তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে জখম হলেন চার জন। জামুড়িয়ার নর্থ সিহারসোল কোলিয়ারি এলাকায় মঙ্গলবার সকালের ঘটনা। আহতেরা আসানসোল হাসপাতালে ভর্তি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, নর্থ সিহারসোল কোলিয়ারির তৃণমূল প্রভাবিত সংগঠন কেকেএসসি-র সহ-সভাপতি সুকুমার বাউড়ি ও সম্পাদক সুজিত তপাদারের অনুগামীদের মধ্যে বেশ কিছু দিন ধরেই গোলমাল চলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে ওই দুই নেতার মধ্যে ভাল সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বিরোধ বাধে বছরখানেক আগে নর্থ সিহারশোল খোলামুখ খনি চালু হওয়ার পর থেকে। ওই খোলামুখ খনির কয়লা চুরি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, কয়লা কারবারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়। মাঝে-মধ্যেই ছোটখাট গণ্ডগোল হতে থাকে। সুকুমারবাবুর নেতৃত্বে তৃণমূলের একটি অঞ্চল কার্যালয় গড়ার উদ্যোগকে কেন্দ্র করে বিবাদ চরমে ওঠে। |
নর্থ সিহারশোল খোলামুখ খনির কাঁটাঘরের ঠিক উল্টো দিকে একটি ফাঁকা জায়গায় পরিত্যক্ত ঘর ভেঙে মঙ্গলবার কার্যালয়ের ভিত তৈরি শুরু করার কথা ছিল সুকুমারবাবুদের। তিনি অভিযোগ করেন, সোমবার রাতে সুজিত তপাদারের নেতৃত্বে খোলামুখ খনির মাটি কাটার যন্ত্র এনে কার্যালয় গড়ার জন্য চিহ্নিত জায়গা প্রায় দশ ফুট খুঁড়ে দিয়ে যায়। সোমবার বিকেলে সুজিত তপাদার-সহ পাঁচ জন সুকুমার-ঘনিষ্ঠ নারায়ণ মণ্ডলকে আবাসন ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার হুমকি দেন বলে অভিযোগ। নারায়ণবাবু জামুড়িয়া থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, কার্যালয় নির্মাণে যুক্ত থাকায় ওই পাঁচ জন তাঁকে সাত দিনের মধ্যে আবাসন ছাড়তে বলেছে। অন্যথায় তাঁর পরিবার আক্রান্ত হবে বলেও হুমকি দিয়েছে।
সুকুমারবাবু ও তাঁর অনুগামীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার সকালে খুঁড়ে দেওয়া এলাকায় তাঁরা জড়ো হলে আচমকাই সুজিত তপাদার, লালু মাজিদের নেতৃত্বে এক দল লোক হামলা চালায়। মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া হয় বাবন সিংহ, তুষার সিংহ ও গোপাল বাউড়ির। হাত ভাঙে কাজল রায়ের। তাঁরা হাসপাতালে ভর্তি। বাবনবাবুরা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে জানান, তাঁরা অঞ্চল কমিটির কার্যালয় গড়ার জন্য জড়ো হলে সুজিতবাবুরা বাঁশ, রড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সুকুমারবাবুর অভিযোগ, “এলাকায় কয়লা, লোহা পাচারের রমরমা চলছে। আমরা কার্যালয় চালু করলে ওরা চুরি করতে পারবে না বলে মনে করছে।” তিনি জানান, ২৬ ফেব্রুয়ারি একটি কয়লা বোঝাই গাড়ি আটকায় কেন্দা ফাঁড়ির পুলিশ। সমীর খান, আলাউদ্দিন, কানাই বাউড়ি, বাবন মাজি এবং বাম সূত্রধরের বিরুদ্ধে ওই গাড়িতে কয়লা পাচারের মামলা দায়ের হয়েছিল। তারা আগে সিপিএমের হয়ে কাজ করলেও এখন সুজিত তপাদারের অনুগামী বলে সুকুমারবাবুর দাবি। |
সুজিতবাবুর পাল্টা দাবি, নর্থ সিহারশোলে দলের অঞ্চল কার্যালয় আছে। বাবন সিংহ, তুষার সিংহ, গোপাল বাউড়িরা পালানপুরের বাসিন্দা। কয়লা, লোহা চুরির মাধ্যমে রোজগারের উদ্দেশেই তারা গ্রাম ছেড়ে খোলামুখ খনির কাঁটাঘরের সামনে একটি অবৈধ কার্যালয় চালুর পরিকল্পনা করেছিল দাবি করে সুজিতবাবু বলেন, “সাতগ্রামের কয়েক জনও নর্থ সিহারশোলে অঞ্চল কার্যালয় চালুর উদ্যোগে সামিল হয়েছে। আমরা বুঝতে পারছি না, নিজের এলাকা ছেড়ে সবাই কেন এখানে কার্যালয় করতে চাইছেন।” সুকুমারবাবুর যদিও বক্তব্য, “অঞ্চল কার্যালয় থাকলেও ওই এলাকায় সংগঠনের কাজ করার জন্য আমাদের বসার কোনও জায়গা নেই। তাই ওই অফিস তৈরি করা হচ্ছে।”
সুজিতবাবুর আরও দাবি, নর্থ সিহারশোল, সাতগ্রাম, পালানপুর, সার্থকপুর লাগোয়া এলাকার গরিব মানুষ বাড়ির জ্বালানির জন্য কয়লা নিয়ে যায় নর্থ সিহারসোল থেকে। সুকুমারবাবুরা সেটাকেই কয়লা চুরির বন চক্র বলে দাবি কার চেষ্টা করছেন। হামলা ও হুমকির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সুজিতবাবুর পাল্টা দাবি, এ দিন তাঁরা শ্রমিক সংগঠনের বৈঠক করছিলেন। বাবন সিংহেরাই তাঁদের উপরে হামলা চালায়।
ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, নানা এলাকায় কয়লা চুরি হচ্ছে বলে খবর রয়েছে। নর্থ সিহারসোল খোলামুখ খনি চালুর পরে এ পর্যন্ত কুড়িটি অভিযোগ তাঁরা দায়ের করেছেন। কেউ ধরা পড়েছে বলে তাঁদের জানা নেই। পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে।
|