একের পর এক গন্ডারের চোরাশিকার, জঙ্গলে জঙ্গি নাশকতার ঘটনায় উদ্বিগ্ন মানস জাতীয় উদ্যান কতৃর্পক্ষ। জঙ্গিদের গতিবিধি বন্ধ না-করা হলে ‘আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংস্থা’ ওই জঙ্গলে কাজ না-করার ঘোষণাতেও আশঙ্কা বেড়েছে বনকর্তাদের। এই পরিস্থিতির মধ্যেই গতকাল বাঁশবাড়িতে ফের একটি গন্ডারের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।
২০১১ সালে ‘বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্র’ হিসেবে মনোনীত হয় মানস। কাজিরাঙা এবং পবিতরা জঙ্গল থেকে বন্য এবং প্রতিপালিত গন্ডার সেখানে পাঠানো হয়। শাবক প্রসব করে তিনটি প্রতিস্থাপিত গন্ডার। কিন্তু গত বছর থেকেই ফের ছবিটা বদলাতে শুরু করে। একের পর এক চোরাশিকার শুরু হয় মানসের বিভিন্ন রেঞ্জে। গুলি করে মেরে ফেলার পর ওই সব গন্ডারের খড়্গ, পা, লেজ, কানও কেটে নেয় দুষ্কৃতীরা।
এ সব ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল সুরেশ চাঁদ। গন্ডারের চোরাশিকারে রক্ষীদের গাফিলতি বা অন্তর্ঘাত রয়েছে কি না, মানসের অধিকর্তা অনিন্দ্য স্বরগোয়ারিকে তা তদন্ত করে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, মানস জঙ্গলকে বাঁচাতে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ও তৈরি করা হচ্ছে।
মানস অরণ্যের সুরক্ষার দায়িত্ব রয়েছে অনেকের হাতে। প্রাক্তন জঙ্গি, চোরাশিকারিদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বনরক্ষী হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। তা ছাড়া, বন বিভাগের রক্ষী, ‘অসম ফরেস্ট প্রোটেকশন ফোর্স’ এবং এসএসবি জওয়ানরাও নজরদারি চালান। তবে, তাঁদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ওই সমস্যা মেটাতে সম্প্রতি পুলিশ, এসএসবি ও বনকর্তারা বৈঠক করেছেন।
রাজ্য সরকার এবং মানস কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে আন্তর্জাতিক বন্যপ্রাণী সংস্থাটি জানিয়েছে, পরিস্থিতি এমনই থাকলে অসমে ‘রাইনো ভিসন ২০২০’ (২০২০ সালের মধ্যে রাজ্যে ৩০০০টি গন্ডার) প্রকল্পটি সফল হবে না। উদ্যানের ভিতরে জঙ্গি গতিবিধি রয়েছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার উন্নতি না-হলে তাঁদের পক্ষে জঙ্গলে সংরক্ষণের কাজ চালানো সম্ভব হবে না। ওই সংস্থাটি জানিয়েছে, তাঁদের কর্মীদের হুমকি দিচ্ছে বড়ো জঙ্গিরা। টাকাও দাবি করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, বাঘ সুমারির সময় ওই সংস্থার ৬ কর্মীকে অপহরণ করেছিল এনডিএফবি জঙ্গিরা। এনডিএফবি-র ধীরেন বড়ো ও রঞ্জন দৈমারি গোষ্ঠী আলোচনার পথে হাঁটলেও সংবিজিৎ গোষ্ঠী মানস সংলগ্ন কোকরাঝাড়, চিরাং, উদালগুড়ি, শোণিতপুর, দরং, বঙাইগাঁও ও অরুণাচল প্রদেশে সক্রিয়। নাশকতার পাশাপাশি তারা তোলাবাজি, চোরাশিকার চালাচ্ছে। |