মেয়াদ এক বছর বাকি থাকতেই উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মুক্তিনাথ চট্টোপাধ্যায় বুধবার পদত্যাগ করেছেন। মেয়াদ ফুরোনোর দু’বছর আগেই, বৃহস্পতিবার সরিয়ে দেওয়া হল সংসদের সচিব অচিন্ত্য পালকে।
যদিও অচিন্ত্যবাবুর দাবি, সচিব-পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা সরকারের তরফে তাঁকে জানানোই হয়নি। বহু বিতর্কে জড়িয়ে পড়া মুক্তিবাবুর ইস্তফা গৃহীত হওয়ার মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই বলে অনেকের অভিমত। কিন্তু কার্যকালের বেশ কিছুটা বাকি থাকতেই অচিন্ত্যবাবুর অপসারণ কেন, প্রশ্ন উঠছে।
রাজ্য সরকার এ দিন সংসদের নতুন সভাপতি ও সচিব নিয়োগ করেছে। সভাপতি হয়েছেন বাগবাজার উইমেন্স কলেজের অধ্যক্ষা মহুয়া দাস এবং সচিব নিযুক্ত হয়েছেন সিটি কলেজের বাণিজ্যের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সুব্রত ঘোষ। নতুন সভাপতি ও সচিব দু’জনেই এ দিন সংসদের দফতরে যান। তবে তাঁরা নতুন পদে যোগ দেননি। সোমবার দায়িত্ব নেবেন বলে জানিয়ে দেন দু’জনেই।
সদ্য পদত্যাগী সংসদ-সভাপতি মুক্তিনাথবাবু ২০১১-র জুলাইয়ে চারুচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষের পদে ইস্তফা না-দিয়ে সংসদের দায়িত্ব নেওয়ার সময় থেকেই লাগাতার বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। পরের পর বেশ কিছু বিতর্কের জেরে সরকারি দফতরের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ছিল। একাদশ শ্রেণির কিছু পাঠ্যবই প্রকাশের বরাত নিয়ে জল ঘোলা হওয়ায় সেই বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। তলানিতে এসে ঠেকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর বনিবনার সম্ভাবনা। তবে বুধবার পদত্যাগপত্র পেশের পরে তিনি সরে দাঁড়ানোর কারণ হিসেবে অসুস্থতার কথাই বলেছিলেন। তাঁর পদত্যাগপত্র যে গৃহীত হবে, ওই দিনই সরকারি সূত্রে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু সংসদ-সচিব অচিন্ত্যবাবুকে কেন সরানো হল, সেই প্রশ্ন উঠছেই। পাঠ্যবই প্রকাশনার বরাত দেওয়া নিয়ে মুক্তিবাবুর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিলেন অচিন্ত্যবাবু। ওই বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ তোলেন তিনি। তাতে সংসদের সভাপতি ও সচিবের কাজে সমন্বয়ের অভাব প্রকাশ্যে চলে আসে। তার জেরে রাজ্য সরকারকেও কিছুটা অস্বস্তিতে পড়তে হয়। বৃহস্পতিবার অচিন্ত্যবাবুকে সরিয়ে দিয়ে সরকার সেই বিতর্কে যবনিকা টানতে চেয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে।
তবে অচিন্ত্যবাবুর অপসারণ নিয়ে যে-সব প্রশ্ন উঠেছে এবং সরানোর ব্যাপারে তাঁকে সরকার থেকে কিছু জানানো হয়নি বলে সচিব যে-মন্তব্য করেছেন, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সেই বিষয়ে সরাসরি কিছু বলতে চাননি। সভাপতি-পদে ইস্তফার পিছনে তাঁকে ঘিরে লাগাতার বিতর্কের কোনও ভূমিকা আছে বলে মানতে চাননি মুক্তিবাবু। মানেননি ব্রাত্যবাবুও। একই ভাবে সচিবের অপসারণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় শিক্ষামন্ত্রী এ দিন নতুন সচিব নিয়োগের প্রয়োজনের কথা তোলেন। বলেন, “সংসদের নতুন সভাপতির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজের ক্ষেত্রে সুবিধার জন্য নতুন সচিব নিয়োগ করা হয়েছে। এই নিয়োগ আইনসিদ্ধ।” |