ঈদের আগের রাতে আলো-ঝলমল ধর্মতলায় চলন্ত ইনোভা গাড়ির দু’দিকের জানলা দিয়ে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে পরিত্রাহি চিৎকার করছেন এক তরুণী আর একটি কিশোরী। পিছনে চিৎকার করতে করতে দৌড়চ্ছেন এক প্রৌঢ়। বিস্ময়ের ঘোর কাটিয়ে রে-রে করে ধাওয়া করল জনতাও। বেপরোয়া চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল গাড়ির। টিপু সুলতান মসজিদের মোড়ে গাড়িটিকে ধরে ফেলল জনতা। ধরা পড়ল মদ্যপ চালকও। শুরু হল মারধর।
বৃহস্পতিবার রাত ১টা নাগাদ মহানগরীর প্রাণকেন্দ্রে এ ভাবেই দু’টি মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিল জনতা। পুলিশ জানায়, মেছুয়া বাজারের ফল ব্যবসায়ী মহম্মদ সেলিম ১৮ এবং ১২ বছরের দুই মেয়েকে নিয়ে নিউ মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন। তার পরে মদনমোহন বর্মন স্ট্রিটের বাড়িতে ফেরার জন্য ধর্মতলার মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন গাড়ির অপেক্ষায়। রাত বেড়ে যাওয়ায় রাস্তায় যানবাহন কমে গিয়েছিল। একটি ইনোভা গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল কে সি দাশের দোকানের সামনে। তার চালক যেতে রাজিহওয়ায় দুই মেয়েকে নিয়ে গাড়িতে ওঠেন বাবা। শাট্ল গাড়ি ভেবে যেতে চান অন্য এক যুবকও। চালক তাঁকেও গাড়িতে তোলে। সেলিম বসেন চালকের পাশে। চালক ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে দিয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ বরাবর দ্রুত গাড়ি চালিয়ে দেয়। চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশন পেরিয়ে আচমকাই ডান দিকে গণেশ চন্দ্র অ্যাভিনিউয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে সে ঠেলে ফেলে দেয় সেলিমকে। বড় মেয়েটি পরে জানান, তাঁরা ভয়ে চিৎকার করতে থাকেন। চালক দ্রুত বেগে গাড়ি ঘুরিয়ে ফের চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনের পাশ দিয়ে এগোতে থাকে ধর্মতলার দিকে। বিপদ আশঙ্কা করে চেঁচাতে শুরু করেন যুবক আরোহীও। চালক না-থামায় তিনি কোনও রকমে দরজা খুলে লাফিয়ে পড়েন। চালকের ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পড়ে যাওয়া সেলিম আঘাত সামলে মেয়েদের বাঁচাতে ছুটতে থাকেন গাড়ির পিছনে। ঈদ বলেই গভীর রাতেও ওই রাস্তায় ছিলেন অনেকেই। পথচারীরাও গাড়ির পিছনে দৌড়তে থাকেন। দু’টি মোটরবাইক নিয়ে ধাওয়া করেন দুই যুবকও। যূথবদ্ধ তাড়া খেয়ে মদ্যপ চালক দিশাহারা হয়ে পড়ে। মসজিদের সামনে দিয়ে লেনিন সরণিতে ঢুকতে গিয়ে গাড়ি থেমে যায়। গাড়ি থেকে দু’টি মেয়েকে উদ্ধার করে জনতা। চালককে ধরে শুরু হয় মারধর। গাড়িটি ভাঙচুর করে উল্টে দেওয়া হয়। এসে যায় পুলিশও। তারা গাড়িচালককে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। তবে অন্য আরোহী যুবকটির খোঁজ মেলেনি।
কেন অপহরণের চেষ্টা, চালককে জেরা করেও পুলিশ তা জানতে পারেনি। পুলিশ জানায়, লোকটি মদ্যপ অবস্থায় ছিল। ঠিকমতো কথা বলতে পারছিল না। মহম্মদ আজমল নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী যুবক বলেন, “রাত পোহালেই খুশির ঈদ। বেশি রাতেও কেনাকাটা চলছিল। রাস্তায় লোকজন ছিল প্রচুর। তাই মেয়ে দু’টিকে রক্ষা করা গিয়েছে। নইলে কী যে হতো, ভাবতেই শিউরেই উঠছি।”
মেয়ে দু’টি তখনও আতঙ্কে ঠকঠক করে কাঁপছিলেন। তাঁদের জড়িয়ে ধরে বাবা বলেন, “কলকাতা পুলিশের সদর দফতর লালবাজারের কাছে উৎসবের রাতে যদি নিরাপত্তার এই হাল হয়, রাজ্যের অন্যত্র কী হতে পারে, ভাবতে পারছি না!” |