টিভি ও বিভিন্ন প্রোডাকশন হাউসে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে প্রতারণার অভিযোগ উঠল দুর্গাপুরে। শহরেরই কয়েকজন যুবক বুধবার মহকুমাশাসকের দফতরে এই অভিযোগ জমা দিয়েছেন। মহকুমাশাসক কস্তুরি সেনগুপ্ত অবশ্য এখনও অভিযোগপত্র হাতে পাননি বলে জানিয়েছেন। তবে ওই যুবকদের কাছ থেকে সমস্যার কথা সরাসরি শোনার আগ্রহ দেখিয়েছেন তিনি।
বুদবুদের ষষ্ঠী দাস, জিৎ দাস, অমরগড়ের প্রদীপ পাল এবং বর্ধমানের বিপুল রায়রা জানান, তাঁরা প্রোডাকশন হাউস ও টিভির বিভিন্ন কাজে পারদর্শী। কেউ স্ক্রিপ্ট লিখতে পারেন, কেউ অভিনয় করেন, কেউ কারিগরি কাজ জানেন আবার কেউ বা কোরিওগ্রাফি করেন। তাঁদের অভিযোগ, বুদবুদের বাসিন্দা জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুজিতকুমার ঘোষ এবং কলকাতার প্রাঞ্জল সরকার তাঁদের টিভিতে কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধাপে ধাপে মোট ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৭০০ টাকা নিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত দিয়ে দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বছর খানেক ধরে তাঁরা কোনও যোগাযোগ রাখছেন না। ষষ্ঠীবাবুর দাবি, “আমি ও আমার ভাইয়ের কাছ থেকে ওরা প্রায় দেড় লক্ষ টাকা নিয়েছে। তার মধ্যে মাত্র সাড়ে ১৭ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছে।” তিনি আরও জানান, শুধু জেলা নয়, ভিন জেলা থেকেও অনেকে টাকা দিয়েছেন। মোট ১৯ জনের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রদীপবাবু জানান, তিনি ৩৮ হাজার টাকা দিয়েছেন। বিপুলবাবুর দাবি, তাঁকে একটি টিভি শো-তে কাজ পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ৪ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। |
বুধবার দুর্গাপুর আদালত চত্বরে অভিযোগকারীরা।—নিজস্ব চিত্র। |
তবে যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাঁদের একজন, বুদবুদের জয়দীপ বন্দ্যোপাধ্যায় টাকা নিয়ে কাজ না পাইয়ে দেওয়ার এই অভিযোগ মানতে চাননি। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। একটি বাংলা টিভি চ্যানেলের কমেডি শো-তে যোগদানকারী জয়দীপবাবুর দাবি, ওই শো-র চ্যাম্পিয়ন প্রাঞ্জলবাবু, সুজিতবাবু, তিনি ও আরও কয়েকজন মিলে একটি প্রোডাকশন হাউস গড়ার পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনায় স্থানীয় এবং বাইরের কয়েকজনও সামিল হন। প্রাঞ্জলবাবুর বাড়িতেই অফিস খোলা হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে যে খরচ হয় তাঁর সবটাই সবাই মিলে ভাগ করে নিয়েছিলেন বলেও তিনি জানান। একটি বাণিজ্যিক ছবির স্ক্রিপ্ট লেখা, টাইটেল সঙ্গীত বানানো, সেই ছবির প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেওয়া-সহ আনুষঙ্গিক আরও বহু কাজও এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু যে আর্থিক সংস্থা সাহায্য করবে বলে এগিয়ে এসেছিল সারদা কান্ডের পরে তারা পিছিয়ে যায় বলে জয়দীপবাবুর দাবি। এরপরেই তাঁদের পরিকল্পনা কার্যত ভেস্তে যায়। রোজকার খরচ মেটাতে বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার নেওয়া হয়। তাঁদেরই কয়েকজন বুধবার অভিযোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন জয়দীপবাবু। এ দিন তিনি বলেন, “যাঁরা আজ অভিযোগ করছেন তাঁরাও পরিকল্পনার অংশীদার। আমাদের নিজেদের টাকাও গিয়েছে। প্রোডাকশন হাউসটি বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছি। সেই টাকায় সবার প্রাপ্য অর্থ মিটিয়ে দেওয়া হবে।”
অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, বুদবুদ থানায় প্রাথমিক ভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা। যদি শীঘ্র টাকা ফেরত না পান তাহলে ওই তিনজনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন। পুলিশ জানিয়েছে, জয়দীপবাবুকে ডেকে পাঠিয়ে সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |