ভোটের মুখেই দল পাল্টালেন পুরপ্রধান
দুবরাজপুরের সদ্য প্রাক্তন পুরপ্রধান কংগ্রেসর পীযূষ পাণ্ডে জনা চারেক দলীয় কাউন্সিলরদের নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। এই গুঞ্জনটা ছড়িয়েছিল শহরে। এও শোনা যাচ্ছে ‘দলবিরোধী কাজ ও দল ভাঙার ষড়যন্ত্রের জন্য পীযূষ পাণ্ডেকে দল থেকে বহিষ্কার করা হল’। বুধবার বিকেলে রামপুরহাটে কংগ্রেসের দলীয় কার্যালয়ে সংবাদিক সম্মেলন করে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি-র এই ঘোষণা কার্যত তাতে শিলমোহর দিল। জিম্মির এই ঘোষণার পরেই তৃণমূল সূত্র থেকেও স্বীকার করা হয়েছে, আনুষ্ঠিক ভাবে আজ বৃহস্পতিবার দুবরাজপুরে পীযূষবাবুরা তাদের দলে যোগ দেবেন।
পীযূষ পাণ্ডে। —নিজস্ব চিত্র
বুধবার বিকেলে পীযূষবাবুর বিরুদ্ধে কংগ্রেসের জেলা সভাপতি শুধু দল বিরোধী কাজের আভিযোগই তোলেননি, এ কথাও বললেন, “তৃণমূল কিছুদিন আগে ওঁর বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির আভিযোগ তুলেছিলেন। এখন মনে হচ্ছে সেই ভয়েই তৃণমূলের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি।” যদিও সৈয়দ সিরাজ জিম্মি-র তোলা অভিযোগ মানেননি পীযূষ পাণ্ডে। তাঁর ব্যাখ্যা, “আমি তিন বারের জন্য দুবরাজপুরের পুরপ্রধানের পদ সামলেছি এবং উন্নয়নই একমাত্র লক্ষ্য ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কংগ্রেস দলে থেকে সেই উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। সেটা বুঝতে পেরেই দলবদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আমার শুভানুধ্যায়ী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি ওঁরাও সেটা চান।” আর দল থেকে বহিষ্কারের প্রশ্নে পীষূষবাবুর জবাব, “বহিষ্কার করার আগে বুধবার সকালেই আমি নিজেই আমার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি।” এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া, “কংগ্রেস দলের আছে টা কী! যে কাউকে বহিষ্কার করবে।”
সামনেই রাজ্যের যে কটি পুরসভায় নির্বাচন দুবরাজপুর একটি। আর এই পুর-নির্বাচনের আগেই দুবরাজপুর শহরে কংগ্রেস দলের ‘মুখ’কে এ ভাবে দল বদল করতে দেখে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করছে বিভিন্ন মহলে। কংগ্রেস তো বটেই। এমন কী সিপিএম, বিজেপি সকলেই বলছে, শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার লোভ আর সুবিধাবাদী রাজনীতির স্বার্থেই এটা করছেন প্রাক্তন কংগ্রেস পুরপ্রধান।
কেন? ব্যাখ্যাও তৈরি সকলের কাছে। ১৬টি ওয়ার্ড (গত বার ছিল ১৫টি)। গত দু’টি টার্মে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস পরিচালিত বোর্ড-ই। আর পুরপ্রধান ছিলেন পীযূষ পাণ্ডে এবং দু’ বারেই কংগ্রেস বিজেপি ও তৃণমূল জোট করে পুরসভার ক্ষমতায় থাকলেও কংগ্রেসের যথেষ্ট প্রতাপ ছিল দুবরাজপুরে। তৃমমূলের সেভাবে সংগঠন না থাকায় গত বারে তাদের সংগ্রহে ছিল ১টি আসন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশেষ করে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কংগ্রেসের গাঁটছড়া ভেঙে যাওয়ার পর এ বার পুর-নির্বাচনে সমানে সমানে লড়াই হওয়ার কথা ছিল কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে। এ জন্য দু’ পক্ষই একে আপরের বিরুদ্ধে দিন কয়েক আগে পর্যন্ত কাদা ছোড়া ছুড়ি করেছে। এমনকী পুরসভা সভাকক্ষে অনুব্রত মণ্ডলরা কংগ্রেসের পুরপ্রধানকে ‘চোর’ আখ্যা দিতেও ছাড়েননি। ক্ষমতাসীন বোর্ডের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন বসানোরও হুমকী দিয়েছিলেন রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। পাল্টা সভা করে জবাব দিতে ছাড়েনি কংগ্রেসও। সেই দলেই পীযূষ পাণ্ডে যোগ দেবেন খবর পেয়ে সিপিএম এবং একদা জোটসঙ্গী বিজেপির বক্তব্য, সুবিধাবাদী রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই না। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অবশ্য প্রসঙ্গ এড়িয়ে অনুব্রতবাবু বলেন, “এখন বৈঠকে আছি পরে বলছি।” আর যে দুবরাজপুরবাসীর কথা ভেবে দলবদল, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক পুরবাসী বলছেন, “এতে পুরনির্বচনটাই কার্যত একপেশে হয়ে গেল। যাঁরাই তৃণমূলের পক্ষে দাঁড়াবেন তাঁদেরকে বেছে নেওয়া ছাড়া অন্য উপায় তেমনটা খোলা রইল না। কারণ, দুবরাজপুর পুরসভায় সিপিএম বিজেপি এবং দল ভেঙে যাওয়ার পর কংগ্রেসের প্রতিরোধ গড়ার সেই শক্তি কোথায়?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.