আই লিগের ক্লাবগুলো কেন ফুটবল আইপিএলের বিরোধিতা করছে তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
শুনলাম ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান বা ডেম্পোর মতো ক্লাবেরও কর্তারা মনে করছেন, ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট চালু হলে তাদের অস্বিস্ত বিপন্ন হবে। আমি তা মনে করি না। বরং মনে করি, আই লিগ আর আইপিএল দু’টো টুর্নামেন্ট একে অন্যের পরিপূরক হবে। আইএমজি-রিলায়্যান্স লিগ চালু হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে মেহতাব, নবি, ক্লিফোর্ডরাই।
কেন? যা জেনেছি তাতে প্রায় সাতশো কোটি টাকার এই টুর্নামেন্টে বেকহ্যাম, ফিগো, থিয়েরি অঁরি-র মতো বিশ্বের সুপারস্টার ফুটবলাররা খেলতে আসবে। তাদের সঙ্গে একই টিমে খেলবে আমাদের নবি-সুব্রত-মেহরাজরা। এতে তিনটে ব্যাপার ঘটতে পারে।
এক) সদ্য বিশ্ব ফুটবল থেকে অবসর নেওয়া তারকাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলতে পারলে হীনমন্যতা কাটিয়ে উঠতে পারবে আমাদের ফুটবলাররা।
দুই) বিনা খরচে এমন সব আধুনিক টিপস পাবে যা আমাদের ছেলেদের ফুটবলকেই উন্নত করবে।
তিন) ভারতীয় প্লেয়াররা আর্থিক ভাবে অনেক লাভবান হবে। যা হয়েছে ক্রিকেট আইপিএলে। ক্রিস গেইল, ব্রেট লি, রিকি পন্টিংদের সঙ্গে বা বিরুদ্ধে খেলে-খেলে মনোজ তিওয়ারি, ঋদ্ধিমান সাহা, অশোক দিন্দা, দেবব্রত দাসদের নিজেদের মধ্যে আস্থা বেড়েছে। এই ভাবনা গেঁথে বসেছে যে, আমরাও পারি।
আমাদের যখন খেলতাম হাঙ্গেরি, সাবেক চেকোস্লোভাকিয়া বা যুগোস্লাভিয়ার বিশ্বমানের ফুটবলারদের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পেতাম। মান্নাদাদের সময় যেটা আরও বেশি ছিল। এখন সে সুযোগ কোথায়? সেই কবে একবার জিকোর জাপানের বিপক্ষে খেলেছিল ভারত। তার পর কোরিয়া, জাপান, চিনের সঙ্গে খেলার সুযোগ কোথায় পেল আমাদের ছেলেরা? মলদ্বীপ, নেপালের সঙ্গেই তো এখন শুধু খেলি আমরা। মাঝেমধ্যে সিরিয়া, তাজাকিস্তানের সঙ্গে খেলার সুযোগ ঘটে সুনীল-নির্মলদের। যদি বা কালেভদ্রে বড় কোনও দলের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ আসে তো হীনমন্যতায় ভুগে মাঠে নামার আগেই শেষ হয়ে যাই আমরা। ভাবি, চার গোল খেয়ে শেষ করতে পারলেও বাঁচি! ফুটবল আইপিএল এলে সেটা হয়তো হবে না।
তা ছাড়া ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট চালু হলে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহমেডান শেষ হয়ে যাবে এটাও ভুল ভাবনা। প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি যখন জাতীয় লিগ চালু করেছিলেন তখন আমি কমিটিতে ছিলাম। আমাদের ভাবনা ছিল, এক দেশ-এক টুর্নামেন্ট। এটা চালু হওয়ার পর গোয়া লিগ বা কলকাতা লিগের আগ্রহ কমছে। কারণ গোয়াতে গিয়ে ডেম্পোকে হারানোর আনন্দই আলাদা।
ফুটবল আইপিএল চালু হলে সেটা ক্লাবগুলোর আবেগকেও মুছে ফেলতে পারবে না। ক্রিকেট আইপিএল কিন্তু টেস্ট ম্যাচ বা অ্যাসেজ সিরিজের ক্ষতি করতে পারেনি। পাঁচ দিনের ক্রিকেটের যা ক্ষতি হয়েছে সেটা সীমিত ওভারের ক্রিকেটের জন্য। ফুটবলে সেই ভয়ও নেই। কারণ, ৯০ মিনিটেরই ম্যাচ হবে। আর নতুন লিগে তো খেলবে ফ্রাঞ্চাইজি টিম। মোহন-ইস্টের মতো ক্লাব-আবেগ সেখানে তৈরি হবে না। দেড় মাসের একটা টুর্নামেন্ট। তাতে চিত্রতারকা, পুরনো ফুটবলার, প্রাক্তন বিশ্বকাপার, স্থানীয় ছেলেরা খেলবে। সেখানে আই লিগ লম্বা টুর্নামেন্ট। কত চড়াই-উতরাই। মজাই আলাদা।
তবে ক্লাবগুলোর একটা দাবির সঙ্গে আমি একমত। তা হল, কোনও ক্লাবের ফুটবলার নিলে ক্লাবকে সেই বাবদ একটা টাকা দিক স্পনসররা। যেমন বিদেশে রুনি-রোনাল্ডোদের জন্য ট্রান্সফার ফি দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে সেটা কুড়ি-তিরিশ পার্সেন্ট হতেই পারে। তা হোক। তবে ফুটবল আইপিএল যেন হয়। চাই না, ভারতীয় ফুটবলের বিশ্বায়নের এই সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাক!
|