্গে তুলনার আগে সিন্ধুকে নিজের খেলায় আরও বৈচিত্র নিয়ে আসতে হবে। আর চার-পাঁচ বছর ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে।”
সামনেই ইন্ডিয়ান ব্যাডমিন্টন লিগ-সহ বেশ কয়েকটা টুর্নামেন্ট। গুয়াংঝৌয়ের স্টেডিয়াম থেকেই সিন্ধু তাকাচ্ছেন সে দিকে। বলেছেন, “এই টুর্নামেন্টগুলোয় আরও ভাল করতে হবে। তাই সবার আগে দেশে ফিরেই ট্রেনিং করতে চাই। নিজের দুর্বলতাগুলো নিয়ে খাটতে হবে।”
ব্রোঞ্জ নিশ্চিত হওয়ার পর প্রত্যাশার চাপটা কি বেড়ে গিয়েছিল? সিন্ধু বলেছেন, “চাপটা কোনও ব্যাপার নয়। আমি তো প্রত্যাশাকেও ছাপিয়ে যেতে চাই!” |
|
...অভিনন্দন সিন্ধু। আমরা তোমাকে নিয়ে গর্বিত। মিস্টার পাডুকোন করে দেখিয়েছিলেন আর এখন তুমি। ওয়ে টু গো... চালিয়ে যাও।
টুইটারে শাহরুখ খান |
দুর্ভাগ্য সিন্ধু... তবে যা-ই হয়ে থাক তুমি এখনও আমাদের রক স্টার... ব্রোঞ্জটার জন্য অভিনন্দন... মুয়াহ্!
টুইটারে জ্বালা গাট্টা |
|