|
|
|
|
সংসদে ক্ষমা চান অ্যান্টনি, দাবি বিজেপির |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সংসদের চলতি বাদল অধিবেশনে বিরোধীদের সঙ্গে সমন্বয় গড়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করাতে চেয়েছিল কংগ্রেস। পুঞ্চের হামলায় পাঁচ জওয়ানের মৃত্যুর পর সেই পরিকল্পনার ভবিষ্যৎ আপাতত অন্ধকার। প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ কে অ্যান্টনি তাঁর বিবৃতিতে পাক সেনাকে ক্লিনচিট দিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে আজ সংসদে ফেটে পড়ল বিজেপি। দিনভর অচল রইল দুই কক্ষ। প্রধান বিরোধী দল দাবি করে, সংসদে এসে ক্ষমা চাইতে হবে অ্যান্টনিকে। আওয়াজ ওঠে ‘শেম শেম’, ‘কংগ্রেস কে হাত, পাকিস্তান কে সাথ!’ এমনকী ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীর পর্যন্ত টুইটারে লেখেন, “কাগজে পড়লাম, শুধু এই বছরে পাকিস্তান ৫৭ বার সংঘর্ষবিরতি ভেঙেছে। আর আমরা এখনও তাদের বিশ্বাস করছি। কী তামাশা!’
পুঞ্চে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে গত কাল পাঁচ জওয়ান নিহত হওয়ার পর সেনা দাবি করে, পাক সেনা ও জঙ্গিরা একজোট হয়ে ওই হামলা চালিয়েছে। কিন্তু সংসদে অ্যান্টনি বলেন, “জঙ্গিদের সঙ্গে পাক সেনার পোশাক পরা কয়েক জনও ছিল।” তাঁর এই বিবৃতিকেই অস্ত্র করে বিজেপি। তাদের দাবি, ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিবৃতি বদলে দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর দফরের নির্দেশেই ওই বিবৃতি বদলনো হয়েছে বলেও কেউ কেউ দাবি করেন। প্রধানমন্ত্রীর দফতর আজ সেই দাবি ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে খারিজ করে দিয়েছে।
অ্যান্টনির বিবৃতি নিয়ে সংসদের শুরু থেকেই বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়ে সরকার। বিরোধী দলনেত্রী সুষমা স্বরাজ বলেন, “প্রতিরক্ষামন্ত্রী পাকিস্তানকে ক্লিনচিট দেওয়ার কে? তাঁকে সংসদে এসে ক্ষমা চাইতে হবে।” লোকসভায় সরব হয়ে সুষমা বলেন, “পাক সেনা এসে জওয়ানদের মুণ্ডচ্ছেদ করে চলে যাচ্ছে আর আমরা তাদের খুশি করার জন্য ছাড় দিচ্ছি! এটা চলতে পারে না।” সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে বৈঠকে লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ এবং অরুণ জেটলি ফের দাবি করেন, অ্যান্টনিকে সংসদে এসে ক্ষমা চাইতে হবে। পাশাপাশি তাঁদের মত, চলতি পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে কোনও রকম কূটনৈতিক শীর্ষ বৈঠক যেন না-করা হয়।
গোটা ঘটনায় কংগ্রেসের অস্বস্তি চরমে। প্রকাশ্যে অবশ্য বলা হচ্ছে, অ্যান্টনির সংসদে ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। বড়জোর আরও একটি বিবৃতি দিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করা হবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর যুক্তি, তাঁর কাছে যে তথ্য ছিল, গত কাল তা-ই তিনি পেশ করেছিলেন। সেনাপ্রধান ঘটনাস্থল থেকে ফিরলে তাঁর রিপোর্ট নিয়ে আগামিকাল ফের বিবৃতি দেবেন তিনি। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমলনাথ বলেছেন, “অ্যান্টনি দেশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন, এটা ভুল দাবি। সেই সময় তাঁর কাছে যা তথ্য ছিল, তার ভিত্তিতে তিনি বিবৃতি দিয়েছেন।” বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদও বলেন, “অ্যান্টনি যা বলেছেন, তা পরিস্থিতি বিচার করেই বলেছেন। এ নিয়ে দেশে রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হলে আখেরে ফায়দা তুলবে পাকিস্তান।”
ঘরোয়া ভাবে কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে যে চরম নেতিবাচক আবহাওয়া তৈরি হয়েছে, তা লোকসভা ভোটের আগে ক্ষতিকর। প্রতিরক্ষামন্ত্রী তাড়াহুড়ো করে যে বিবৃতিটি দিয়েছেন, তাতে ভাবনা-চিন্তার অভাব ছিল। আর বিজেপিও এই সুযোগ কাজে লাগাতে কসুর করছে না। ইতিমধ্যেই নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, “গোটা দেশের মানুষ চিৎকার করে জানতে চাইছে, কেন এমন হল। কিন্তু হিন্দুস্তান মাথা ঝুঁকিয়ে রয়েছে। এ আমাদের দুর্ভাগ্য। কেন্দ্র এর জন্য দায়ী।” এই পরিস্থিতিতে আপাতত এনডিএ জমানায় পাক অনুপ্রবেশ তথা সীমান্তে হামলার ঘটনাগুলি তুলে ধরার কৌশল নিচ্ছে সনিয়া গাঁধীর দল। বলা হচ্ছে, এনডিএ জমানার চেয়ে এখন অনেক শান্ত হয়ে গিয়েছে সীমান্তের পরিস্থিতি।
আজ অবশ্য যুব কংগ্রেসের কর্মীরা পাক হাইকমিশনের বাইরে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের সরাতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। ঘটনার জেরে পাক বিদেশ মন্ত্রক ইসলামাবাদের ভারতীয় হাইকমিশনারকে ডেকে পাঠায়। দিল্লির পাক হাইকমিশন ও সেখানকার কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বলা হয় তাঁকে।
|
পুরনো খবর: হঠাৎ পাক হামলায় কাশ্মীরে হত ৫ জওয়ান, উত্তাল সংসদ |
|
|
|
|
|