তিন বছরের মাথায় তৃণমূলের হাতছাড়া হল খড়্গপুর পুরসভা। ক্ষমতায় ফিরল এক সময় তাদেরই জোটসঙ্গী কংগ্রেস।
দীর্ঘ এক বছর টানাপোড়েনের পর সোমবার পুরপ্রধান নির্বাচনে এক বিজেপি ও এক নির্দল কাউন্সিলরের সমর্থন নিয়ে ১৬-১৪ ভোটে তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যুত করে কংগ্রেস। বামেরা ভোটদানে বিরত ছিল। সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুরে ঘাসফুলের জয়জয়কার। সেই রেশ কাটতে না কাটতে খড়্গপুর পুরসভা শাসকদলের হাতছাড়া হল। তবে বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বলেন, “সংখ্যার বিচারে কংগ্রেস এগিয়ে। কংগ্রেস ১৬, আমরা ১৪। ওদের যদি কেউ সমর্থন দেয়, তাতে আমাদের কী বলার আছে!”
নতুন পুরপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডে। তিনি একটানা ১৫ বছর খড়্গপুরের পুরপ্রধান ছিলেন। পুরনো পদ ফিরে পেয়ে রবিশঙ্করবাবুর মন্তব্য, “দলতন্ত্রকে হারিয়ে গণতন্ত্রের জয় হল।” রবিশঙ্করবাবু যাঁকে হারালেন, তৃণমূলের সেই বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত পুরপ্রধান তুষার চৌধুরী বলেন, “ভোটে হার-জিত থাকেই। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে নতুন বোর্ডকে আমরা সব রকম সহযোগিতা করব।”
খড়্গপুর বরাবর কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি। ১৯৯৫ থেকে ২০১০, টানা ১৫ বছর রেলশহরের পুরসভা কংগ্রেসের দখলে ছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনেও খড়্গপুর থেকে জিতেছেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা জ্ঞানসিংহ সোহন পাল। ২০১০ সালে কংগ্রেসের সমর্থন নিয়েই বোর্ড গড়েছিল তৃণমূল। পুরপ্রধান হয়েছিলেন তৃণমূলের জহরলাল পাল। তবে এক বছরের মধ্যে সমর্থন প্রত্যাহার করে কংগ্রেস। তারপর ২০১২ সালের ১৪ অগস্ট তারা অনাস্থা প্রস্তাব আনে। তার প্রেক্ষিতে ভোটাভুটি নিয়েই জট তৈরি হয়। হাইকোর্টে মামলা করে কংগ্রেস। হাইকোর্ট উপপুরপ্রধান তুষার চৌধুরীকে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুরপ্রধান হিসেবে পুরসভা চালাতে বলে। গত ১৫ জুলাই হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, তিন সপ্তাহের মধ্যে খড়্গপুরে পুরপ্রধান নির্বাচন করতে হবে। সেই মতো এ দিন বোর্ড মিটিংয়ে ভোটাভুটি হয়।
২০১০ সালে নির্বাচনের সময় খড়্গপুর পুরসভার আসন সংখ্যা ছিল ৩৫। পরে তৃণমূলের এক কাউন্সিলর মারা যাওয়ায় আসন হয় ৩৪। তৃণমূলের ১৪, কংগ্রেসেরও ১৪ (দুই সিপিএম কাউন্সিলর কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার পর)। এ দিন পুরপ্রধান নির্বাচনে এক জন বিজেপি ও এক জন নির্দল কাউন্সিলরের সমর্থন পায় কংগ্রেস। তবে সিপিআইয়ের দু’জন, সিপিএমের এক জন এবং সম্প্রতি সিপিআই থেকে বহিষ্কৃত এক কাউন্সিলর ভোটাভুটিতে যোগ দেননি।
এ দিনই বিজেপি কাউন্সিলর বেলারানি অধিকারীকে ‘শো-কজ’ করেছে দল। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “কেন উনি কংগ্রেসের পক্ষে ভোট দিলেন, তা জানতে চাওয়া হয়েছে। জবাব দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে।” বেলাদেবীর বক্তব্য, “এলাকার কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” |