|
|
|
|
বরাদ্দ পড়ে, তবু কাজ হয়নি রাস্তার
নিজস্ব সংবাদদাতা • তমলুক |
কোথাও রাস্তা সংস্কারের কাজ হচ্ছে না। কোথাও সেতু ভগ্নপ্রায়।
কেন্দ্রীয় সরকারের ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন ও রাজ্য সরকারের তৃতীয় অর্থ কমিশন প্রতি বছর গ্রামীণ এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নে টাকা বরাদ্দ করা সত্ত্বেও তা খরচে গড়িমসির অভিযোগ উঠছে পূর্ব মেদিনীপুরে। এর জন্য তৃণমূল পরিচালিত বিদায়ী জেলা পরিষদের অদক্ষতাকেই দায়ী করছেন সিপিএম নেতৃত্ব। তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিরা আবার প্রশাসনিক অসহযোগিতার কারণেই টাকা খরচ হচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলছেন। রাজনৈতিক তরজা উড়িয়ে জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, “আসলে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন আমাদের জেলার পঞ্চায়েত প্রধানরা। কোন কাজ আগে হবে, কোনটা পরেতা-ই নির্দিষ্ট করে বলতে পারেন না। সময়মতো পরিকল্পনা করতে না পারায় আমাদের খুবই অসুবিধা হয়। বাঙালি আলস্যও কাজ করে অনেক সময়।” ওই আধিকারিকের মতে, “বাম আমলে দলের নেতাদের কাছে জবাবদিহি করতে হত জনপ্রতিনিধিদের। তৃণমূলের সেই ব্যবস্থা নেই। ফলে সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে।”
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন থেকে গত ২০১১-১২ আর্থিক বছরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা ৩২ কোটি ৫১ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা পেয়েছিল। কিন্তু ওই আর্থিক বছরে খরচ হয় মাত্র ২১ কোটি ২৯ লক্ষ ১১ হাজার টাকা। অর্থাৎ মোট বরাদ্দ অথের্র ৬৫ শতাংশ টাকা খরচ করতে পেরেছিল জেলার পঞ্চায়েতগুলি। একই ভাবে, ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে বরাদ্দ হয় ৩২ কোটি ৮৮ লক্ষ ৩ হাজার টাকা। আগের আর্থিক বছরের খরচ না হওয়া টাকা মিলিয়ে সে বছর মোট বরাদ্দ ছিল ৪৪ কোটি ১০ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা। কিন্তু ২০১২-১৩ আর্থিক বছরেও মোট অর্থের ৬২ শতাংশ টাকা খরচ হয়। |
হাউর স্টেশন থেকে কুমোরপুর যাওয়ার রাস্তা এমনই বেহাল। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস। |
গ্রামীণ এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজে রাজ্যের তৃতীয় অর্থ কমিশনও অর্থ বরাদ্দ করে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও প্রতিবছর বরাদ্দ অর্থের একটা বড় অংশ খরচ হচ্ছে না। ২০১১-১২ আর্থিক বছরে রাজ্যের তৃতীয় অর্থ কমিশন জেলার জন্য ৩৬ কোটি ৭ লক্ষ ১৩ হাজার টাকা টাকা বরাদ্দ করলেও তাঁর মাত্র অর্ধেক টাকা খরচ হয়েছিল। ২০১২-১৩ আর্থিক বছরে তুলনায় কিছুটা ভাল অবস্থা ছিল। গত বছর ওই খাতে জেলার জন্য বরাদ্দ অর্থের প্রায় ৯০ শতাংশ টাকা খরচ হয়েছে। প্রশাসনের একাংশের মতে, সামনে পঞ্চায়েত ভোট থাকার কারণেই গত অর্থবর্ষে গ্রামীণ উন্নয়নের কাজে গতি এসেছিল।
কাজে গতির পরেও অবশ্য পাঁশকুড়ার হাউর পঞ্চায়েত এলাকার আলুগ্রাম থেকে চৈতন্যপুর ২ পঞ্চায়েত এলাকার দুমদান পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার মোরাম রাস্তা বেহাল অবস্থায় রয়েছে। ওই রাস্তা দিয়ে এলাকার প্রায় কুড়িটি গ্রামের ছাত্রছাত্রী-সহ কয়েক হাজার লোক নিয়মিত যাতায়াত করেন। স্থানীয় বাসিন্দা প্রদীপ জানা, সুনীল সামন্ত, রবি আদকের অভিযোগ, “দীর্ঘদিন ধরে ওই মোরাম রাস্তা বেহাল। রাস্তার মেরামতি নিয়ে পঞ্চায়েতের কোনও তৎপরতা নেই। ফলে বর্ষায় রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে গিয়েছে।” সিপিএম পরিচালিত পাঁশকুড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির বিদায়ী সভাপতি ইন্দ্রনীল চক্রবর্তীর জবাব, “আমরা ওই রাস্তা সংস্কারের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। টাকা দেরিতে আসে। ইতিমধ্যে ভোটের নির্ঘণ্ট চলে এলে আর কাজ করা যায়নি।”
চণ্ডীপুর ব্লকের হাঁসচড়া বাজার থেকে গড়গ্রাম পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার মোরাম রাস্তায় মুরাদপুর গ্রামে খালের উপর কাঠের সেতুর জীর্ণদশা। স্থানীয় বাসিন্দা হিমাদ্রিনন্দন ভুঁইয়ার অভিযোগ, “ওই সেতুর মেরামতির জন্য কয়েক মাস আগে পঞ্চায়েত সমিতির কাছে জানানো হলেও এখনও কাজ হয়নি।”
জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি সিপিএমের নিরঞ্জন সিহি অভিযোগ, “একের পর এক এই ঘটনাই প্রমাণ করছে জেলা পরিষদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় ঘাটতি রয়েছে। পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে তৃণমূলের জন প্রতিনিধিদের দুর্বলতাও এজন্য দায়ী। বরাদ্দ অর্থ খরচ না হওয়ায় পরবর্তী আর্থিক বছরগুলিতে অতিরিক্ত অর্থ পাওয়া যাচ্ছে না।” অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা পরিষদের বিদায়ী সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন বলেন, “গ্রামীণ উন্নয়নের কাজে পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের কোনও দুর্বলতা নেই। পঞ্চায়েতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর প্রশাসনের আধিকারিকদের একাংশের অসহযোগিতার কারণে কাজে দেরি হচ্ছিল। এছাড়াও বরাদ্দ টাকা পেতে দেরি হওয়ার ফলেও সময়মতো কাজ করা যায়নি।” |
|
|
|
|
|