কেরোসিনে ছুটছে অটো, ধোঁয়ায় মুখ ঢাকছে কুলটি
বৈধ নথি নেই। বৈধ জ্বালানি নেই। কেরোসিন তেলে চলা অটোর দাপট বেড়েই চলেছে কুলটি পুর এলাকায়।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কুলটি পুর এলাকায় যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হল অটো। ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া শহরগুলিতে সহজে যাতায়াতের জন্য অটোর উপরেই ভরসা করেন এলাকার মানুষ। সব মিলিয়ে প্রায় হাজার খানেক অটো রিক্সা এই এলাকায়। যাদের অধিকাংশেরই বৈধ কোনও কাগজপত্র নেই। ঝাড়খন্ড থেকেও প্রতিদিন কুলটিতে ঢোকে বেশ কিছু অটো। সেই অটোগুলোও বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই এলাকায় ঘুরে বেরাচ্ছে। আরও উদ্বেগের কথা, প্রায় সব অটোই চলছে কেরোসিনে। ফলে দূষণ বাড়ছে এলাকায়। যে কোনও দিন বরাকর, ডিসেরগড়, চিনাকুড়ি, কুলটি, নিয়ামতপুর এলাকায় গেলেই দেখা যাবে, কালো ধোঁয়ায় চারপাশ অন্ধকার করে দিব্যি ছুটছে অটো।
শহর দাপাচ্ছে অটো। ছবি: শৈলেন সরকার।
এই ধরনের অটোর দাপট সব থেকে বেশি বরাকর এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, সব জেনেও কোনও পদক্ষেপ করছে না প্রশাসন। অথচ বৈধ নথি না থাকায় রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। বরাকর বণিকসভার সভাপতি গিরিধারীলাল অগ্রবালের অভিযোগ, “আমরা প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।” একই অভিযোগ বরাকর নাগরিক কমিটির সদস্য শুভময় চক্রবর্তীর। কেরোসিন চালিত অটোর দূষণে অসুস্থ হচ্ছেন এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় চিকিৎসক অরুণ জেমসের কথায়, “এতে শিশু ও বয়স্করা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগ হচ্ছে। কমে যাচ্ছে দৃষ্টিশক্তিও।
আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (ট্রাফিক) সুরেশ কুমার চাডিয়া বলেন, “আমরা প্রশাসনিক পর্যায়ে সমস্যাগুলি দূর করার বিষয়ে বৈঠক করেছি। সিদ্ধান্ত হয়েছে, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া যে সব অটো কেরোসিনে চলছে সেগুলির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।” কিন্তু ‘পদক্ষেপ করার’ ক্ষেত্রে অন্যতম সমস্যা হল ‘রাজনৈতিক চাপ’, বলছে পুলিশেরই একাংশ।
কমিশনারেটের এক আধিকারিক আক্ষেপ করেন, তাঁরা এর আগে ওই অটোগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও সমস্যা মেটেনি। কারণ, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় প্রতিটি অটো চালকই কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তাই ‘শ্রমিক স্বার্থ’ রক্ষায় ডান-বাম—সব সংগঠনই এক সুরে কথা বলছে। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কথা স্বীকার করেছেন এডিসিপি (ট্রাফিক)-ও।
শ্রমিক নেতাদের অবশ্য দাবি, বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে এ ব্যাপারে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে তাঁদের আপত্তি নেই। আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত অটো চালক ইউনিয়নের সভাপতি রবিন লায়েক বলেন, “সরকার ও পুর কর্তৃপক্ষের কাছে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানানো হয়েছে। আগে সেই ব্যবস্থা হোক।” আইএনটিইউসি অনুমোদিত অটো চালক ইউনিয়নের সভাপতি হারাধন মণ্ডলের কথায়, “এই অটোগুলি বন্ধ হলে চালকেরা কর্মহীন হয়ে পড়বেন। তাঁদের সংসার চলবে কী করে, আগে সেই কথা ভাবা হোক।” সিটু অনুমোদিত অটো চালক ইউনিয়নের নেতা সুজিত ভট্টাচার্য বলেন, “পরিবেশ দূষণ ও সরকারের রাজস্ব ক্ষতি বন্ধ হোক, তা আমরাও চাই। কিন্তু যাঁরা কর্মহীন হবেন, তাঁদের বিকল্প আয়ের কথাও ভাবা হোক।”
বিকল্প কর্মসংস্থানের বিষয়েও শ্রমিক সংগঠনগুলির নেতাদের দাবি এক। তাঁরা জানিয়েছেন, আসানসোল ও দুর্গাপুর পুরসভার মতো কুলটি পুর এলাকাতেও সিএনজি গ্যাসের অটো চালানো হোক। সেই অটো কেনার জন্য পুর কর্তৃপক্ষের কাছে সহজ কিস্তিতে ব্যাঙ্ক ঋণের ব্যবস্থার দাবিও করেছেন তাঁরা। কুলটির পুরপ্রধান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় জানান, মিলিত প্রস্তাব এলে পুর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.