উত্তরবঙ্গ থেকে নেপালে গিয়ে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-কে সেনাবাহিনীর গোপন তথ্য পাচার করার দায়ে তিন মাস আগেই ধরা পড়েছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার এক নেতা। সেনাবাহিনীর মধ্যে কারা তাঁকে এ কাজে সাহায্য করত, এ বার তা খুঁজে বের করতে উঠে পড়ে লেগেছেন পুলিশ ও গোয়েন্দারা।
মে মাসে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন মোর্চার কার্শিয়াং জোনাল কমিটির সদস্য মেসা ওরফে মনোজ সাউরি। তাঁকে জেরা করে অসিত সরকার নামে এক সেনাকর্মীর নাম পুলিশ জেনেছে। তাকে এখনও ধরা যায়নি। বিমল তামাং নামে মোর্চার যে আর এক নেতা মেসাকে ওই চরবৃত্তির কাজে নামিয়েছিল, সে-ও বেপাত্তা। তদন্তকারীদের ধারণা, আরও কয়েক জন সেনা অফিসার এই চক্রে জড়িত।
পুলিশ জানিয়েছে, মেসা ও তার শাগরেদরা ২০০৮ থেকে ২০১২ পর্যন্ত বার দশেক নেপালে গিয়ে আইএসআই-এর লোকেদের হাতে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন সেনাশিবির ও বায়ুসেনাঘাঁটির বিস্তারিত বর্ণনা, যুদ্ধবিমান-অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদের ধরন ও পরিমাণ, ঘাঁটিগুলিতে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা কী রকম এই সমস্ত বিষয়ে ক্রমাগত নথিপত্র জুগিয়েছেন। বিনিময়ে মেসা ও তাঁর সঙ্গীদের নগদ প্রায় দু’লক্ষ টাকা আইএসআই দিয়েছিল বলে পুলিশ জেনেছে। মেসা গ্রেফতার হওয়ার পরই মোর্চার শীর্ষ নেতৃত্ব তড়িঘড়ি তাঁকে বহিষ্কার করে মুখ বাঁচায়।
রাজ্য গোয়েন্দা শাখার (আইবি) এক কর্তার কথায়, “পাহাড়ের অবস্থা এখন উদ্বেগজনক। এই প্রেক্ষাপটে এক মোর্চা নেতা কী ধরনের সেনা-তথ্য চার বছর ধরে আইএসআই-এর হাতে পৌঁছে দিয়েছে, তা জানাটা জরুরি। মেসাকে ওই কাজে নিযুক্ত করেছিল বিমল তামাং নামে আর এক মোর্চা নেতা।
আবার ওই কাজে নেমেই মেসা প্রথম যোগাযোগ করে ব্যাংডুবির এক সেনাকর্মী অসিত সরকারের সঙ্গে। কিন্তু দু’জনেরই এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।” গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বিমল এখন চেন্নাইয়ে থাকে বলে মেসা পুলিশকে জানিয়েছিল। কিন্তু কার্শিয়াং থেকে পুলিশের একটি দল সেখানে গিয়ে বিমলকে পায়নি। আর অসিতের খোঁজে শিলিগুড়ির বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালানো হলেও তারও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মেসাকে গ্রেফতার করার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশ সুকনা সেনাঘাঁটির এক প্রাক্তন গাড়ি-চালক মগনবাহাদুর সিংহ ও সাফাইকর্মী মহম্মদ আজাদকে গ্রেফতার করে। কিন্তু দার্জিলিং জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “এদের পক্ষে নথিপত্র হাতানোটা অসম্ভব নয়। কিন্তু আইএসআইয়ের জন্য কোন নথি জোগাড় করতে হবে, সেটা বোঝা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। সেনাঘাঁটিতে উঁচু পদে থাকা লোকেরাই এ কাজ করতে পারেন। তাদেরই আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।”
|