ঝাঁ চকচকে শপিং মল। ইতিউতি ভিড় ব্যস্ত ক্রেতার। সাউন্ড বক্সে মৃদু সুরে বাজছে মন ভাল করা কোনও গান। কিন্তু এই মধ্যেই দেওয়ালে টাঙানো প্রাণ বাঁচানোর অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে বিপদ।
ঘিঞ্জি এলাকায় আগুন লাগলে কী পরিমাণ ক্ষতি হতে পারে, তার উদাহরণ ভুরি ভুরি। বছরখানেক আগে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আগুন লেগে মৃত্যু হয়েছিল অনেকের। প্রমাণ হয়েছিল, শুধু ঘিঞ্জি এলাকা নয়, আগুনের ভ্রুকূটি রয়েছে পাঁচতারা বাড়িতেও। তার পরে দমকল বিভাগ থেকে রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছিল ধরপাকড়। প্রতিটি বাণিজ্যিক ভবনে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়। নিয়ম মেনে অনেক জায়গায় যন্ত্র বসানো হলেও প্রশ্ন উঠেছে তার কার্যকারিতা নিয়েই। কারণ, বেশিরভাগ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রই মেয়াদ উত্তীর্ণ।
গত কয়েক বছরে ক্রমশ আধুনিক হয়েছে দুর্গাপুর শহর। গড়ে উঠেছে শপিং মল ও বাণিজ্যিক আবাসন। সেখানে আপৎকালীন অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা হিসাবে রাখা হয়েছে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র। কিন্তু অভাব রয়েছে নজরদারির। যন্ত্রগুলির অনেকগুলিরই সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। ফলে যদি কোনও কারণে আগুন লাগলে সেগুলি কোনও কাজেই লাগবে না। |
মেয়াদ লেখার জায়গা অসম্পূর্ণ। সিটিসেন্টারের এক মলে নিজস্ব চিত্র। |
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, কার্বন ডাই অক্সাইড ভর্তি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রে লাগানো থাকে একটি হাতল। হঠাৎ আগুন লাগলে সেই হাতলে চাপ দিলেই তীব্র বেগে বেরিয়ে আসে গ্যাস। নিয়ন্ত্রনে আসে আগুন। দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে পুরসভার একটি নিজস্ব শপিং মল রয়েছে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বেশির ভাগ অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রে মেয়াদের তারিখ লেখা জায়গাটাই ফাঁকা। আবার একটির মেয়াদ উর্ত্তীণ হয়েছে গত ১৭ মার্চ।
দুর্গাপুরের একটি শপিং মলে বাজার করতে আসা সুদীপা রায় জানালেন, “আমি তো প্রায়ই এখানে বাজার করতে আসি। সুন্দর শান্ত পরিবেশ। এখন অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানার পর সত্যিই ভয় হচ্ছে।” একই ছবি দেখা গিয়েছে বিধাননগর চত্বরে একটি কমপ্লেক্সেও। সেখানেও মেয়াদ ফুরানো অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র দিব্যি সাজানো রয়েছে দেওয়ালে।
শপিং মল কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই বিষয়ে কথা বলতে নারাজ। তবে দমকলের আধিকারিকেরা অবশ্য বিষয়টি নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ গোপন রাখেননি। দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, শপিং মলের মত আধুনিক সুবিধা যুক্ত বড় বাড়িতে ছোটখাট শর্ট সার্কিট হতেই পারে। সে ক্ষেত্রে অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রই আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করবে। কিন্তু সেগুলো যদি মেয়াদ উর্ত্তীণ হয়, তাহলে বিপদের সম্ভবনা থেকেই যায়।
দমকল দফতরের বিভাগীয় আধিকারিক তুষারকান্তি সেন বলেন, “বার্ষিক লাইসেন্স নবীকরণের সময় ওই যন্ত্রগুলির মেয়াদ খতিয়ে দেখা হয়। মাঝে মাঝে অভিযানও চালানো হয়। তারপরেও কিছু এই ধরণের ত্রুটি রয়ে যায়।” দফতরে কর্মী সংখ্যা ও পরিকাঠামোর অপ্রতুলতার কারণে ঘন ঘন অভিযান চালানো সম্ভব হয় না বলে স্বীকার তিনি এই বিষয়ে আরোও সচেতন হওয়ার কথা জানিয়েছেন। |