বারো মাসে তেরো পার্বনের শহর নবদ্বীপ প্রতি বছর রাসে দিন-দু’য়েক অন্ধকারে ডুবে থাকবে, এটাই ছিল দস্তুর। কারণ রাসের প্রমাণ সাইজের প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রার সময় রাস্তার উপরে ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তারে দুর্ঘটনা ছিল প্রায় প্রতি বছরের ঘটনা। তাই গত কয়েক বছর ধরে শোভাযাত্রারা সময়ে বিদ্যুৎ সংযোগই বন্ধ করা দেওয়া হয়। দিন দুয়েকের আগে সে বিদ্যুৎ ফেরে না। উৎসবের সময় তাই ঘুটঘুটে আঁধারই মেনে নিয়েছিল নবদ্বীপ। সেই অসহনীয় আঁধার থেকে মুক্তি দিতে চলতি মাস থেকে শুরু হয়েছে সমস্ত বিদ্যুৎবাহী তারকে ভূগর্ভস্থ করার কাজ।
নবদ্বীপের বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা অন্ধার রাস থেকে নবদ্বীপের ‘মুক্তি’ চাইছিলেন দীর্ঘদিন। তিনি সদ্য মন্ত্রী হওয়ায় শিকে ছিঁড়েছে। মূলক তাঁর উদ্যোগেই রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টণ নিগমের তত্ত্বাবধানে কুড়ি কোটি টাকা ব্যয়ে এই কাজ শুরু হয়েছে। সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে কুড়ি মাস। নিগমের মুখ্য বাস্তুকার দেবাশিস চৌধুরী বলেন, “পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ডের সবগুলিতেই ভূগর্ভস্থ তারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বন্টণ করা হবে। এর ফলে লো-ভোল্টেজের সমস্যাও থাকবে না। রাসেও অন্ধকারে ডুবে থাকতে হবে না নবদ্বীপকে।”
কীভাবে সম্পন্ন হবে এই কাজ? নিগমের রিজিওনাল ম্যানেজার সিদ্ধার্থ রায় বলেন, “শহরের ৫৫ কিলোমিটার হাই টেনশন লাইন এবং ১২৪ কিলোমিটার লো-টেনশন লাইন মাটির তলা দিয়ে টানা হবে। বর্তমানে নবদ্বীপ পুর এলাকায় ১৭০টি ট্রান্সফর্মার রয়েছে। তা আরও ৭৪টি বাড়ানো হবে। রাস্তার দু’পাশে এক মিটার গর্ত করে ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎবাহী তারের রাস্তা তৈরী করা হবে। বিদ্যুৎ সরাবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে এখনকার ১১ কেভি লাইনের সঙ্গে আরও ১১ কেভি লাইন আনা হচ্ছে। তিনি জানান, রিংম্যান নামে এক বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। ফলে কোথাও লাইনের কোনও ‘ফল্ট’ হলে ২০০ মিটার ব্যাসার্দ্ধ বাদে বাকি জায়গায় বিদ্যুৎ সরাবরাহে কোনও বিঘ্ন ঘটবে না।
যা দেখে পুণ্ডরীকাক্ষ বলছেন, “রাসের অন্ধকারে আলো ফুটবে, এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি নবদ্বীপের আর কী-ই বা হতে পারে!”
কিন্তু লাইন পাতার সময় রাস্তা খুঁড়লে নবদ্বীপ যে ‘ক্ষতবিক্ষত’ হয়ে যাবে? শহরবাসী ক্ষুব্ধ হবেন না তো? নবদ্বীপ পুরসভার পুরপ্রধান বিমানকৃষ্ণ সাহা আগাম আশ্বাস দিচ্ছেন, “পুরসভা ও শহরের সমস্ত মানুষ সর্বতোভাবে এ কাজের জন্য সাহায্য করবে।” |