দিন পাঁচেক আগে হারিয়ে গিয়েছিল শিক্ষাগত ও জন্মের যাবতীয় শংসাপত্র। সে সবই শেষমেশ ফেরত পেয়েছেন কলকাতার ছাত্রী শর্মিষ্ঠা দত্ত। সৌজন্যে বিহারের অজ পাড়াগাঁয়ের এক দুধওয়ালা।
২ অগস্ট হিমগিরি এক্সপ্রেসে খোয়া যায় শর্মিষ্ঠার যাবতীয় শংসাপত্র সমেত ব্যাগ। তাঁর কামরায় (এস-১) হামলা চালায় ডাকাতেরা। অন্য মালের সঙ্গে সব শংসাপত্র হারিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন ওই ছাত্রী। তিনি যে সব ফেরত পাবেন, স্বপ্নেও ভাবেননি ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা শর্মিষ্ঠা।
বুধবার শর্মিষ্ঠা বলেন, “বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের এম এ -তে ভর্তির কাউন্সেলিং সেরে হিমগিরি এক্সপ্রেসে ফিরছিলাম। একটা বড় ব্যাগে আমার সিবিএসই -র দশম, দ্বাদশ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ অনার্স পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড, মার্কশিট এমনকী জন্মের শংসাপত্রও ছিল। ডাকাতেরা কামরার সব যাত্রীর অধিকাংশ জিনিস লুঠ করে। সব হারিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছিলাম। কী ভাবে সেগুলোর প্রতিলিপি জোগাড় করব, বুঝতে পারছিলাম না। ওই রাত থেকে আমার চোখে ঘুম নেই।”
|
শর্মিষ্ঠা দত্ত |
শর্মিষ্ঠার সব উদ্বেগের অবসান হয় ৪ অগস্ট রবিবার বেলা সাড়ে ১২টায় আসা একটি ফোনে। “একটি অচেনা নম্বর থেকে ফোন এল আমার মোবাইলে। হিন্দিতে এক জন জানতে চাইলেন, আমার পরীক্ষার সব শংসাপত্র হারিয়েছে কি না। ভাবলাম, পটনা রেল পুলিশ হয়তো ফোন করে ফের নিশ্চিত হতে চাইছে। কারণ, হাওড়া রেল পুলিশ যাত্রীদের অভিযোগ পটনা রেল পুলিশে পাঠিয়েছিল”, বললেন শর্মিষ্ঠা।
ফোন করেছিলেন অরুণ চৌধুরি নামে এক ব্যক্তি। পেশায় চিকিৎসক। বিহারের বাঢ় স্টেশনের কাছে পানডারাত গ্রাম থেকে তিনি ফোন করছেন বলে জানান শর্মিষ্ঠাকে। ছাত্রীর কথায়, “ওই ব্যক্তি বললেন, ৩ অগস্ট শনিবার সকালে উদিত সাহু নামে এক দুধওয়ালা একটি লোকাল ট্রেনের কামরায় পুরনো স্যুটকেস পান। তাতে জামাকাপড়ের সঙ্গে একটি কালো রঙের ফাইল ছিল। দুধওয়ালা স্যুটকেসটি পানডারাত গ্রামের বাসিন্দা ভগীরথ মহারাজের বাড়িতে নিয়ে এসেছেন। উদিত ওই বাড়িরই দুধওয়ালা।”
ভগীরথের বাড়ি থেকে ফাইল অরুণবাবুর হাতে কী ভাবে এল? শর্মিষ্ঠার দাবি, “অরুণবাবুই জানান, তিনি ভগীরথের স্ত্রীকে ইঞ্জেকশন দিতে এসেছিলেন। মহিলা স্যুটকেস খুলে তাঁর হাতে ফাইলটি দিয়েছেন। ফাইলে বেশ কিছু সার্টিফিকেট রয়েছে। যাতে শর্মিষ্ঠা দত্ত নামে এক জনের নাম লেখা।” শর্মিষ্ঠাকে ভগীরথের বাড়ি থেকে সব সার্টিফিকেট নিয়ে যেতে অনুরোধ করেন অরুণবাবু।
এর পরে পটনা রেল পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে শর্মিষ্ঠাকে বাঢ় রেল পুলিশ থানায় আসতে বলা হয়। রেল পুলিশ অরুণ চৌধুরীকে ফোন করে ভগীরথের বাড়ির ঠিকানা জেনে নেয়। শর্মিষ্ঠাকে তা জানানো হয়। ওই রাতেই বাবাকে নিয়ে দানাপুর এক্সপ্রেসে বাঢ় রওনা দেন শর্মিষ্ঠা। ৫ অগস্ট, সোমবার ভোরে শর্মিষ্ঠা ও তাঁর বাবা বাঢ় রেল পুলিশ থানায় পৌঁছন। ভগীরথ মহারাজের বাড়িতে পৌঁছনোর পরে শর্মিষ্ঠার হাতে ফাইল বন্দি সার্টিফিকেট তুলে দেওয়া হয়। সেখানে ছিলেন অরুণবাবুও।
কী করে শর্মিষ্ঠার নম্বর জানলেন তিনি? ওই চিকিৎসক এ দিন বলেন, “কাগজপত্র ঘেঁটে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কাগজ পাই। সেটি এমএ -তে ভর্তি হওয়ার আবেদনপত্র। তাতে শর্মিষ্ঠার ঠিকানা, ফোন নম্বর, ঠিকানা লেখা ছিল।” কিন্তু সার্টিফিকেট দিতে শর্মিষ্ঠাকে কলকাতা থেকে ডেকে না পাঠিয়ে পুলিশ মারফত ফেরত দিলেন না কেন? চিকিৎসকের জবাব, “যাঁর জিনিস তাঁর হাতেই তুলে দিতে চেয়েছি। অত মূল্যবান জিনিস অন্যের হাত দিয়ে পাঠাতে মন চাইছিল না।”
দুধওয়ালা উদিত কী বলছেন? “শনিবার ভোরে লোকাল ট্রেনে বাঢ় থেকে পান্ডারাত যাচ্ছিলাম রোজকার মতো। কামরা তখন ফাঁকা। যে সিটে বসেছিলাম, তার উল্টোদিকের আসনের নীচে দেখি একটা রংচটা সুটকেস। সেটা বাড়ি নিয়ে এসে ছেলেকে দিয়ে খোলালাম। জামাকাপড়ের সঙ্গে দেখি কালো একটা ফাইল। তাতে অনেক কাগজ। দেখে মনে হল, জরুরি কিছু। ভগীরথ মহারাজের লেখাপড়া জানা মেয়ে অমৃতা বুঝবে। তাই ওদের দেখাই।”
শর্মিষ্ঠা যে সব ফেরত পেয়েছেন, তাতেই মন ভরে গিয়েছে উদিতের। তাঁর মন্তব্য, “জীবনে এমন আনন্দ আর কখনও পাইনি।” |