ঈদের আগেই রেশনে চাল, চিনি, সুজি, পাঁপড় মিলেছে। কিন্তু মন ভরেনি বেশির ভাগেরই।
কী করেই বা ভরবে? যে চিনি বিপিএল তালিকাভুক্তদের ১৩ টাকা কেজি দরে পাওয়ার কথা, তার জন্য লেগেছে দ্বিগুণ। পরিমাণেও যথেষ্ট নয়। সেমুই হবে কী দিয়ে? চাল, সুজি তার মানও বিশেষ ভাল নয়। ও দিকে, খোলা বাজারের দিকে তাকালে এই মেঘলা দিনেও চোখ ঝলসে যাওয়ার জোগাড়। রেশনে যে আদৌ কিছু পাওয়া গিয়েছে, সেটাই অতএব মন্দের ভাল।
পঞ্চায়েত ভোট কাটিয়ে আপাতত ঈদ নিয়েই মেতেছে মুর্শিদাবাদ। সেখানে রেশনে চিনি মিলেছে পরিবার পিছু ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম। কান্দির ভবানীপুর গ্রামের রোজদার ইলিয়াস হোসেনের কথায়, “রোজা-রমজানের মাসে অনেকের কাছে ও-ই ঢের! ঈদের সকালে সেমুই ভেজাতে ওই চিনিটুকুই গরিব পরিবারে হাসি ফোটাবে।” খাদ্য ও সরবরাহ নিগমের মুর্শিদাবাদ জেলা নিয়ামক সমীর দেব বলেন, “এই সপ্তাহে চিনি ছাড়াও দেওয়া হয়েছে ছোলার ডাল, পাঁপড়, রুল ময়দা, সরষের তেল, রাইস অয়েল।”
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমায় আবার বিভিন্ন জায়গায় একই রকম জিনিস পাওয়া যায়নি। গত দু’সপ্তাহে চাল-ডাল-গমের সঙ্গে রেশনে চিনি দেওয়া হয়েছিল। এ সপ্তাহে বাড়তি পাওয়া গিয়েছে ৪০টাকা কেজি দরে ছোলা ও ২০ টাকা কেজি দরে ময়দা। নাফিসা ইসলাম, তামান্না খাতুনদের মনখারাপ, “ভেবেছিলাম, উত্সবের সময়ে বাড়তি কিছু দেওয়া হবে। কম দামে একটু তেল-সুজি পেলে ভাল হত। খোলা বাজারে জিনিসপত্রের দাম যা বেড়েছে, হাত ছোঁয়ানো যাচ্ছে না।”
বাজার আগুন বলে আগুন! দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং কেনাকাটা করতে এসে ভাঙড়ের সরকারি কর্মচারি রফিকুল হক বলেন, “গত বছর বিরিয়ানির মশলা ছিল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজিতে। এ বার ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। আগের বারের তুলনায় বিরিয়ানির চালের দামও ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি হয়েছে। বাজেট বাড়িয়েও কুল পাচ্ছি না।” অবসরপ্রাপ্ত কর্মী নরুন নবিও বলেন, “সামান্য পেনশনের টাকায় সংসার চলে। যতটুকু না কিনলে নয়, সেটুকুই কিনেছি। হাওড়ায় আবার সেমুই বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা কেজিতে, লাচ্চা ১০০-১৩০ টাকা কিলো। বাজার ধরার জন্য অনেক জায়গাতেই ১ কিলো লাচ্চার সঙ্গে আড়াইশো চিনি মুফতে দেওয়া হচ্ছে।
মেদিনীপুরে গোটা জুলাই মাসে রেশনে এক সপ্তাহ চিনি দেওয়া হয়েছিল তা-ও মাথাপিছু মাত্র ১০০ গ্রাম করে। অর্থাত্ যে বাড়িতে ৫ জন রয়েছেন তাঁরা পাবেন ৫০০ গ্রাম। জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতর জানিয়েছে, সকলকে চিনি দিতে হলে সপ্তাহে ২০ হাজার কুইন্টাল চিনির প্রয়োজন হয়। জুলাইয়ে এসেছে মোটে সাড়ে ৪ হাজার কুইন্টাল। মেদিনীপুর শহরের মোমিন মহল্লার বাসিন্দা মীর আরশেদ আলি বলেন, “এটা আমাদের কাছে বড় উত্সব। লাচ্ছা হোক বা সেমুই, বানাতে গেলে চিনি লাগে। রেশনে যা দিল, তাতে কী হবে?” অগত্যা খোলাবাজারে কেজি প্রতি ৩৪ টাকা থেকে ৩৭ টাকা দরে তাঁদের চিনি কিনতে হচ্ছে।
গরিবের ঘরে এই ঈদ আর তেমন মিষ্টি হবে কী করে? |