ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির দু’টি পৃথক অভিযোগে গোঘাট এবং শ্রীরামপুরে দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পৃথক একটি ঘটনায় নাবালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে এক ব্যক্তিকে পেটায় জনতা। তাঁকে উদ্ধার করে আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে পুলিশ।
স্বামীবিচ্ছিন্না বছর চল্লিশের এক মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগে এক বৃদ্ধকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে গোঘাটের শ্যামবাজার গ্রামের মোরাম রাস্তার গায়ে বাঁশগেড়ে নামে একটি পুকুর পাড়ে। রাতে ঘটনাস্থল থেকে ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই রাতেই গ্রেফতার করা হয় বছর পঁয়ষট্টির বৃদ্ধ শক্তি লাহাকে। ধৃতের দাবি তাঁকে মারধর করা হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে। এর পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছে বলে অভিযোগ করেছেন ধৃতের ছেলে। মঙ্গলবার আরামবাগ আদালতে তোলা হলে বিচারক ধৃতকে ১৪ দিনের জেলহাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
ওই মহিলার অভিযোগ, শক্তিবাবু তাঁকে আরামবাগের কোনও একটি নার্সিংহোমে কাজ জুটিয়ে দেবেন বলেছিলেন। সোমবার বিকেলে শক্তিবাবুর কথা শুনেই গোঘাটের বাসিন্দা ওই মহিলা আরামবাগ আসেন। রাত ৯টা পর্যন্ত বহু চেষ্টা করেও কাজের ব্যবস্থা হয়নি। রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ সাতবেড়ে বাস স্টপেজে নেমে তিনি দেখেন শক্তিবাবু সাইকেল নিয়ে সেখানে হাজির। সাইকেলে করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। মহিলার দাবি, বাঁশগেড়ে পুকুরের কাছে আসতেই সাইকেল থামিয়ে তাঁর মুখে হাত চাপা দিয়ে পুকুর পাড়ে ফেলে ধর্ষণ করেন ওই ব্যক্তি। চিৎকারে লোক জুটে যায়। খবর পেয়ে বদনগঞ্জ ফাঁড়ির পুলিশ মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
শক্তিবাবুর ছেলে হেমন্তর অভিযোগ, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ‘নোংরা অপবাদে’ জড়ানো হয়েছে তাঁর বাবাকে। হেমন্ত বলেন, “এক বছর আগে আমার কিছু টাকা ছিনতাই হয়। সাধন দে, শুভাশিস লাহা, গৌতম দাসদের নামে মামলা দায়ের করি। তারা গ্রেফতারও হয়। কিন্তু মামলা তুলে নেওয়ার জন্য আমাদের উপরে চাপ দেওয়া হচ্ছে।” হেমন্ত জানান, তাঁদের পরিবার তৃণমূল সমর্থক। দলের স্থানীয় নেতা নিতাই নন্দীর অনুগামী। অভিযুক্তেরা শেখ সাহাবুদ্দিনের ঘনিষ্ঠ। মহিলাকে ভয় দেখিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করানো হয়েছে বলে তাঁর দাবি। তৃণমূল নেতা সাহাবুদ্দিন বলেন, “এতে কোনও রাজনীতি নেই। চোখের সামনে নোংরামি হতে দেখেছে গ্রামের লোক। গ্রামে অশান্তির আশঙ্কা ছিল। আমরা দু’জনকেই পুলিশে তুলে দিয়েছিলাম।” নিতাইবাবু আবার বলেন, “পুলিশ তদন্ত করছে। আমাদের দাবি, প্রকৃত দোষীদের ধরা হোক।
অন্য একটি ঘটনায়, বিবাহবিচ্ছিন্না এক যুবতীর বাড়িতে ঢুকে দুই সন্তানের সামনেই তাঁর শ্লীলতাহানির অভিযোগে মঙ্গলবার এক যুবককে ধরে শ্রীরামপুর থানার পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে শ্রীরামপুরের তারাপুকুর এলাকায়। ধৃতের নাম সন্দীপ কর ওরপে পাপ্পু। তৃণমূলের দাবি, সন্দীপ ডিওয়াইএফ কর্মী। ডিওয়াইএফ অবশ্য তা মানেনি। মহিলার অভিযোগ, এর আগেও তাঁকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল ওই যুবক। স্থানীয় তৃণমূল নেতা পিন্টু নাগ বলেন, “মহিলাদের উপরে এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। পুলিশ তদন্ত করে দোষী যুবকের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নিক।” ডিওয়াইএফের হুগলি জেলা সম্পাদক তীর্থঙ্কর রায় বলেন, “ওই যুবক আমাদের কর্মী নন। সংগঠনকে কালিমালিপ্ত করার জন্যই মিথ্যা রটানো হচ্ছে।”
মঙ্গলবার বিকেলে অন্য একটি ঘটনা ঘটে গোঘাটের ব্রজমোহনপুরে। অভিযোগ, বছর দশেকের এক নাবালিকাকে নিজের বাড়িতে ডেকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করে বছর পঁয়তাল্লিশের এক ব্যক্তি। মেয়েটির চিৎকারে পাড়া-প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। ওই ব্যক্তিকে গণধোলাই দেওয়া হয়। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। মেয়েটির বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে জখম থাকায় রাত পর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়নি। |