দিদি-বোনের সম্মান বাঁচাতে গিয়ে গণেশ মুর্মু খুন হওয়ার পর থেকেই দোষীদের শাস্তি চেয়ে ছোটাছুটি করছিল এক মামাতো জামাইবাবু।
পুলিশের কাছে অভিযোগপত্রে নিহতের বোনের টিপছাপ শনাক্ত করা থেকে অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে পথ অবরোধ জামাইবাবু আগাগোড়া সামনের সারিতে। মঙ্গলবার সকালে গণেশের বাড়ির লোকজনকে কাটোয়া থানায় নিয়ে আসার জন্য তাকেই ‘অনুরোধ’ করা হয়েছিল। খানিক জেরার পরে সেই জামাইবাবু মোস্তাফা শেখকেই গ্রেফতার করল পুলিশ।
শুধু মোস্তাফা নয়, তাকে জেরা করে ধরা হয়েছে দাঁইহাটেরই বেড়া গ্রামের কমল শিকদার ও কাটোয়ার গড়াগাছার হাবল শেখ নামে দুই দুষ্কৃতীকে। অভিযোগ, রবিবার ভোরে বর্ধমানের দাঁইহাটে পশ্চিম নসিপুর গ্রামে রাঙামাটি পুকুরের পাশে ঝুপড়িতে ঢুকে দুই আদিবাসী বোনকে ধর্ষণের চেষ্টা এবং বাধা দেওয়ায় গুলি করে তাদের ভাইকে খুন। বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) তরুণ হালদার বলেন, “তিন জনকেই বুধবার আদালতে তোলা হবে। আরও কিছু লোককে খোঁজা হচ্ছে।” |
প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল নিয়ে গণেশদের বাড়িতে গিয়ে দুপুরে মানস ভুঁইয়া অবশ্য দাবি করেন, “প্রকৃত সব অপরাধী এখনও গ্রেফতার হয়নি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তফসিলি জাতি-উপজাতি আইনের ধারা দিয়ে মামলা করতে হবে। প্রকৃত অবস্থা দেখে যাওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে আহ্বান জানাচ্ছি।” বিকেলে আদিবাসী পুরুষ-মহিলারা নিরাপত্তার দাবিতে কাটোয়া মহকুমাশাসকের অফিসে বিক্ষোভও দেখান।
জেলা পুলিশ নিশ্চিত, মোস্তাফাই দলের পান্ডা। আগেও চুরি-ডাকাতি, মেয়েদের দেহ ব্যবসায় নামানো, এমনকী ভিন্ রাজ্যে পাচারের ঘটনায় তার নাম এসেছে। কয়েক মাস আগে কাটোয়ারই টিকরখাঁজি গ্রামে বাড়িতে ঢুকে দুই আদিবাসী তরুণীকে ধর্ষণেও তার নাম এসেছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট অভিযোগ হয়নি। পুলিশের কাছে খবর, ‘লেবার কন্ট্রাক্টর’-এর নাম করে মোস্তাফা দাঁইহাট লাগোয়া নসিপুর-নলাহাটিতে দেহ ব্যবসার চক্র চালাত। শ্রমিকের কাজে নিয়ে যাওয়ার নামে আদিবাসী মহিলাদের ভিন্ রাজ্যে পাচারও করত। কয়েক মাস আগে এক মহিলাকে কাশ্মীরে পাচার করা হয়েছিল। বিভিন্ন দিক থেকে চাপ থাকায় পরে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও অভিযোগ হয়নি। |
জেলার এক পুলিশকর্তার কথায়, “গোড়া থেকেই মোস্তাফাকে সন্দেহ হচ্ছিল। কিন্তু নিহতের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় আমরা প্রথমেই তাকে ধরিনি।” তদন্তে সুবিধা করে দেন গণেশের ছোট বোন। পুলিশের দাবি, সোমবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তিনিই এমন কিছু তথ্য দেন, যাতে
ছবিটা পরিষ্কার হয়ে যায়। খুনের আগের রাতে দুষ্কৃতীরা যে আদিবাসী মহল্লায় গিয়ে গণেশের খোঁজ করেছিল, সেই খবর আগেই পুলিশের কাছে ছিল। এ দিন থানায় বসিয়ে জেরা করতেই মোস্তাফা কবুল করে, ওই রাতে দুই সঙ্গীকে নিয়ে মোটরবাইকে চেপে এলাকার অন্য আদিবাসী
মহল্লায় গিয়েছিল।
এর পরে পুলিশ আর তিন জনকে ধরতে দেরি করেনি। গোটা ঘটনায় হতভম্ব গণেশের মা গিনি মুর্মু বলেন, “মোস্তাফা আমাদের কাছের লোক। ওর কথাতেই আমরা চলতাম। ও কেন আমার ছেলেকে খুন করল? আমরা তো ভাবতেই পারছি না!” পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করতে গিয়েই গণেশ চক্ষুশূল হয়ে পড়েছিলেন। তবে পুলিশ আরও কিছু দিক খতিয়ে দেখছে। |
খুনের সকাল থেকেই আগাগোড়া এলাকার মানুষের ‘পাশে’ ছিল সিপিএম। কিন্তু ঘটনাচক্রে, মোস্তাফা ‘সিপিএমের লোক’ বলেই এলাকায় পরিচিত। তৃণমূলের অভিযোগ, তাকে আড়াল করতেই তারা পথে নেমে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছিল। সিপিএমের কাটোয়া জোনাল সদস্য জয়শ্রী চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “এ সব বাজে অভিযোগ। অপরাধী শাস্তি পাক, এটাই আমরা চাই।”
|