২৫% গরিব-শয্যা
১১ বেসরকারি হাসপাতালকে নির্দেশ রাজ্যের
হাসপাতালের ২৫ শতাংশ শয্যা গরিবদের জন্য সংরক্ষিত রেখে নিখরচায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। অথবা, লাভের ২০-২৫% অর্থ সরকারকে দিতে হবে। রাজ্যের ১১টি বেসরকারি হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে স্বাস্থ্যভবনে ডেকে এই বার্তা দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। রাজ্যের স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের হুঁশিয়ারি, “কথা না-শুনলে লাইসেন্স বাতিলের মতো পদক্ষেপ করা হবে।”
স্বাস্থ্যভবনের যুক্তি, রাজ্যের কাছ থেকে প্রায় বিনামূল্যে জমি নিলেও এই হাসপাতালগুলি সরকারকে কোনও সুবিধাই দেয় না। সরকারের এই বক্তব্য অবশ্য খারিজ করে দিয়েছে বার্তা পাওয়া ১১টি হাসপাতালের একাংশ। তাদের মতে, ভোট ব্যাঙ্কে প্রভাব বাড়াতে রাজনৈতিক নেতারা যাতে বিনা পয়সায় চিকিৎসার সুবিধা দিতে পারেন, সেই জন্যই এমন পদক্ষেপ করা হচ্ছে। সরকার এ ভাবে চাপ দিলে হাসপাতাল তুলে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, মূলত বাম আমলে হাসপাতাল তৈরির জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কাউকে এক টাকায় আবার কাউকে নামমাত্র মূল্যে জমি দেওয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতর তো বটেই, জমি দিয়েছিল ভূমি দফতর, কলকাতা পুরসভা, কেএমডিএ-ও। হাসপাতাল তৈরির পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে যৌথ ভাবে গবেষণা চালানোর অঙ্গীকার করে সংস্থাগুলি বিদেশ থেকে প্রায় অর্ধেক দামে দামি যন্ত্রপাতিও আনিয়েছিল। এমনকী অনেকের লাইসেন্স ফি-ও মকুব করেছিল তৎকালীন সরকার। বিনিময়ে সরকার কী পেয়েছে?
স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, জমি দেওয়ার সময় সরকারের সঙ্গে চুক্তি ছিল, হাসপাতালের ২০% শয্যা বিপিএল তালিকাভুক্ত রোগীদের নিখরচায় চিকিৎসার জন্য সংরক্ষিত থাকবে। সেই রোগী কোনও সরকারি হাসপাতালের থেকেও ‘রেফার’ হয়ে আসতে পারে। বলা ছিল, কত জন গরিব রোগীর চিকিৎসা করা হচ্ছে, তার মাসিক রিপোর্ট স্বাস্থ্যভবনে পাঠাতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। কোনও কোনও হাসপাতালের পরিচালন কমিটিতে স্বাস্থ্য দফতরের এক জন প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছিল নজরদারির জন্য। তবে শর্ত না-মানলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তার কোনও সুস্পষ্ট উল্লেখ চুক্তিতে ছিল না।
গত মাসের মাঝামাঝি হাসপাতালগুলির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে সুশান্তবাবু অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, এক মাসের মধ্যে নয়া সিদ্ধান্ত না-মানলে লাইসেন্সও বাতিল করা হতে পারে। বৈঠকে উপস্থিত স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, “অতীতে না-থাকলেও এখন সেটা চলবে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসেই আমরা শাস্তির নতুন নিয়ম তৈরি করব।” সুশান্তবাবুরর কথায়, “হাসপাতালগুলি সত্যি কত জন দরিদ্রকে নিখরচায় পরিষেবা দিচ্ছে, তা দেখতে আমরা আলাদা কর্মী নিয়োগের কথাও ভাবছি।”
সরকারের এই নতুন ফতোয়ায় অবশ্য বিস্মিত ওই সব বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের একটি বড় অংশের অভিযোগ, “এমনিতেই ছোট-বড় রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশে আসা রোগীদের কম টাকায় চিকিৎসা করতে হয়। আবার বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানের জন্য রাজনৈতিক দাদাদের কথায় মোটা অঙ্কের চাঁদাও দিতে হয়। এর পরেও নিখরচায় পরিষেবা দিতে হলে হাসপাতালই তুলে দিতে হবে।”
যে ১১টি হাসপাতালকে ডেকে স্বাস্থ্যভবন কড়া বার্তা দিয়েছে, তাদের একটি অংশের দাবি, তারা অল্প টাকায় জমি নেয়নি। তাই ফতোয়া মানারও কোনও প্রশ্ন নেই। যেমন, নিউ-আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “আমরা সরকারের থেকে জমি বা অন্য কোনও সুবিধা নিইনি। আসলে স্বাস্থ্য দফতর চাইছে, সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালে যে কোনও জনপ্রতিনিধি এক কলম চিঠি লিখে রোগী পাঠালেই তাঁকে বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিতে হবে।”
এক বেসরকারি হাসপাতালের কর্তার আবার প্রশ্ন, “আমরা সল্টলেক বা মুকুন্দপুরের হাসপাতালের জন্য সরকারের কাছ থেকে কোনও জমি পাইনি। জমি নেওয়া হয়েছিল শুধু ঢাকুরিয়ায় হাসপাতালের জন্য। তা হলে অন্য দু’টি হাসপাতালে কেন নিখরচায় পরিষেবা দেওয়া হবে?” পার্ক স্ট্রিটের একটি প্রসূতি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছেন, “আমরা ১৯৯২ সালে ৯৯ বছরের লিজে সরকারের থেকে জমি নিয়েছিলাম পুরোপুরি বাজার দরে।” ঠাকুরপুকুরের এক হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “১৬ একর জমির মধ্যে সাড়ে তিন একরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল সরকার। সরকারের মধ্যস্থতায় জমির মালিকদের তখনকার বাজার দর অনুযায়ী টাকা দিয়ে জমি কিনেছি। চুক্তিতে কোনও শর্ত না-থাকলেও নিজেদের উদ্যোগেই আমরা অনেক শিশুর নিখরচায় চিকিৎসা করি। আউটডোরে নিখরচায় রোগী দেখি। এর পরেও নতুন করে আমাদের উপর চাপ দেওয়া অনুচিত।” উল্টে তাঁদের অভিযোগ, সল্টলেকের, হাওড়া এবং মুকুন্দপুরের একটি হাসপাতাল সরকারের কাছ থেকে কম টাকায় জমি পেলেও তাদের বৈঠকে ডাকা হয়নি!স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, যারা কম দামে জমি নেয়নি বলে দাবি করছে, তাদের সব রেকর্ড দফতরে রয়েছে। আর কম দামে জমি পাওয়া আরও কয়েকটি হাসপাতালকে ভবিষ্যতে ডাকা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। অন্য দিকে, হাসপাতালগুলির কম মূল্যে পরিষেবার দাবি উড়িয়ে স্বাস্থ্যকর্তাদের বক্তব্য, কম টাকায় চিকিৎসা করার কোনও নথি কোনও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই দেখাতে পারেননি। বেসরকারি হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতর যে রিপোর্ট তৈরি করেছে, তাতে বলা হয়েছে এদের পরিষেবা-মূল্যে ছাড় দেওয়ার ধরনটা বিচিত্র। যেমন, একটি হাসপাতাল ‘ইন্টারভেনশন চার্জ’-এ ছাড় দিচ্ছে বলে দাবি করছে। কিন্তু এটা কী ধরনের চাজর্, তার ব্যাখ্যা তারা দিতে পারেনি। আবার, ডায়েট, শয্যা এবং অ্যাম্বুল্যান্স চার্জ-এ ছাড় দেওয়া হয় বলে যে দাবি করা হয়েছে, তারও কোনও নথি নেই হাসপাতালগুলির কাছে। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তার কথায়, “সরকারি হাসপাতাল রোগীর ভারে নাকানিচোবানি খাবে, আর বেসরকারি হাসপাতালগুলো সরকারের থেকে সুবিধা পেয়েও গরিব রোগীদের চিকিৎসা-পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব কাঁধ থেকে ঝেড়ে ফেলবে এটা আর চলবে না।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.