সিটি সেন্টারের উপকণ্ঠে দু’ঘণ্টা ধরে একের পর এক পথচারীকে পাকড়াও করে তাণ্ডব চালাল দুষ্কৃতীরা। জিনিসপত্র কেড়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছে বেঁধে রেখে মারধরও করল তারা। পরে পুলিশ গিয়ে ওই পথচারীদের উদ্ধার করে।
দুর্গাপুর স্টেশন থেকে সিটি সেন্টারে ঢোকার রাস্তায় ডিভিসি মোড়ের কাছে বুধবার রাতে পরপর পাঁচ জন ওই দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হন। পুলিশ জানিয়েছে, রাত সাড়ে ১০টা থেকে ঘণ্টা দুয়েক ধরে সুনসান একটি জায়গায় পরপর ছিনতাইগুলি করে ওই দুষ্কৃতীরা। শহরের রাস্তায় এমন ঘটনায় উদ্বিগ্ন বাসিন্দারা। শহরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
সেন্ট্রাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী জয়রাম সিংহ পুলিশকে জানান, কলকাতা থেকে বিভূতি এক্সপ্রেসে এসে দুর্গাপুর স্টেশনে নামেন তিনি। তার পরে সাইকেলে চড়ে ইনস্টিটিউটের কলোনিতে বাসস্থানে ফিরছিলেন। ডিপিএলের ৭ নম্বর ইউনিটের গেট পেরিয়ে ডিভিসি মোড়ের কাছাকাছি পৌঁছতেই তাঁকে আটকায় চার দুষ্কৃতী। কেড়ে নেওয়া হয় সাইকেল, মোবাইল ফোন, নগদ টাকা, এটিএম কার্ড-সহ সঙ্গে থাকা সব জিনিসপত্র। তার পরেই গাছের ডাল ভেঙে দুষ্কৃতীরা মারধর শুরু করে। গাছে বেঁধে মারধর চলতে থাকে। |
এখানেই একের পর এক ব্যক্তিকে মারধর করে ছিনতাই করা হয়। ছবি: বিশ্বনাথ মশান। |
ডিপিএল ডিএন টাইপ এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা জানান, তিনি একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন মোটরবাইকে চড়ে। তাঁকে আটকে সব কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয়। এর পরে এক এক করে আটকানো হয় মোটরবাইক আরোহী সুরেশ গুপ্ত, বিশ্বজিৎ গোস্বামী-সহ তিন জনকে। প্রত্যেককেই দুষ্কৃতী দলটি আটকে মারধর করে ও সব জিনিসপত্র কেড়ে নেয়। এক জনের মোবাইল ফোন কাড়তে না পারায় তিনি দুষ্কৃতীদের অজ্ঞাতসারে পুলিশকে ফোন করেন। পুলিশ আসতেই চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।
স্টেশন থেকে সিটি সেন্টারে ঢোকার ওই রাস্তায় আশপাশে বাড়ি, দোকানপাট, কারখানা রয়েছে। তবে বুধবার রাতে যেখানে দুষ্কৃতীরা ছিনতাই ও মারধর করে, সেই জায়গাটি সুনসান। সেখানে রাস্তার এক পাশে রয়েছে বন্ধ পড়ে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত বিওজিএল কারখানার পিছনের ঘন জঙ্গল। অন্য পাশে ডিপিএলের উঁচু পাঁচিল। আশপাশ থেকে কারও দেখতে পাওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগকারীরা জানান, দুষ্কৃতীরা তাঁদের রাস্তা থেকে জঙ্গলের কিছুটা ভিতরে টেনে নিয়ে গিয়ে ছিনতাই ও মারধর করে। ফলে, রাস্তা দিয়ে যাওয়া লরি বা অন্য গাড়ির আরোহীরা কিছু দেখতে পাননি।
আক্রান্তদের প্রথমে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যায় পুলিশ। প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া
হয়। পুলিশ জানায়, অভিযোগকারীদের সঙ্গে কথা বলে কিছু সূত্র মিলেছে। চার দুষ্কৃতীর মধ্যে এক জনের মুখের কিছুটা রুমালে ঢাকা ছিল। এক অভিযোগকারী তাঁকে প্রাথমিক ভাবে চিনতে পেরেছেন বলে দাবি করেছেন। তাঁর দেওয়া তথ্য খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বাকিদের মুখ খোলা ছিল। তাদের বয়স ২৫ বছরের আশপাশে। ঘটনার সময়ে দুষ্কৃতীরা ভোজপুরি ভাষায় কথাবার্তা বলছিল বলে অভিযোগকারীরা জানান। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের সন্দেহ, ঘটনার পিছনে রয়েছে পুরনো দুষ্কৃতীরাই। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ।
স্টেশন থেকে শহরে ঢোকার অন্যতম প্রধান রাস্তায় এ ভাবে পরপর ছিনতাইয়ের ঘটনায় আতঙ্কিত শহরবাসী। রাতের দিকে অনেকেই ওই রাস্তায় ট্রেন থেকে নেমে সাইকেল বা মোটরবাইক চালিয়ে ফেরেন। কেউ কেউ অটো ভাড়া করেও আসেন। বেনাচিতির বাসিন্দা বিপ্লব বিশ্বাস বলেন, “আমি তো মাঝে-মাঝেই কলকাতা থেকে রাত করে ফিরি। স্টেশন থেকে বাইক নিয়ে বাড়ি আসি। বুধবার রাতের ঘটনা শুনে তো ভয় পাচ্ছি।” ইস্পাত নগরীর এ-জোনের অশোক অ্যাভিনিউয়ের বাসিন্দা রণজিৎ বসুর কথায়, “বড়জোড়ার এক বেসরকারি কারখানায় কাজ করি। ওই রাস্তা দিয়েই মোটরবাইক নিয়ে ফিরি। দুষ্কৃতীরা এ ভাবে চড়াও হলে তো চিন্তার কথা!” সিটি সেন্টারের নন-কোম্পানি এলাকার শর্মিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “দুর্গাপুরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে না এমন নয়। কিন্তু এ ভাবে পরপর ছিনতাই প্রায় বিরল।” পুলিশ জানায়, ফের যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সে জন্য ওই রাস্তায় টহল জোরদার করা হচ্ছে। |