হাওড়া জেলায় সার্বিক ভাবে তৃণমূলের ফল ভাল হলেও সাঁকরাইল ব্লকের বেশ কিছু পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে চলে গিয়েছে।
কয়েক মাস আগে হাওড়া সদর লোকসভা উপনির্বাচনে দক্ষিণ হাওড়া ও সাঁকরাইল ব্লক থেকে ‘লিড’ পেয়েছিল সিপিএম। এ বারের পঞ্চায়েত নির্বাচন তাই তৃণমূলের কাছে অনেকটাই অস্তিত্বরক্ষার লড়াই ছিল এখানে। হাওড়ায় দীর্ঘদিন ধরেই জোড়াফুলের দুর্গ বলে পরিচিত সাঁকরাইল ব্লকে পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় তাই উদ্বিগ্ন ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ।
সাঁকরাইল ব্লকে মোট ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত। তার মধ্যে এ বার সিপিএম পেয়েছে ৬টি ও তৃণমূল পেয়েছে ৯টি। একটি পঞ্চায়েতে (মাণিকপুর) সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে বিজেপি।
বাণীপুর ২, মাশিলা, নলপুর, সাঁকরাইল ও দক্ষিণ সাঁকরাইল— এই পাঁচটি পঞ্চায়েত এ বার তৃণমূল ও তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে সিপিএম। গতবারের পঞ্চায়েত ভোটে আন্দুল গ্রাম পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল তৃণমূল ও কংগ্রেস। প্রধান ছিলেন কংগ্রেসের। যদিও সদস্যদের ভোট কাটাকাটিতে উপপ্রধান পদটি পেয়েছিল সিপিএম। এ বার তা পুরোটাই সিপিএমের দখলে। অন্য দিকে, সিপিএমের হাত থেকে এ বার তৃণমূল ছিনিয়ে নিয়েছে ঝোড়হাট ও ধূলোগোড় পঞ্চায়েত দু’টি। সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতিতেও টানটান লড়াইয়ে জিতেছে তৃণমূল।
জোড়া ফুলের দুর্গে পাঁচটি পঞ্চায়েত কী ভাবে হাতছাড়া হল?
ব্লক তৃণমূল সূত্রে জানানো হয়েছে, সাঁকরাইল ব্লকের নলপুর, মাশিলা ও দক্ষিণ সাঁকরাইল-সহ বেশ কিছু পঞ্চায়েতে কংগ্রেস ভাল ভোট পেয়েছে। কিন্তু তৃণমূল ও কংগ্রেস জোট না হওয়ায় ভোট কাটাকাটিতে ওই পঞ্চায়েতগুলিতে জিতেছে সিপিএম। আবার সাঁকরাইল, বাণীপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে দলের গোষ্ঠীকোন্দলই এমন খারাপ ফলের কারণ বলে মনে করছে স্থানীয় তৃণমূলের একাংশ। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই পঞ্চায়েতগুলিতে অনেক আসনেই তৃণমূল বনাম বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের মূল লড়াই ছিল। আন্দুল পঞ্চায়েতের একটি আসনে যেমন তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন নির্দল প্রার্থী সুদীপ্ত রায় ওরফে শম্ভু। তিনি বলেন, “দলের একাংশ টিকিট বিলির সময়ে স্থানীয় কর্মীদের গুরুত্ব দেননি। তার প্রতিবাদ করতেই প্রার্থী হয়েছিলাম। মানুষ সেই প্রতিবাদকে সমর্থন করেছেন। তবে আমি এখনও দিদির ভক্ত। নেতৃত্ব চাইলে তৃণমূলকেই সমর্থন করব।”
তবে ফল খারাপ হয়েছে— এমনটা মানতে চাননি সাঁকরাইলের তৃণমূল নেতৃত্ব। ব্লক তৃণমূল সভাপতি প্রণব ভট্টাচার্য ও ব্লক তৃণমূল ছাত্র পরিষদ সভাপতি তুষারকান্তি ঘোষের মতে, “সংগঠনের কিছু দুর্বলতা ছিল ঠিকই। তবে এই প্রথম সাঁকরাইল ব্লকে আমরা কংগ্রেসকে ছাড়া লড়লাম। সেই হিসেবে আমাদের ফল অনেক ভাল।” সাঁকরাইলের তৃণমূল বিধায়ক শীতল সর্দার বলেন, “বেশ কিছু বুথে আমরা খুব কম ভোটে হেরেছি। কিছু জায়গায় নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি ছিল। তবে লোকসভা উপনির্বাচনের তুলনায় আমাদের ফল ভাল হয়েছে। সামনের লোকসভা ভোটে আরও ভাল হবে।”
সাঁকরাইলের ফলে স্বভাবতই খুশি সিপিএম। শুধু তাই নয়, বাণীপুর ২ পঞ্চায়েতে গতবার যেখানে একটি আসনও পায়নি সিপিএম, সেখানে তারা এ বার বোর্ড গঠনের অবস্থায় রয়েছে। দলের ৬ নম্বর জোনাল কমিটির সম্পাদক নন্দলাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “আগে যে জায়গায় তৃণমূল অথবা জোট ক্ষমতায় ছিল, সেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভোট পড়েছে।” |