এক দিকে গোয়েন্দা শাখার বহু পদ খালি। অন্য দিকে পাহাড়ের অধিকাংশ থানা থেকে তেমন ‘সহযোগিতা’ মিলছে না।
তাই দার্জিলিঙে বাহিনী মজুত থাকলেও কোথায়, কী ভাবে হিংসা দানা বাঁধছে, সে খবর সব সময়ে প্রশাসনে পৌঁছচ্ছে না। সমস্যার সুরাহায় দার্জিলিং ও জলপাইগুড়িতে জরুরি ভিত্তিতে ছ’শো ‘সিভিক পুলিশ’ নিচ্ছে রাজ্য। ঘুরে ঘুরে গোপন খবর জোগাড় করাই হবে যাঁদের আসল কাজ। একই সঙ্গে তাঁদের দিয়ে গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেলের(জিএলপি) কাজ-কারবারে নজরদারিও প্রশাসনের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে মহাকরণ-সূত্রের খবর। যদিও এতে কাজের কাজ কতটা হবে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। |
ধৃত মোর্চা-সমর্থকদের শিলিগুড়ি নিয়ে যাওয়ার সময় পথ আটকে বিক্ষোভ।
মঙ্গলবার, দার্জিলিঙের ডালিতে। ছবি: রবিন রাই। |
পুলিশকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, পাহাড়ে গোয়েন্দা-পুলিশ বাহিনীতে (আইবি) একেই লোক কম। যাঁরা আছেন, তাঁরা অধিকাংশই স্থানীয় বাসিন্দা। নতুন করে আন্দোলন দানা বাঁধার পরে ওঁরা কার্যত হাত গুটিয়ে বসে গিয়েছেন। “ফলে দার্জিলিং-জলপাইগুড়ির প্রান্তে প্রান্তে আন্দোলন সংগঠিত করতে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা কী কৌশল নিচ্ছে, তা ঠিকঠাক জানা যাচ্ছে না।” আক্ষেপ করেছেন এক পুলিশকর্তা। গোয়েন্দা-নজরদারি চাঙ্গা করতে আইবি-র ডিজি জিএমপি রেড্ডিকে ইতিমধ্যে পাহাড়ে পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সোমবার রাজ্য পুলিশ-কর্তৃপক্ষেরর তরফে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরে পাঠানো হয়েছে পাহাড়ে সিভিক পুলিশ নিয়োগের ওই প্রস্তাব। মহাকরণের এক কর্তার কথায়, “অর্থ দফতর সায় দিলেই ওখানকার সমস্ত থানায় সিভিক পুলিশ নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি টাঙিয়ে দেওয়া হবে। এসপি ঠিক করবেন, কাদের নিয়োগ করা হবে।” সিভিক পুলিশকর্মীরা দৈনিক ১৪২ টাকা পারিশ্রমিক পাবেন।
এ হেন সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করে স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা বলেন, “আশির দশকের মাঝামাঝি দার্জিলিঙে জিএনএলএফের আন্দোলন চলাকালীন তৎকালীন ডিআইজি (দার্জিলিং) আর কে হান্ডা বহু স্থানীয় ছেলেকে অস্থায়ী ভাবে পুলিশে নিয়োগ করেছিলেন। ফলও পেয়েছিলেন হাতে-নাতে।” পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, পাঙ্খাবাড়ি যাওয়ার পথে লংভিউ পুলিশ ক্যাম্পে ওই যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। পরে তাদের খবরের ভিত্তিতে বিক্ষোভকারীদের ধরপাকড় শুরু করেছিল তৎকালীন বাম সরকার। এমনকী, তল্লাশি অভিযানেও ওই ‘ঠিকা-গোয়েন্দা’দের সঙ্গে নিয়ে যেত পুলিশ। সে সময় দার্জিলিঙে কাজ করে আসা এক অফিসারের দাবি, “আন্দোলনের জেরে সিপিএমের যে সব কর্মী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন, তাদের পরিবার থেকেই এ ভাবে লোক নেওয়া হয়েছিল। দলের স্বার্থেই প্রশাসনকে নিয়মিত খবর জোগাতেন তাঁরা।”
কিন্তু বর্তমান প্রশাসনের পদক্ষেপে সন্তোষজনক ফল মিলবে কি?
মহাকরণের অন্দরেই প্রশ্নটা উঠছে। কর্তাদের একাংশের মতে, মোবাইলের জমানায় বিক্ষোভকারীরা যেখানে মুহূর্তে ছক পাল্টে ফেলছে, সেখানে তিন দশক পুরনো কৌশল খাটানো শক্ত। এক কর্তার প্রশ্ন, “এই মুহূর্তে পাহাড়ের রাশ পুরোটাই মোর্চার হাতে। বহু সরকারি অফিস বন্ধ, পুলিশের গতিবিধি নিয়ন্ত্রিত। নেতাদের ডাকে নিমেষে শ’য়ে শ’য়ে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। এ অবস্থায় ক’জন পাহাড়বাসী লাইনে দাঁড়িয়ে পুলিশের চাকরির ফর্ম ভরবেন? প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে খবর দেবেন?” তা ছাড়া পারিশ্রমিকের লোভে কেউ কাজ নিলেও আসল খবর কতটা দেবেন, তা নিয়ে সন্দিহান প্রশাসনের অনেকে।
পাহাড়ে ইতিমধ্যে দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে তিনশো সিভিল পুলিশকে ট্র্যাফিকে লাগানো হয়েছে। ইদানীং তাঁদের অনেকেই কাজে যাচ্ছেন না বলে পুলিশি সূত্রের খবর। |