নাড়ির টানে দ্বিধা ঠেলে মেয়েকে মানলেন মা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জয় হল মাতৃহৃদয়ের। নাড়ির টানের।
দু’-দু’বারের ডিএনএ পরীক্ষায় শিশুটি তাঁর বলে প্রমাণ হলেও তাকে নিজের মেয়ে বলে মানতে চাননি সরওয়ারি বেগম। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছিল, কোনও শিশুই পরিত্যক্ত হতে পারে না। মা না-নিলে ওই শিশুকন্যার দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্য সরকারকেই। রক্তের টান অবশ্য মাকে শেষ পর্যন্ত মুখ ঘুরিয়ে থাকতে দিল না। সরওয়ারি বুধবার উচ্চ আদালতে জানান, মেয়ে তাঁরই। তাকে ফিরিয়ে নিচ্ছেন তিনি। স্বস্তির শ্বাস পড়ে আদালত কক্ষে। জন্মের পর থেকে সাত মাস হোমে থাকা শিশুকন্যাটি এ বার মায়ের কোল পাবে।
বিচারপতির প্রশ্নের জবাবে সরওয়ারি জানান, আর জি কর হাসপাতালে তাঁর প্রসব হয়। হাসপাতাল জানায়, তাঁর মেয়ে হয়েছে। কিন্তু ওই মহিলার দাবি, তাঁর ছেলে হয়েছিল, তিনি তাকে দেখেওছিলেন। পরে শিশু বদলে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ ডিএনএ পরীক্ষা করান। তাতে মেয়ের সঙ্গে মায়ের মিল পাওয়া যায়। কিন্তু সরওয়ারি এবং তাঁর স্বামী আব্দুল আদি হাইকোর্টে মামলা করেন। হাইকোর্ট ফের ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ দেয়। মঙ্গলবার হাইকোর্টে তার রিপোর্ট জমা পড়ে। সেই রিপোর্টেও জানানো হয়, মা ও মেয়ের মিল পাওয়া গিয়েছে। সরওয়ারি তার পরেও বলেন, তাঁর ছেলেই হয়েছিল।
হাইকোর্ট মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টা সময় দেয়। এক রাতের লড়াইয়ে জয় হয়েছে মাতৃহৃদয়ের। বুধবার হাইকোর্টে হাজির হয়ে সরওয়ারি জানিয়ে দেন, তিনি মেয়েকে মেনে নিচ্ছেন। মায়ের এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেন বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। শিশুটি কেমন থাকছে, বছরে অন্তত এক বার সেই ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
প্রশ্ন উঠেছে, সরওয়ারি সাত মাস ধরে মেয়েকে নিতে চাননি কেন?
ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে রাজ্য সরকারের জিপি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় আগের দিন নিজের পারিবারিক অভিজ্ঞতার কথা বিচারপতিকে শোনান। তাঁর পিসিমার এক মেয়ে ছিল। পরে আবার মেয়ে হওয়ার খবর শুনে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জিপি-র বক্তব্য ছিল, ডিএনএ টেস্টের পরেও হয়তো অন্য কোনও চাপে মা-বাবা শিশুটিকে মানতে পারছেন না। অশোকবাবু এ দিন বলেন, শেষ পর্যন্ত সরওয়ারি যে মেয়েকে ফিরিয়ে নিলেন, এটা স্বস্তির ব্যাপার।
|