রাস্তায় পড়ে থাকা অবস্থায় যখন ২০ বছরের তরুণীকে উদ্ধার করা হয়েছিল তখন তিনি মনোরোগী। ভবঘুরে। গায়ে পোশাক রাখতে চাইতেন না। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ডুয়ার্সের হাসিমারায় পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অচেতন অবস্থায় ওই তরুণী পড়ে ছিলেন। ফাঁড়িতে মহিলা পুলিশ না থাকায় তাঁরা স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে খবর দেন। তাদের মহিলা সদস্যারা ওই তরুণীকে উদ্ধার করেন। সমাজ কল্যাণ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁরা তরুণীটিকে ময়নাগুড়ির বেসরকারি হোমে রেখে আসেন। হোম কর্তৃপক্ষ তাকে পাঠান জলপাইগুড়ি জেলা হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসার পর এখন ওই তরুণী সম্পূর্ণ সুস্থ। সুস্থ হতেই হোম কর্তৃপক্ষকে তিনি জানান, তার নাম রেশমি শ্রেষ্ঠা। কাঠমাণ্ডুর সিনেমঙ্গলে কাকা কাকিমার বাড়িতেই সে থাকত। তাঁদের নামও জানায়। নাম ঠিকানা জেনে জলপাইগুড়ি চাইল্ড লাইনের মাধ্যমে নেপালের চাইল্ড লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তারাই খোঁজ নিয়ে ঠিকানা বার করে খবর দেন। সেই মতো আত্মীয়রা যোগাযোগ করেন। বৃহস্পতিবার রেশমিকে নিয়ে তাঁরা ফিরে যান নেপালে। এ দিন কাঁকরভিটা সীমান্তে রেশমিকে তাঁর আত্মীয়দের হাতে দেন জলপাইগুড়ি চাইল্ড লাইন, শিলিগুড়ির কাঞ্চনজঙ্ঘা উদ্ধার কেন্দ্রের সদস্যরা। |
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং চাইল্ড লাইন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি হাসিমারা থানার সামনে থেকে রেশমিকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তাঁর গায়ে তখন কোনও পোশাক ছিল না। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মুখপাত্র রিঙ্কি বসু বলেন, “ওকে যখন উদ্ধার করা হয়েছিল তখন পাগলের মতো অবস্থা। গায়ে কোনও পোশাক রাখতে চাইত না। আঁচড়ে কামড়ে দিত। আমরা তাকে কোনও ক্রমে হোমে পাঠাই। হোম কর্তৃপক্ষ পরের দিন ৯ ফেব্রুয়ারি তাঁকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করান। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল। তাঁকে সুস্থ করে তুলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত ২৯ মে হোমে পাঠায়।” এর মধ্যেই সে তার নাম জানায়। লিখেও দেয়। জানায়, তাঁর বাবা মা নেই। কাঠমাণ্ডু শহরের সিনেমঙ্গল এলাকায় কাকা কিশোর ওঝা এবং কাকিমা রেখা ওঝার কাছে থাকতেন।
রেশমি কী করে হাসিমারা এলেন? হিন্দিতে তিনি বলেন, ‘‘আমার বাড়ির কথা কাকা কাকিমার কথা মনে পড়ছে। আমার ছোট ভাই আছে। কত দিন বাদে তাকে দেখব। কী ভাবে হাসিমারা এলাম কিছুই মনে করতে পারছি না।” হোমের সুপার রানু সরকার জানান, রেশমি সুস্থ হয়ে ফিরে সকলের সঙ্গে আর পাঁচ জনের মতোই কথা বলত। গল্প করত, টিভি দেখত। নিজের কাজ সে নিজেই করত। রেশমিকে বাড়িতে পাঠালেও তার ওপর নজর রাখবে চাইল্ড লাইন। জলপাইগুড়ি চাইল্ড লাইনের মুখ্য সংযোজক হিমাদ্রী শেখর রায় জানান, ৩ বছর তাঁর উপর নজর রাখবেন, খোঁজখবর করবেন তাঁরা। |