নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের বোর্ড প্রেসিডেন্ট পদে ফেরার সম্ভাবনা বিশাল ঝটকা খেল বুধবার। শ্রীনিবাসন সমর্থকদের বিরাট আশা ছিল বম্বে হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে বোর্ড যে রিট পিটিশন পেশ করেছিল, তা এ দিন সুপ্রিম কোর্টে মঞ্জুর হবে। কোর্ট হয় খারিজ করে দেবে বম্বে হাইকোর্টের রায়। অথবা স্থগিতাদেশ দেবে। অথবা বোর্ডের রিট খারিজ করে বোর্ডকে নতুন তদন্ত কমিটি গড়ার সুযোগ দেবে। তিনটের একটাও না ঘটায় মামলা ঝুলে থাকল। সেপ্টেম্বরে বোর্ড নির্বাচন বলে এখনই রায় দিয়ে দেওয়া হোক এমন প্রার্থনা করেছিল বোর্ড। আদালত বলেছে এটা তোমার কাছে জরুরি হতে পারে। আমাদের কাছে নয়। উচ্ছ্বসিত বিহার ক্রিকেট সংস্থার সচিব আদিত্য বর্মা রাতে নয়াদিল্লি থেকে আনন্দবাজারকে ফোনে বললেন, “আর কী? এর পরেও কি সন্দেহ আছে শ্রীনিবাসনের শেষের শুরু হয়ে গেল?”
সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ বিহার ক্রিকেট সংস্থাকে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে বিসিসিআইয়ের পিটিশনের বিরুদ্ধে তাদের জবাব জানাতে বলেছে। পরের শুনানির দিন ধার্য হয়েছে ২৯ অগস্ট। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, বিহার সংস্থা ওই দিনের মধ্যে জবাব দিতে বিশেষ উৎসাহ দেখাবে না। তারা কালক্ষেপ করবে। যত দেরি করবে, তত চাপে ফেলে দেবে শ্রীনিবাসনকে। তাঁর নির্বাচন তত কাছে চলে আসবে। আপাতত প্রাথমিক ভাবে স্থির আছে মুম্বইয়ে সাধারণ নির্বাচন ২৮-২৯ সেপ্টেম্বর। নির্বাচনের দিন তিনেক আগে নমিনেশন দিতে হবে। শ্রীনি-বিরোধী পক্ষের স্ট্র্যাটেজি আপাতদৃষ্টিতে হল, দেরি করিয়ে করিয়ে তাঁকে নির্বাচনের যোগ্যতা অর্জনই করতে না দেওয়া।
রাতে জগমোহন ডালমিয়া অবশ্য বললেন, “এমন কোনও বিধি নেই যে, নির্বাচন সেপ্টেম্বরের শেষেই করতে হবে। এক্সট্রাঅর্ডিনারি পরিস্থিতিতে তা পেছোতেও পারে।” শ্রীনি-সমর্থকেরা তবু প্রফুল্ল হওয়ার কোনও কারণ অবশ্য এ দিন পাচ্ছেন না। আগামী সপ্তাহেই সুপ্রিম কোর্টে শ্রীনি-র বিরুদ্ধে প্রাক্তন বোর্ড প্রেসিডেন্ট মুথাইয়ার মামলা উঠছে। যার বিষয়, বোর্ড প্রধান হয়েও আইপিএল টিমের মালিক থাকা। অর্থাৎ কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট। মঙ্গলবার আবার মাদ্রাজ হাইকোর্টে তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন এবং সেই সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শ্রীনি-র বিরুদ্ধে কড়া রায় হয়েছে। রাতে শ্রীনি সম্পর্কে সহানুভূতিশীল ভারতীয় ক্রিকেটমহলের এক মুখ বললেন, “বেচারি একটা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে।”
শ্রীনি-বিরোধীরা অবশ্যই একমত নন। তাঁদের মনে হচ্ছে, যে ভাবে গত কয়েক বছর কাজকর্ম চলেছে, তাতে এই পরিস্থিতিটা আসারই ছিল। আদালতে মামলা থাকাকালীনই তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ২.২ ধারা নিয়ে। বিহার ক্রিকেট সংস্থার পক্ষে আইনজীবী নলিনী চিদম্বরম এ দিন বলেন, “তিন সদস্যের প্যানেলটা কে ঠিক করল সেটাই তো প্রশ্ন।” বেঞ্চ তখন বলে, দু’জন বিচারকই তো দেখছি চেন্নাইয়ের। নলিনী বলেন, “সেটাই তো সমস্যা।” এর আগে গত ৩০ জুলাই বম্বে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল, কমিশন ঠিক করে গঠন করা হয়নি। বিসিসিআইয়ের ২.২ ধারা অনুযায়ী আইপিএল কোড অব বিহেভিয়ার কমিটির এক সদস্যের সেখানে থাকা উচিত ছিল। বোর্ড তাদের পিটিশনে বলেছে, এই নিয়ম নাকি সম্প্রতি তারা বদলেছে এবং বম্বে হাইকোর্টে পেশ করতে ভুলে গিয়েছিল। সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করে বিহার ক্রিকেট সংস্থা দেখায় সাম্প্রতিক কোনও বৈঠকের অ্যাজেন্ডাতেই নিয়ম বদলানোর ব্যাপারটা ছিল না। এটা সর্বৈব মিথ্যে।
শ্রীনি-র পক্ষে থাকা একাধিক বোর্ড সদস্য আশা করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টে এ দিন একটা ‘রোমাঞ্চকর কামব্যাক’ ঘটবে। সেটা না ঘটায় মুষড়ে পড়ে তাঁরা কেউ কেউ বলে যাচ্ছেন, এখনও খেলার অনেক বাকি আছে। আদিত্য বর্মা অবশ্য ঘোষণা করে দিলেন, “ভারতের যাবতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা আজ ভীষণ খুশি। বিশ্বের যে প্রান্তে যারা ক্রিকেট ভালবাসে তারাই খুশি। কারণ আজকের পর শ্রীনি এক রকম চলে গেল।”
|