|
|
|
|
বসের থিয়োরি জ্যোতিষী না খুঁজে তোমার পরিশ্রম বাড়াও |
তিনি ছায়াসঙ্গী গত সাত বছর। বসের হয়ে চুক্তি সম্পাদনা থেকে দেশে-বিদেশে কাজের ডায়েরি নিয়ে
একসঙ্গে ঘুরে
বেড়ানো।
টিম
শাহরুখের সব চেয়ে অপরিহার্য মুখ করুণা বদওয়াল তুলে ধরলেন ‘মিস্টার খান’য়ের ব্যক্তিগত
আর অচেনা
সব মুহূর্ত। শুনলেন গৌতম ভট্টাচার্য |
আমার বস কখনও বসের মতো আচরণ করেন না। অন্তত করেননি কখনও আমার সঙ্গে গত সাত বছরে। উনি যত না বস, তার চেয়ে অনেক বেশি আমার মেন্টর।
|
করুণা বদওয়াল
বিজনেস ম্যানেজার
রেড চিলিজ,
‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’-য়ের
অন্যতম
প্রযোজক,
শাহরুখের
ব্যক্তিগত সচিব |
আমার লিডার।
ওঁর কাছে আমি বা আমরা শিখেছি যে, যখন কোনও প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করবে, একটা জিনিস অবশ্যই মেনে চোলো। কখনও তাকে একশোর কম দিও না। এমনকী নিরানব্বই পার্সেন্ট দিয়েও বোলো না অনেকটা দিলাম। তোমার ডেলিভারি হবে হয় একশো, বা একশোর বেশি। কর্পোরেটের লোকজন বা অনেক বাঘাবাঘা মানুষকেও দেখেছি, তাই ওঁর সংস্পর্শে মুগ্ধ হয়ে যেতে। ওঁরা চোখের সামনে টের পেয়েছেন শাহরুখ খানের কমিটমেন্ট মানে, একেবারে পুরোটাই পাওয়া যাবে।
আর একটা জিনিস দেখেছি। ওঁর দর্শন হল, যখন যার কাছে নিজেকে সমর্পণ করবে, প্রশ্ন না করে করবে। ওঁকে তখন যা বলা হবে, মুখ বুজে উনি তাই করবেন। ইন্ডাস্ট্রিতে বাইশ বছর হয়ে গেল ওঁর। ৫৫টা ফিল্ম করেছেন। অথচ এখনও ডিরেক্টর যা বলবেন, সেটাই শেষ কথা।
শ্যুটিং-টুটিংয়ে উপস্থিত থেকে আমার এক এক সময় খুব অবাক লেগেছে। কোনও কোনও সময় মনে হয়েছে, আরে এটা তো বসের রুচির সঙ্গে একেবারেই যাচ্ছে না। অথচ উনি তো কোনও আপত্তিও করছেন না। কখনও কোনও পণ্যের হয়তো উনি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হয়েছেন। এ বার শ্যুটিংয়ে উনি নিজের মত জিজ্ঞেস না-করলে দেবেনই না। ওঁর বক্তব্য হল, প্রোডাক্টটা যাদের তারা জানে কেন কী করছে? মার্কেটটা তারা অনেক বেশি চেনে-বোঝে। আমার মনে হয় এখানে কোথাও একটা বিনয়ী হওয়ার ক্ষমতা লুকিয়ে রয়েছে। নইলে কোনও সুপারস্টারের তো পান থেকে চুন খসলেই আপত্তি করার কথা।
প্রথম যখন চাকরিতে ঢুকি, একটা কথা ওঁর কাছে চেপে গিয়েছিলাম। মুখ ফুটে বলিনি যে, আমি আপনার অন্ধ ফ্যান। এই ক’বছরে আপনার সিনেমা রিলিজ করলেই অবধারিত ফার্স্ট শো দেখেছি। কিন্তু চাকরিতে ঢুকে কাছ থেকে যা দেখতে পেয়েছি, সেটা হলে সিনেমা দেখার চেয়ে অনেক বেশি। কেউ কেউ আমায় জিজ্ঞেস করেন, আচ্ছা ব্যক্তিগত জীবনে কি উনি যশরাজের রাহুল? আমি উত্তর দিয়েছি, না। শুধু রাহুল টাইপ ব্যক্তিত্ব দিয়ে ওঁকে বোঝানো সম্ভব নয়। মিস্টার খান
এমন একজন ডায়নামিক মানুষ, যিনি রাহুল-টাহুল জাতীয় ইমেজারির অনেক ঊর্ধ্বে। |
|
আমার বসের যেটা সবচেয়ে ভাল লাগে, তা হল ওঁর সততা। ওঁর গোটা অস্তিত্বের ভরকেন্দ্রেই এই ব্যাপারটা লুকিয়ে রয়েছে। সততা। কোনও ফাঁকিবাজির মধ্যে উনি নেই। মিথ্যে ভাঁওতাবাজিতেও নয়। আমি খুব জোর দিয়ে বলতে পারি, এই মানুষটা জীবনে শর্টকাটের পিছনে কখনও দৌড়য়নি। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বলতে যে সব স্টিরিওটাইপ শোনা যায়। কথায় কথায় লোকে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎকে ভয় পেয়ে, প্রচণ্ড চাপ সামলাতে না-পেরে জ্যোতিষীর কাছে ছুটছে, উনি তার মধ্যে কখনও নেই। অথচ উনি বেশ আধ্যাত্মিক। আংটি পরা কালচারটাতেই মনে হয় না ওঁর বিশ্বাস আছে। যখন কোনও প্রোজেক্ট করেন, প্রচণ্ড মনপ্রাণ দিয়ে করেন। যদি সেটা ব্যর্থ হয়, তো আরও খাটাখাটনি বাড়িয়ে দেন। কাছ থেকে দেখে চমৎকৃত লাগে মানুষটা কর্মে বিশ্বাসী। সংস্কারে নয়।
একই সঙ্গে মিস্টার খান নন-স্টপ এন্টারটেনার। ওঁর সঙ্গে এত সিটি ট্যুর করেছি। এত জায়গায় একসঙ্গে গিয়েছি। সারাক্ষণ শুধু খেয়ালই রাখেন না, অসম্ভব জমিয়ে রাখেন। শ্যুটিং টুটিং চুকে গেলে রাত্তিরে নিয়ম করে সবাইকে নিয়ে বসবেনই। একটা ব্যাগ সঙ্গে থাকে ওঁর। তাতে নানা রকম খেলা বোর্ড গেমস। একটা খেলার নাম ‘ট্যাবু’। পাঁচটা শব্দ, খেলায় বলা যাবে না যেগুলো নিষিদ্ধ বা ট্যাবু। ‘ট্রিভিয়াল পারসুইট’ আর একটা খেলা। আরও একটা খেলা ওঁর কাছে দেখেছি ‘মিলিওনেয়ার’। কুড়িটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে যেখানে। দিনভর কাজের পর সব কটাই মেন্টালি খুব রিল্যাক্সিং। |
দুই যুগ।
দুই সুপারস্টার |
ব্ল্যাক কফি সারাদিন খুব খান। অনেকে মনে করে, ব্ল্যাক মানেই চিনি ছাড়া। তো ওঁকে চিনি ছাড়া দেয়, তখন উনি বলেন চিনি দাও। ‘ফুডি’ একেবারেই নন। কেউ কেউ আছে, যারা খাওয়ার জন্য বাঁচে। কেউ কেউ আছে যারা বাঁচার জন্য খায়। উনি নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় ক্যাটেগরির। মাঝে মাঝে শখ করে বিরিয়ানি খান বটে, সেটা কদাচিৎ। এক এক বার হয়েছে ট্যুরে উনি আমাদের বলেছেন, আরে তোমরা তো শুধু চিকেন টিক্কাই খেয়ে যাচ্ছ। আমরা তখন বলেছি, কী করব? আপনি তো শুধু এটা আর চিকেন তন্দুরি খান। উনি শুনে খুব হাসলেন।
যেহেতু এত কাছে থাকি, তাই অনেক কিছুই চোখের সামনে দেখতে পাই। দেখতে পাই, মিডিয়ায় ওঁর সম্বন্ধে অনেক কিছু বেরোচ্ছে, যা অসহ্য রকমের মিথ্যে। আমার
|
আংটি
কালচার-য়ে উনি
বিশ্বাস করেন না |
নিজেরই ইচ্ছে করে, চেঁচিয়ে ফাটিয়ে দিই। তীব্র প্রতিবাদ করে বলি, এটা মিথ্যে। উনিও এক এক সময়ে বেশ আপসেট হয়ে যান। তার পর আমাদের বোঝান, উত্তেজিত হয়ে কোনও
লাভ নেই, এগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়।
আইপিএল জগতে ঢুকতে পেরে, আমার মনে হয়, ওঁর খুব ভালই লেগেছে। মনের দিক থেকে মিস্টার খান একজন আপাদমস্তক স্পোর্টসম্যান। ওঁর বাড়িতে অসংখ্য সব ট্রফির মধ্যে একটা পুরস্কার খুব যত্নের সঙ্গে সাজানো। সেন্ট কলম্বাস স্কুলে জেতা ‘সোর্ড অব অনার’। এটা দেওয়া হয় স্কুলের শ্রেষ্ঠ অলরাউন্ডারকে। খেলাধুলোয় যে ভাল পড়াশোনাতেও সে ভাল। এমনিতে উনি খুব পড়াশোনা করেন। আশেপাশে কী ঘটছে সে সব সম্পর্কে ভীষণ ওয়াকিবহাল। আমরা রাত্তির করে বেরোই, তখনও দেখি উনি হয় পড়ছেন, নইলে কিছু না কিছু করছেন। দিনে আঠারো ঘণ্টা তো খাটেন-ই। আমার মনে হয়, তারও বেশি।
মানুষের ভালবাসা যে পরিমাণ উনি পান, যে ভাবে দেশে বিদেশে স্রেফ ওঁর দর্শনের জন্য লোকে ছ ’-সাত ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে ভাবাই যায় না। কলকাতার ইভেন্টেই তো সাড়ে ছ’টায় ফাংশন। দুপুর দুটো থেকে সিটি সেন্টারে ভিড় জমতে শুরু করেছিল। আমার কাছে খুব অ্যাট্রাক্টিভ হল, একজন সুপারস্টার ভালবাসা তো পায়ই, কিন্তু তার প্রতিদানে যে কমিটমেন্ট ফিরিয়ে দেয়, সেটা চাক্ষুষ করা।
অনেকেই হয়তো জানেন না, মিস্টার খানের মিউজিক সেন্স খুব ভাল। সঙ্গে উনি নানা রকমের সিডি নিয়ে ঘোরেন। তার মধ্যে ক্ল্যাসিকাল থেকে পপ সব রকম রয়েছে। যার যেমন পছন্দ, সে রকম গান বাজান। মিস্টার খানের সেন্স অব হিউমার যে দুর্ধর্ষ সবাই জানে। কিন্তু আমার মনে হয়, ওঁকে আরও একটা গুণ বেশি আকর্ষণীয় করে। সেটা হল, এত বড় আইকন হয়েও যখন তখন নিজেকে কঠিন পরীক্ষায় ফেলে ‘ভালনারেবল’ হওয়ার ঝুঁকি নিতে পারা। এতটা ভঙ্গুর
অবস্থায় নিজেকে নিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি ভাবাই যায় না।
ফিল্মস্টার না-হলে মিস্টার খান কী হতেন? আমি জানি না। এটুকু বলতে পারি, ক্যামেরার সামনে না এলেও জীবনের অন্য যে কোনও শাখায় উনি সুপার সাকসেসফুল হতেন।
আমি কল্পনাই করতে পারি না, যে মানুষের এ রকম ড্রাইভ, সে একটা কিছু করছে, আর তাতে মিডিওকর হয়ে শেষ করছে! শাহরুখ খানের ডিএনএ-টাই আসলে আলাদা। |
|
|
|
|
|