দার্জিলিংকে ফের উত্তপ্ত করে তোলা গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার আন্দোলন মোকাবিলায় অন্যান্য জেলা থেকে আরও মহিলা পুলিশ পাহাড়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য। বেশ কিছু মহিলা হোমগার্ডও পাঠানো হবে।
মহাকরণে পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্য: আগের মতো এ বারও মোর্চা নেতৃত্ব আন্দোলনের সামনে রাখছেন মহিলা ব্রিগেড-কে। আবার গোয়েন্দা-রিপোর্ট বলছে, মোর্চার পরিকল্পনা হল পুলিশ-প্রশাসনকে এমন কোনও হঠকারী সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা, যার জেরে পাহাড় জুড়ে অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে দেবে তারা। বস্তুত, পুলিশের হাতে আন্দোলনের পুরোভাগে থাকা মহিলাদের ক্ষতি হলে সাধারণ মানুষকে খেপিয়ে তোলা তুলনায় সহজ হবে বলে গোয়েন্দাদের অভিমত। |
শিলিগুড়ি আদালতের পথে গরুবাথান থেকে ধৃত জিএলপি-র মহিলা সদস্যরা। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
এ প্রসঙ্গে গোয়েন্দারা ২০১১-র ফেব্রুয়ারিতে মালবাজারের শিপচুতে পুলিশ-মোর্চা সংঘর্ষের ঘটনার উল্লেখ করছেন। শিপচুতে মোর্চা-সমর্থকদের প্রথম সারিতে রাখা হয়েছিল মহিলা ব্রিগেডকে। গোয়েন্দা-রিপোর্ট অনুযায়ী, মোর্চা এ বারও চাইছে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে, যাতে আন্দোলনের সামনের সারিতে থাকা মহিলাদের ক্ষতি হয়, আর সেই সুযোগে তারা তুলকালাম বাঁধিয়ে দিতে পারে।
এবং এই প্রেক্ষাপটেই পাহাড়ে মহিলা পুলিশের সংখ্যাবৃদ্ধির উদ্যোগ। স্বরাষ্ট্র দফতরের তথ্যানুযায়ী, দার্জিলিঙে বর্তমানে এক কোম্পানি মহিলা সিআরপিএফ মোতায়েন। সঙ্গে আছেন রাজ্য পুলিশের জনা সত্তর মহিলা কর্মী। বাড়তি পুলিশ, হোমগার্ড পৌঁছলে পাহাড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ মিলিয়ে মোটামুটি শ’তিনেক মহিলা নিরাপত্তাকর্মী থাকবেন বলে পুলিশ-সূত্রের দাবি। অন্য দিকে মহিলা জিএলপি-র সংখ্যা শ’পাঁচেক, নারী মোর্চার সদস্য কুড়ি হাজারের বেশি। তিনশো পুলিশ দিয়ে এত জনের মোকাবিলা সম্ভব?
রাজ্য পুলিশের আইজি পদমর্যাদার এক অফিসার বলেন, “জিএলপি কিংবা নারী মোর্চার সদস্যেরা পুলিশের মতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। জনতাকে সামলাতে কখনও সমান পুলিশ লাগে না।” তবে পাহাড়ের বাস্তব পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে বাড়তি মহিলা পুলিশ মোতায়েনের বাধ্যবাধকতা তিনি মানছেন। “গোয়েন্দা-সূত্রে মোর্চার যা পরিকল্পনার কথা আমরা জানতে পারছি, তাতে সেখানে আরও মহিলা পুলিশ দরকার। রাজ্যের অন্যান্য জেলা থেকেই তা সরবরাহ করা হবে।” বলেন তিনি।
কিন্তু রাজ্যের অন্যত্র মোতায়েন মহিলা পুলিশদের তুলে পাহাড়ে পাঠানোর আগে অনেক কিছু ভাবতেও হচ্ছে পুলিশ-কর্তাদের। কী রকম?
পুলিশ-সূত্রের ব্যাখ্যা: থানাগুলোয় এমনিতেই মহিলা পুলিশের সংখ্যা কম। যেখান থেকেই মহিলা পুলিশ নিয়ে যাওয়া হোক, সেখানেই ঘাটতি দেখা দেবে। তা ছাড়া পাহাড়ের সঙ্গে সমতলের পরিবেশ-পরিস্থিতির বিস্তর ফারাক। জলবায়ু থেকে জীবনযাত্রা, মানসিক গঠন থেকে শারীরিক বৈশিষ্ট্য সব কিছুতেই অমিল। আরও বড় সমস্যা ভাষা। পাহাড়ের ভাষার সঙ্গে রাজ্যের বাকি অংশের ভাষার কোনও মিল নেই।
তাই সমতলের মহিলা পুলিশকর্মীরা পাহাড়ে গিয়ে সেখানে চটজলদি কী ভাবে খাপ খাওয়াতে পারবেন, তা নিয়েও সংশয়ে কর্তারা। স্বরাষ্ট্র দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, “এটা সমস্যা বইকি। তবে ওখানে যে সব মহিলা পুলিশকর্মী আগে থেকে রয়েছেন, নতুনেরা গিয়ে তাঁদের কাছে সহায়তা পেতে পারবেন। উপরন্তু পাহাড়ের ভাষা জানেন, সেখানে আগে কাজ করেছেন এবং ওখানকার জলহাওয়ার সঙ্গে পরিচিত, এমন সব মহিলা পুলিশকে বাছাই করা হচ্ছে।” এতে সমস্যা কিছুটা হলেও কমবে বলে আশাবাদী তিনি। |