রেলশহরে তৃণমূল বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা কংগ্রেসের
দুর্নীতির অভিযোগ এনে আগেই সমর্থন প্রত্যাহার করেছিল। রেলশহর খড়্গপুরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে এ বার সরাসরি অনাস্থা প্রস্তাব আনলেন কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা।
মঙ্গলবার এই প্রস্তাব আনা হয়েছে। নিয়ম মতো ১৫ দিনের মধ্যে বোর্ড মিটিং ডেকে ভোটাভুটি হবে। ৩৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে মাত্র ১৫ জন তৃণমূলের। কংগ্রেসের ১৪ জন কাউন্সিলরের অনাস্থা প্রস্তাবে বাম, বিজেপি ও নির্দল কাউন্সিলরেরা সমর্থন করলে রেলশহর হাতছাড়া হতে পারে তৃণমূলের।
তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দাবি করেছেন, অধিকাংশ কাউন্সিলর তাঁদের পাশে রয়েছেন। অনাস্থা প্রস্তাব পাশ হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই নেই। খড়্গপুরের তৃণমূল পুরপ্রধান জহরলাল পাল বলেন, “শহরের মা-মাটি-মানুষ আমাদের পক্ষেই রয়েছেন। অনাস্থা প্রস্তাবে যাঁরা সই করেছেন, তাঁদের অধিকাংশও আমাদের পাশে রয়েছেন!” তাঁর তোপ, “কংগ্রেসের প্রাক্তন পুরপ্রধানই এ সব ষড়যন্ত্র করছেন। সময় এলে মানুষের কাছ থেকে যোগ্য জবাব পাবেন।” প্রাক্তন পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে এই অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেছেন, “তৃণমূলেরই অধিকাংশ কাউন্সিলরই পুরবোর্ডের কাজকর্মকে সমর্থন করছেন না। অনৈতিক কাজকর্মের প্রতিবাদ জানাতেই বোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে।”
আগে একটানা ১৫ বছর খড়্গপুর পুরসভার ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। ২০১০ সালের পুরসভা নির্বাচনে জিতে প্রথম পুরসভার ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। ওই বছর ১৮ জুন পুরবোর্ড গঠন হয়। বোর্ডের মধ্যে না-গিয়ে তৃণমূলকে বাইরে থেকে সমর্থন করে কংগ্রেস। খড়্গপুরে ৩৫টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে ২০১০ সালের নির্বাচনে ১৫টিতে জয়ী হয় তৃণমূল। কংগ্রেস ১২টি। সিপিএম ৩টি। সিপিআই ৩টি। বিজেপি ১টি। বাকি ১টি আসন থেকে জেতেন নির্দল প্রার্থী। পরে এই সমীকরণ পাল্টে গেছে। দুই সিপিএম কাউন্সিলর দলবদল করে কংগ্রেসে যোগ দেওয়ায় কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বেড়ে ১৪ হয়েছে। নির্দল কাউন্সিলর সত্যদেও শর্মাও এখন কংগ্রেসের পাশে রয়েছেন। ফলে, এই পরিস্থিতিতে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করাতে কংগ্রেসকে বেশি কাঠখড় পোড়াতে হবে না-বলেই মনে করছে স্থানীয়
রাজনৈতিক মহল।
খড়্গপুরে আবার তৃণমূলের মধ্যেও ‘কোন্দল’ রয়েছে। পুরপ্রধান জহরলাল পালের অনুগামীদের সঙ্গে ‘দ্বন্দ্ব’ রয়েছে শহর তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর অনুগামীদের। চলতি বছরের ১৮ জুন পুরবোর্ডের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে শহর যুব তৃণমূলের আয়োজিত কর্মসূচিতে এই ‘দ্বন্দ্ব’ প্রকাশ্যে আসে। দলের ১৫ জন কাউন্সিলরের মধ্যে পুরপ্রধান জহরলাল পাল-সহ মাত্র ৭ জন কাউন্সিলর হাজির হয়েছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। উপপুরপ্রধান তুষার চৌধুরী-সহ বাকি ৮ জন কাউন্সিলর আসেননি। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য দলের মধ্যে ‘মতানৈক্য’ রয়েছে বলে মানতে নারাজ। পুরপ্রধান বলেন, “ওটা পুরসভার কর্মসূচি ছিল না। উৎসাহিত হয়ে দলের যুব সংগঠন ওই কর্মসূচির আয়োজন করেছিল। দলের কাউন্সিলরদের মধ্যে মতানৈক্য নেই।”
এই সব ডামাডোলের মধ্যেই ৬ অগস্ট পুরপ্রধানকে লিখিত ‘চরমপত্র’ দিয়েছিলেন কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা। মঙ্গলবার অনাস্থা আনায় রাজ্যে দুই শরিকদল তৃণমূল ও কংগ্রেসের মধ্যে দূরত্ব আরও বাড়ল। দলের এই পদক্ষেপে কী প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের সমর্থন রয়েছে? শহর কংগ্রেস সভাপতি অমল দাস বলেন, “প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেছেন, স্থানীয় স্তরে সিদ্ধান্ত নিয়ে পদক্ষেপ করতে। সেই মতো আমরা দলীয় কাউন্সিলর ও নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
ঠিক কী কী অভিযোগের প্রেক্ষিতে এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছল কংগ্রেস? দলীয় কাউন্সিলরদের বক্তব্য, পুরসভার কাজের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নেই। টেন্ডার ছাড়া একের পর এক কাজ হচ্ছে। বিভিন্ন ফর্মের দাম বাড়ানো হয়েছে। পুরকর বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে শহরবাসীর উপর ‘বোঝা’ চাপছে। শহরে জলকষ্ট দূর করতে রাজ্য সরকার বিশেষ ফান্ডে পুরসভাকে ১ কোটি ৮৪ লক্ষ ৩ হাজার ২৯৮ টাকা দিয়েছিল। বরাদ্দ অর্থে ১৬টি গভীর নলকূপ তৈরি হয়েছে। তবে এ জন্য টেন্ডার হয়নি। কয়েক মাস আগে ৫ লক্ষ টাকার ইলেকট্রিক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। ওই সরঞ্জামে কী হল, তা কেউ জানে না।

দুই শরিকের ‘তাল’ ঠোকাঠুকি
১৮ জুন, ২০১০: একক ভাবে খড়্গপুরে পুরবোর্ড গড়ল তৃণমূল। বাইরে থেকে সমর্থন কংগ্রেসের।
২২ অগস্ট, ২০১১: সিপিএম কাউন্সিলর ভেক্টট রামন এবং বি মুরলিধর রাও দল বদলে কংগ্রেসে।
১২ ডিসেম্বর, ২০১১: পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে কংগ্রেস কাউন্সিলরদের ডেপুটেশন।
২৭ জানুয়ারি, ২০১২: বোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে সমর্থন প্রত্যাহার কংগ্রেসের।
৩১ মার্চ, ২০১২: অনাস্থা আনতে চেয়ে প্রদীপ ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করলেন দলীয় কাউন্সিলররা।
২১ জুলাই, ২০১২: জ্ঞান সিংহ সোহন পালের কাছে পদত্যাগের ইচ্ছাপ্রকাশ দলীয় কাউন্সিলরদের।
৬ অগস্ট, ২০১২: পুরপ্রধান জহরলাল পালকে লিখিত ‘চরমপত্র’ দিলেন কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা।
১৪ অগস্ট, ২০১২: তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব কংগ্রেসের।

প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা কংগ্রেস কাউন্সিলর রবিশঙ্করবাবু বলেন, “আমরা আগেই পুরপ্রধানকে সতর্ক করেছিলাম। উনি নিজের মতোই চলেছেন। এই ৬-৭ মাসেও বোর্ডের অনুমতি না-নিয়ে বেশ কিছু সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। টেন্ডার ছাড়া কাজ হচ্ছে।” আর শহর কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘‘খড়্গপুরের উন্নয়ন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। পুরসভা কাজ করছে না। আমরা বেশ কয়েকবার এ ব্যাপারে পুর-কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। পরিস্থিতি পাল্টায়নি।” অভিযোগ উড়িয়ে পুরপ্রধান বলেন, “টেন্ডার করেই কাজ হয়। আচমকা কিছু মেরামতির প্রয়োজন পড়লে তখন আগে টেন্ডার করব না, সেটা মেরামত করব?”
তাঁর বক্তব্য, “আজকের দিনে আস্থা-অনাস্থার মুখোমুখি হতেই হবে। এটা নতুন কিছু নয়। তবে অধিকাংশ কাউন্সিলর বোর্ডের পাশে রয়েছেন। আগের বোর্ড কিছু অন্যায় করছে দেখলে প্রতিবাদ করেছি। ভুল শুধরে নিতে বলেছি। এ ভাবে অস্থিরতা তৈরি করিনি।” তাঁর মন্তব্য,“ চেয়ারের প্রতি আমাদের বিন্দুমাত্র মোহ নেই। এই দু’বছরে প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে আমরা টাকা এনেছি। উনি (প্রাক্তন পুরপ্রধান) এসে লুঠতরাজ করবেন বলেই এ সব ষড়যন্ত্র করছেন।”
সব মিলিয়ে, রেলশহরের পুরবোর্ডের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে জল্পনা চলছেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.