হয়রানি রুখতে প্রশিক্ষণ মেয়ে পুলিশদের
দিন কয়েক আগে অফিস থেকে ফেরার পথে এক যুবক কুৎসিত ইঙ্গিত করেছিল ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশকর্মী রনিতা সিকদারকে। কী ভাবে প্রতিবাদ করবেন, সে দিন বুঝতে পারেননি রনিতা। দ্রুত পায়ে বাড়ি ফেরেন। বুধবার ব্যারাকপুর লাটবাগানে পুলিশ ট্রেনিং কলেজে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে ইভটিজিং প্রতিরোধের কর্মশালায় এসে রনিতা সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, “প্রায়ই রাস্তায় আমার মতো বহু মেয়েকে অসম্মানিত হতে হয়। অনেকে অভিযোগও করে না।”
মেয়েদের এই সব সমস্যার কথা মাথায় রেখেই প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে উদ্যোক্তা সংস্থাটি। অন্যতম প্রশিক্ষক, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ঋদ্ধি দত্ত জানায়, ক্যারাটে-কুংফু নয়, চার দিনের শিবিরে স্রেফ হাত ও আঙুলের ব্যবহারে আত্মরক্ষার সহজ কিছু কৌশল শেখানো হচ্ছে মেয়েদের। এ দিনের প্রারম্ভিক শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন প্রায় একশো জন মহিলা পুলিশ কর্মী। তাঁদের অনেকেই বললেন, নিয়মিত এমন প্রশিক্ষণের আয়োজন হলে রাস্তাঘাটে মহিলা পথচারীদের তো বটেই, তাঁদের নিজেদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার কাজও অনেক সহজ হবে।
ইমারজেন্সি ফোর্স লাইনের কনস্টেবল বৈশাখী চৌধুরী বলেন, “ইভটিজিংয়ের প্রতিরোধ দূর অস্ৎ, কোনও গণ্ডগোল হলে সেটা ঠেকানোর প্রশিক্ষণই ঠিক মতো নেই আমাদের। তাই এ রকম শিবির মাঝেমাঝে হওয়া দরকার।”
ব্যারাকপুর লাটবাগানে চলছে প্রশিক্ষণ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।
এক সময়ে ব্যারাকপুর পুলিশ ট্রেনিং কলেজে পুলিশ কর্মীদের আত্মরক্ষার একটি প্রক্রিয়া শেখানো হত। তিন বছর ওই ক্লাস চললেও শেষ পর্যন্ত তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে এ দিনের কর্মশালায় যে ধরনের কসরত শেখানো হল তা অত্যন্ত সহজ বলেই শিক্ষার্থী পুলিশ কর্মীরা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটি ইতিমধ্যেই রাজ্যের ১৯টি জেলায় বেশ কয়েকটি মেয়েদের স্কুলে বিনা পারিশ্রমিকে এ ধরনের প্রশিক্ষণ শুরু করেছে। বুধবার লাটবাগানে মহিলা পুলিশের প্রশিক্ষণ শিবিরেও বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষিকা-ছাত্রীরা গিয়েছিলেন। শিক্ষিকাদের অনেকে আবার ট্যাব বা মোবাইলে প্রশিক্ষণ পদ্ধতির ছবি তুলে নিয়ে যান। পানিহাটি সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের টিচার ইন-চার্জ পামেলা পাল বলেন, “আমার তো মনে হয়, সব মেয়েদেরই এটা দেখা উচিত, শেখা উচিত। অত্যন্ত সহজ কতগুলি প্রক্রিয়া। আর সেটা জানা থাকলেই মনের জোর বাড়বে। বিপদের মুখোমুখি হলে কোনও মেয়ে ভয় পাবে না।” নিজেদের স্কুলেও এ ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন বলে জানালেন তিনি। লাটবাগান হাইস্কুলের শিক্ষক সুপ্রিয় রায়চৌধুরী কিছুটা সময় প্রশিক্ষণ দেখার পরে নিজেই স্কুল থেকে ছাত্রীদের ডেকে আনেন। ওই স্কুলের ছাত্রী শর্মিষ্ঠা রায়, প্রিয়াঙ্কা ঘোষ, সঙ্গীতা সরকাররাও উৎসাহী।
প্রশিক্ষণ শিবিরের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর আত্রেয়ী দত্ত বলেন, “হাতের ক্ষিপ্রতা আর আঙুলের ব্যবহার করেও ছুরি বা ধারালো অস্ত্র নিয়ে আসা হামলাকারীকে ধরাশায়ী করা যায়। প্রাথমিক ভাবে সেটাই শেখানো হচ্ছে। এরপরে মনঃসংযোগ ও তাত্ত্বিক কিছু পাঠ দেওয়া হবে। মোট তিনটি ধাপ আছে প্রশিক্ষণের। চার দিনের প্রারম্ভিক প্রশিক্ষণের পরে শিক্ষার্থীরা আগ্রহ দেখালে বাকি দু’টি ধাপ শেখানো হয়।” স্কুলস্তর থেকে প্রশিক্ষণ শুরু করলেও এই প্রথম পুলিশকে এই কলাকৌশল শেখানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় সিংহও বিষয়টিতে আগ্রহী। তাঁর কথায়, “শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বোঝার পরেই ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের কথা ভাবা হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.