আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের মুখ্য অর্থনীতিবিদ হিসেবে ২০০৮-এর বিশ্ব-মন্দার পূর্বাভাস দিয়েছিলেন তিনি। এ বার ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে অর্থনীতির সঙ্কটের মুহূর্তে তার হাল ফেরানোর চ্যালেঞ্জ হাতে নিচ্ছেন সেই রঘুরাম রাজন। যে সঙ্কট আসলে অনেকাংশেই উন্নত দুনিয়ার উপর এখনও ঘনিয়ে থাকা মন্দার মেঘেরই কালো ছায়া।
অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য উপদেষ্টার পদ ছেড়ে ডুব্বুরি সুব্বারাওয়ের জায়গায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তা হিসেবে ৫০ বছর বয়স্ক রাজনের নিয়োগের সরকারি ঘোষণার দিনই ঘটনাচক্রে টাকা ও শেয়ার বাজারের অস্থিরতা নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। আমেরিকার পরিষেবা শিল্পে বৃদ্ধির হার প্রত্যাশা ছাপিয়ে যাওয়ায় মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ আর্থিক ত্রাণ কাটছাঁট করে তার বন্ড কেনা কমিয়ে আনতে পারে বলে নতুন আশঙ্কা তৈরি হয় বৈদেশিক মুদ্রা ও শেয়ার বাজারে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নীতির জেরে সুদ বাড়ার দুশ্চিন্তাও জাঁকিয়ে বসে। ফলে মঙ্গলবার সকাল থেকেই পড়তে থাকে ডলারে টাকার দাম। এক সময়ে তা সোমবারের তুলনায় ৯২ পয়সা পড়ে ঐতিহাসিক নীচে নেমে দাঁড়ায় ৬১.৮০। এর আগে গত ৮ জুলাই প্রতি ডলারের দাম ছুঁয়েছিল ৬১.২২ টাকা, যা ছিল টাকার সর্বনিম্ন দর। আতঙ্ক গ্রাস করে শেয়ার বাজারকেও। এক ধাক্কায় তা পড়ে যায় প্রায় ৪৫০ পয়েন্ট। সেনসেক্স নেমে যায় ১৯ হাজারেরও নীচে। বাজারে লেনদেন হওয়া শেয়ারের মোট মূল্য দাঁড়ায় ৬০.১৮ লক্ষ কোটি টাকা। ডলারে যা ৯৮,৯০০ কোটি। অর্থাৎ ১ লক্ষ কোটি ডলার বাজার মূল্যের রাষ্ট্রগুলির তালিকা থেকে বেরিয়ে গেল ভারত।
তিন বছরের জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নয়া কর্ণধার হিসেবে রাজনের নাম ঘোষণার খবরেই অবশ্য ঘুরে দাঁড়ায় টাকা। দিনের শেষে তা পতন পুরোপুরি কাটিয়ে সোমবারের থেকে ১১ পয়সা বেড়েছে। ফলে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৬০.৭৭ টাকা। দিনে টাকার বৃদ্ধি আরও বেশি, ১০৩ পয়সা। নয়া কর্ণধার টাকাকে বাঁচাতে ব্যবস্থা নেবেন বলেই তাঁর উপর আস্থা রাখছে বাজার। তাঁর নিয়োগে এ দিন অনুমোদন দিয়েছেন মনমোহন সিংহ। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর অবসর নেবেন সুব্বারাও। তখনই দায়িত্ব নেবেন রাজন। নয়া কর্ণধার অবশ্য কিছুটা বিনয়ের সঙ্গে বলেন, “আমার হাতে কোনও জাদুদণ্ড নেই, যাতে সব সময়্যা মুছে যাবে। তবে আরবিআই ও কেন্দ্র এক সঙ্গে কাজ করে সব সমস্যা মোকাবিলা করার দিকে এগোবে।” |