বৃত্তিমূলক শিক্ষা
বেতন নেই, স্কুল ছাড়ছেন শিক্ষকেরা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্কুল শিক্ষকদের মাস পয়লা বেতনের আশ্বাস দিয়েছিলেন।
মুর্শিদাবাদ জেলার বৃত্তিমূলক শিক্ষার শিক্ষকেরা গত সাত মাস ধরে অবশ্য বেতন পাননি। রাজ্যের অন্যান্য জেলায় ছবিটা আরও করুণ। সেখানে বেশ বৃত্তিমূলক প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকেরা বেতনের মুখ দেখেননি আঠারো মাস কেউ বা প্রায় দু’বছর।
এক টানা গত পঁচিশ মাস বেতন পাননি এমনও স্কুলও রয়েছে। মুর্শিদাবাদের নবগ্রাম আছড়া জুুনিয়র হাই-মাদ্রাসা। সামনেই ঈদ। তারপরেই পুজো। বেতনহীন শিক্ষকদের উৎসবের দিনগুলোয় আদৌ ‘আলো’ ফুটবে কিনা তা নিয়ে ঘোর সংশয় কিন্তু কাটছে না এখনও।
কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন দফতরের আর্থিক সহায়তায় ২০০৫ সাল থেকে রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের সঙ্গে মুর্শিদাবাদ জেলাতেও বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু হয়েছিল। স্কুল-ছুট ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মূল স্রোতে ফিরিয়ে এনে কর্মসংস্থানের একটা উপায় বাতলে দেওয়াই ছিল এই শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আর্থিক স্বনির্ভর করতে স্কুল-ছুটদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু হয়। দশম শ্রেণির ক্ষেত্রে দু’বছরের এবং অষ্টম শ্রেণির ক্ষেত্রে ছ’মাসের কোর্স চালু রয়েছে এখনও।
রাজ্যে প্রায় তিন হাজার স্কুলে ওই পাঠক্রম চলছে। মুর্শিদাবাদ জেলার ১৫৫টি স্কুলে বৃত্তিমূলক শিক্ষা খাতায় কলমে এখনও চালু। কম্পিউটার, ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স, সিভিল, মেকানিক্যাল থেকে প্যারা-মেডিক্যাল, বিজনেস-কমার্স, বিভিন্ন বিষয়ে পড়ানোর জন্য চুক্তিভিত্তিক এবং আংশিক সময়ের শিক্ষকও নিয়োগ করা হয়। বৃত্তিমূলক শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা-ইংরেজির মত সাধারণ বিষয় নিয়েও পঠনপাঠনের জন্য ওই স্কুলগুলিতে প্রায় ১১০০ শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু বেতন নিয়ে টালবাহানা শুরু হওয়ায় গত দু’বছরে তাঁদের অনেকেই স্কুল ছেড়ে গিয়েছেন। ওই স্কুলগুলিতে বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা কমতে কমতে এখন ৮০০’র কম। প্রায় ৩০০ জন স্কুল ছেড়ে যাওয়ায় জেলার বিভিন্ন স্কুলে বৃত্তিমূলক শিক্ষার কোর্স বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
নিখিলবঙ্গ বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষক সমিতির মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক মিঠুন গোপের দাবি, “দীর্ঘ দিন বেতন না পেয়ে আর্থিক সঙ্ক ট থেকে মুক্তি পেতে গত ছ’মাসে দু’জন শিক্ষক আত্মহত্যা করেছেন।” শাসকদলের অনুমোদিত পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি বিনিময় দাসও বলছেন, “বৃত্তিমূলক শিক্ষা কোর্সে এখনও বহু শিক্ষক বেতন পাচ্ছেন না।” কেন?
কারিগরী শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের দাবি, “রাজ্যের তিন হাজার স্কুলে বৃত্তিমূলক শিক্ষা কোর্সের অধিকাংশই বেতন পেলেন আর মুর্শিদাবাদ জেলার শিক্ষকরা পেলেন না, এটা হতে পারে না।” কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন? তা অবশ্য স্পষ্ট করতে পারেননি মন্ত্রী।
বেতন না পাওয়ার দীর্ঘ তালিকায় রয়েছে রঘুনাথগঞ্জ-২ ব্লকের গিরিয়া উচ্চমাধ্যমিক স্কুল। সেখানে হেল্থ ওয়ার্কার বিভাগে এক জন শিক্ষক ছিলেন। দীর্ঘ দিন ধরে বেতন না পেয়ে তিনি চলে যাওয়ায় বৃত্তিমূলক শিক্ষা কোর্স বন্ধ। বহরমপুরের মণীন্দ্রনগর হাইস্কুলে সিভিল কনস্ট্রাকশন টেকনোলজি বিষয়টিও একই কারণে বন্ধ। থমকে যেতে বসেছে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পঠন পাঠন। উঠে যাওয়ার মুখে এমএন অ্যাকাডেমির অটোমোবাইল টেকনোলজি এবং খড়গ্রামের কান্দুরিয়া হাইস্কুলে কম্পিউটার শাখা।
গোকর্ণ প্রসন্নময়ী উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিমল কুমার দলুই বলেন, “বৃত্তিমূলক শিক্ষা কোর্সে আমার স্কুলে ১১ জন শিক্ষক রয়েছেন। গত ১০ মাস ধরে তাঁরা বেতন পাননি। তাঁরা স্কুল ছেড়ে গেলে কী করে আটকাবো!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.