তৃণমূলের সন্ত্রাসে জোনাল অফিসে আশ্রয় নেওয়া দলের তিন কর্মী-সমর্থককে পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ তুলল সিপিএম। আর এক কর্মী অফিস থেকে বাইরে বেরোলে তৃণমূলের লোকজন তুলে নিয়ে গিয়ে মারধর করে বলেও সিপিএমের দাবি। সোমবার গভীর রাতে কাঁকসার এই ঘটনায় পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মারধর বা সন্ত্রাসের অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূলও।
সিপিএমের অভিযোগ, কাঁকসা ব্লকের বিদবিহার, বাঁদরা ইত্যাদি গ্রামে তাদের বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক তৃণমূলের সন্ত্রাসে পঞ্চায়েত ভোটের আগে থেকেই গ্রামছাড়া। তাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন দলের কাঁকসা জোনাল অফিসে। সোমবার গভীর রাতে কাঁকসা থানার পুলিশ সেখানে যায়। বাঁদরা গ্রামের বাসিন্দা বিনয় বাগদি, বেলে বাগদি ও বিধান চক্রবর্তীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। সিপিএমের কাঁকসা জোনাল সদস্য পারশ তেওয়ারির অভিযোগ, “যাদের জন্য ওঁদের গ্রামছাড়া হতে হয়েছে, তারা বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে। উল্টে, পুলিশ আক্রান্তদের ধরে নিয়ে গিয়েছে। পুলিশ-তৃণমূল মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।” পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে থানায় দায়ের হওয়া অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই তিন জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। এর পিছনে রাজনৈতিক কোনও কারণ নেই।
রাতে ওই ঘটনার কিছু ক্ষণ পরে দলীয় কার্যালয়ের বাইরে বেরোলে বাপন হাজরা নামে সিপিএমের আর এক সমর্থক বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতীর হাতে আক্রান্ত হন বলে অভিযোগ। পারশবাবুর দাবি, “বাপনের মা বিদবিহার গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে প্রার্থিপদ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন। তবু ওদের আক্রোশ যায়নি।” তিনি জানান, মঙ্গলবার সকালে বাপনকে দার্জিলিং মোড়ে একটি চায়ের দোকানে নামিয়ে দিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। পারশবাবু বলেন, “তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা বাপনকে প্রচণ্ড মারধর করেছে। সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন।” অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তিনি। পুলিশ জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ওই আক্রান্ত যুবককে উদ্ধার করে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মেলা কিছু তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে। তৃণমূল অবশ্য এই সমস্ত ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলের দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চল কমিটির সভাপতি তথা জেলা পরিষদের জয়ী প্রার্থী দেবদাস বক্সীর দাবি, পুলিশ তদন্ত করছে। তা শেষ হলেই আসল ঘটনা জানা যাবে।
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় থেকেই কাঁকসায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে লাগাতার সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে আসছে সিপিএম। অভিযোগ, তৃণমূলের চাপে বহু প্রার্থি মনোনয়ন প্রত্যাহার করতেও বাধ্য হন। এমনকী সিপিএমের হয়ে প্রার্থী হওয়ার পরে তৃণমূলের সমর্থনে লিফলেট বিলি করার ঘটনাও ঘটেছে। পঞ্চায়েতের দখল নিতে শনিবার রাতে বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে পদত্যাগ করার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বনকাটির জয়ী সিপিএম প্রার্থী মৃণাল শিকদার। তৃণমূল নেতা দেবদাসবাবু অবশ্য এই অভিযোগও মানেননি। তিনি বলেন, “এমন একটা অভিযোগ শুনে আমরাই থানায় খবর দিই। পুলিশ গিয়েছিল। তৃণমূল কখনও এই ধরনের কাজ সমর্থন করে না।” |