আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের শূন্য ব্লাড ব্যাঙ্কটি সামাল দিতে বৃহষ্পতিবার হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী এবং ঠিকাকর্মীরা রক্ত দিলেন। এ দিন ৭৫ বোতল রক্ত জোগাড় হয়েছে, যা দিয়ে বড়জোর দু’দিন কাজ চলতে পারে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায়। তিনি জানান, আগামী রবিবার হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় আরও একটি রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। ব্লাড ব্যাঙ্কের পরিস্থিতির কথা জানিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন রাখা হয়েছে, ওই দিন ৬০০ বোতল রক্ত সংগ্রহ করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। সারা বছর ধরে রক্তের জোগানের জন্যেও মহকুমার সমস্ত ক্লাব ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনগুলির কাছেও আবেদন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন হাসপাতাল সুপার।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মহকুমা ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের অনটন চলছে প্রায় মাস চারেক ধরে। তা নিয়ে রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর অশান্তির ঘটনা প্রায় প্রতিদিনের চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মী ও চিকিৎসকদের উপরে একাধিকবার হামলার অভিযোগ দায়ের হয়েছে আরামবাগ থানায়।
গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নোটিস টাঙিয়ে দেন। সেখানে বলা হয়, রক্তের প্রয়োজন হলে রোগীর বাড়ির লোককেই রক্তদাতা জোগাড় করতে হবে। এখনও সেই একই পরিস্থিতি চলছে। তবে মাঝে মধ্যে হাসপাতালে রক্ত দিচ্ছেন হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিগত মালিকানার অ্যাম্বুল্যান্স ও গাড়ি চালকেরা। স্থানীয় যুবকেরাও বিক্ষিপ্ত ভাবে দু’একবার রক্ত দিয়েছেন। কিন্তু আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের চাহিদার তুলনায় তা কার্যত কিছুই নয়।
আরামবাগ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কটির উপর নির্ভরশীল মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা। এ ছাড়াও, মহকুমার প্রায় ৫০টি নার্সিংহোম। পাশাপাশি তারকেশ্বর, বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুরের-সংলগ্ন এলাকার নার্সিংহোমগুলিও এখান থেকে রক্ত নিতে আসে। শুধু আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালেই প্রতিদিন গড়ে ১৫ জন থ্যালাসেমিয়া রোগী রক্তের জন্য ভর্তি হয়। এ ছাড়া, রাজনৈতিক হানাহানির জেরে জখম বা দুর্ঘটনায় জখম হওয়ার বিরাম নেই।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছরই গ্রীষ্মে রক্তের অনটন দেখা যায়। বড়জোর দু’একদিন অসুবিধায় পড়তে হয়। কিন্তু এ বারের মতো টানা মাস চারেক ধরে রক্ত সংকটের মুখে পড়তে হয়নি আগে।
কিন্তু কেন এই সংকট?
এ ক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় মানুষের একাংশের বক্তব্য, রাজনৈতিক দল ও ক্লাবগুলির গাফিলতি আছে এই কাজে।
তৃণমূলের হুগলি জেলা যুব সভাপতি স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিগুলির মধ্যে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা অন্যতম। আরামবাগে কেন তা নিয়মিত হচ্ছে না, খোঁজ নেব। দরকারে ব্যবস্থাও করব।” অন্য দিকে, সিপিএমের যুব সংগঠনের জেলা সম্পাদক তীর্থঙ্কর রায়ের দাবি, ২০১২ সালেও হুগলি জেলায় তাঁরা ১৭ হাজার ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ডামাডোলে সেই কাজে সমস্যা হচ্ছে। |